নতুন বাজেটের এক কর প্রস্তাবের কারণে এবার রেস্তোরাঁমালিকদের মাথায় হাত পড়তে যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লার অলিগলির ছোট-বড় সব রেস্তোরাঁমালিকদের এখন থেকে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে।
আবার সেই টিআইএনের বিপরীতে বছর শেষে আয়-ব্যয়ের যাবতীয় তথ্য জানিয়ে কর বিভাগে রিটার্ন জমা দিতে হবে। রিটার্ন জমা না দিলে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে পারবেন না এই ব্যবসায়ীরা।
রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে তাঁদের ব্যবসার লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না, নতুন বাজেটে এমন ঘোষণা এসেছে। এর মানে হলো, রেস্তোরাঁর লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নকালে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের রিটার্ন জমার অনুলিপি লাগবে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রেস্তোরাঁমালিকদের লাইসেন্স নেওয়া বা নবায়ন করতে হয়।
কোন ধরনের রেস্তোরাঁমালিকদের জন্য এই বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে যেহেতু রেস্তোরাঁর লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়ন করতে মালিকদের রিটার্ন জমা দিতে হবে, সে কারণে তাঁরা করের আওতায় আসবেন।
আয়কর আইনে রেস্তোরাঁর বিশেষ কোনো সংজ্ঞা উল্লেখ করা নেই। তবে ভ্যাট আরোপের ক্ষেত্রে রেস্তোরাঁর সংজ্ঞা আছে। বলা হয়েছে, অস্থায়ী রেস্তোরাঁ ছাড়া সব ধরনের রেস্তোরাঁয় মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বসবে।
অস্থায়ী রেস্তোরাঁ বলতে বোঝায়, বেষ্টনী ও বৈদ্যুতিক পাখা নেই, তবে শুধু দুটি বাতি আছে-এ ধরনের সুবিধাসংবলিত রেস্তোরাঁ। এমন রেস্তোরাঁর খাবারের বিলের ওপর কোনো ভ্যাট নেই। ভ্যাট আইনে রেস্তোরাঁর সংজ্ঞায় এসব কথা বলা হয়েছে। ফুটপাতে বসানো ‘ভাতের দোকানে’ সাধারণত বেষ্টনী ও পাখা থাকে না। এসব দোকানে খাওয়াদাওয়া করলে ভ্যাট দিতে হবে না। অর্থাৎ এমন ধরনের রেস্তোরাঁ ছাড়া বাকি সব ধরনের রেস্তোরাঁয় বিক্রির ওপর ভ্যাট দিতে হয়।
বড় শহর ছাড়াও উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়েও এখন রেস্তোরাঁ ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি গ্রামগঞ্জের বাজারে গেলেও দুই-চারটি রেস্তোরাঁ খুঁজে পাওয়া যায়। পাড়া-মহল্লায় ‘১০ ফুট বাই ১০ ফুট’ আয়তনের রেস্তোরাঁও আছে। এক টেবিল, দুই টেবিলের রেস্তোরাঁও আছে। এসব রোস্তোরাঁমালিকদেরই এখন রিটার্ন জমা দিতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন বলেন, ছোট রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের ওপর কর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে তাঁদের অসুবিধা হবে। অনেক রেস্তোরাঁমালিক খরচ বাঁচাতে নিজেই ‘বয়-বেয়ারা’র কাজ করেন। তাঁদের রিটার্ন জমা দিতে বাধ্য করা জুলুমের পর্যায়ে পড়ে।
এনবিআরের কর কর্মকর্তারা বলেন, দেশে প্রতিদিনই নতুন নতুন রেস্তোরাঁ বা ফাস্ট ফুডের দোকান হচ্ছে। মূলত তাদের লক্ষ্য করেই এই বিধান করা হয়েছে।
দেশে কত রেস্তোরাঁ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২১ সালে দেশের রেস্তোরাঁ খাত নিয়ে একটি জরিপ করে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান জানতে জরিপটি করা হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে হোটেল ও রেস্তোরাঁর মোট সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। এসব রেস্তোরাঁর প্রায় শতভাগই ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন।
দেখা গেছে, বিনিয়োগ বাড়ায় এ সময়ের মধ্যে রেস্তোরাঁয় কর্মসংস্থানও দ্বিগুণ হয়েছে। বিবিএস জরিপের সময়ে রেস্তোরাঁ খাতে সম্পৃক্ত ছিল ২০ লাখ ৭২ হাজার মানুষ। এক দশক আগে সংখ্যাটি ছিল ৯ লাখের মতো। শুধু পুরুষ নন, রেস্তোরাঁগুলোতে এক লাখের বেশি নারীও কাজ করেন। কর্মীরা রেস্তোরাঁগুলো থেকে বেতন, মজুরি ও অন্যান্য ভাতা হিসাবে বছরে ৩১ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা পান। একেকজন কর্মী বছরে গড়ে পান ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
রেস্তোরাঁগুলো বছরে কত টাকার কেনাবেচা করে, তার হিসাবও উঠে আসে বিবিএসের ওই জরিপে। দেখা যায়, এর পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা (গ্রস আউটপুট), যা এক দশক আগের তুলনায় তিন গুণের বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেস্তোরাঁগুলো জিডিপিতে প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা মূল্য সংযোজন করে।