Connect with us
<

আবাসন ক্যারিয়ার

ফরেস্ট সিটি: মালয়েশিয়ায় চীনাদের তৈরি এক ‘ভূতুড়ে শহর’

রাতে ফরেস্ট সিটি অন্ধকারের চাদরে ঢেকে যায়। শহরের প্রত্যেক ব্লকে শত শত অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, কিন্তু আধা ডজনের চেয়ে বেশি অ্যাপার্টমেন্টে বাতি জ্বলতে দেখা যায় না। এখানে যে মানুষ বাস করে, সেটি বিশ্বাস করাই কঠিন। ফরেস্ট সিটির নির্মাতা কোম্পানি কান্ট্রি গার্ডেনের ঋণ বর্তমানে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে, তারপরও প্রকল্পটি শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী এটি।

“আমি সেখান থেকে পালাতে পেরেছিলাম,” ভয়-মিশ্রিত হাসিতে বললেন নাজমি হানাফিয়াহ।

এক বছর আগে তথ্য-প্রযুক্তি প্রকৌশলী নাজমি ‘ফরেস্ট সিটি’র এক ব্লকে এক বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। তার বেডরুম থেকে সাগরও দেখা যায়। চীনারা দক্ষিণ মালয়েশিয়ার উপকণ্ঠে অবস্থিত জোহরে ফরেস্ট সিটি নামের এ আবাসিক এলাকাটি নির্মাণ করে।

ছয় মাসেই নাজমি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তিনি আর এ শহরে থাকতে চাননি। এমনকি তিনি এ শহরকে ‘ভূতুড়ে শহর’ আখ্যা দেন।

তিনি বলেন, “আমি আমার ডিপোজিট নিয়ে ভাবিনি, অর্থ নিয়ে ভাবিনি। আমি শুধু চেয়েছিলাম সেখান থেকে চলে আসতে।”

Advertisement

তিনি বলেন, “সেখানে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবলে আমি এখনো আঁতকে উঠি। শহরটির চারদিক একেবারে নির্জন। সেখানে শুধু আমি আর আমার চিন্তা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।”

২০১৬ সালে চীনের সর্ববৃহৎ প্রোপার্টি ডেভেলপার ‘কান্ট্রি গার্ডেন’ শহরটি উদ্বোধন করে। এটি ছিল চীনের রোড এন্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভের অধীনে একটি মেগা প্রকল্প।

এই সময় চীনের রিয়াল এস্টেট খাতের প্রবৃদ্ধি ঘটছিল পুরোদমে। প্রকল্পটির জন্য নির্মাতারা দেশ-বিদেশ থেকে ব্যাপক পরিমাণ অর্থ ঋণ নেন। তারা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য শহরটি নির্মাণ করেন।

কান্ট্রি গার্ডেনের পরিকল্পনা ছিল একটি পরিবেশ-বান্ধব শহর গড়ে তোলা, যেখানে থাকবে গল্ফ কোর্স, ওয়াটার পার্ক, অফিস, বার এবং রেস্টুরেন্ট। কোম্পানিটি বলেছিল, শহরটিতে দশ লক্ষ মানুষ বাস করতে পারবেন।

আট বছর চলে গেছে। কিন্তু এটি একটি ব্যর্থতার স্মারক হিসেবেই রয়ে গেছে। চীনের প্রোপার্টি সংকট বুঝতে আপনাকে চীনে থাকার দরকার নেই। ফরেস্ট সিটি প্রকল্পের বর্তমানে ১৫ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু মাত্র এক শতাংশের কিছু বেশি অংশে মানুষ বাস করছেন।

Advertisement

যদিও বর্তমানে কান্ট্রি গার্ডেনের ঋণ ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে, তারপরও প্রকল্পটি শেষ করার ব্যাপারে কোম্পানিটি আশাবাদী।

ফরেস্ট সিটি’র মলের বেশিরভাগ দোকান ও রেস্তোরাঁ বন্ধ। ছবি: গেটি ইমেজেস ভিয়া বিবিসি

‘গা ছমছমে’
ফরেস্ট সিটিকে ‘সকল মানবজাতির জন্য ড্রিম প্যারাডাইজ’ হিসেবে উল্লেখ করা হতো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নির্মাতাদের লক্ষ্য ছিল এখানে চীনা স্থানীয় পণ্যের বাজার তৈরি করা। এর মাধ্যমে তারা মূলত উচ্চাভিলাষী মানুষদের বিদেশে দ্বিতীয় একটি বাড়ির মালিক হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এর বিক্রয়মূল্য এত বেশি যে, মালয়েশিয়ার সাধারণ মানুষের জন্য তা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

চীনা ক্রেতাদের কাছে এখানে জায়গা কেনা বিনিয়োগ হিসেবেই গণ্য হয়। কারণ নাজমির মতো স্থানীয় মালয়েশিয়ানদের কাছে তারা তা ভাড়া দিতে পারবেন।

ফরেস্ট সিটি নির্মাণ করা হয়েছে একটি দ্বীপে। এর কাছাকাছি বড় শহর জোহর বাহরু ফরেস্ট সিটি থেকে বেশ দূরে। ফলে এর অবস্থান লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে শহরটি সম্ভাব্য বাসিন্দাদেরও আর আকর্ষণ করতে পারছে না। এজন্য স্থানীয় মানুষ শহরটিকে এখন ‘ভূতুড়ে শহর’ নামে ডাকে।

নাজমি বলেন, “সত্যিকার অর্থে স্থানটি ছিল আতঙ্কজনক। আমার অনেক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু আমি খারাপ অভিজ্ঞাতার মুখোমুখি হই। সেখানে আমার কিছুই করার ছিল না।”

ফরেস্ট সিটির পরিবেশ খুবই অদ্ভূতুড়ে—দেখে মনে হয় একটি পরিত্যক্ত রিসোর্ট। জন-মানবহীন এখানকার সৈকত হয়ে উঠেছে যত্নহীন শিশুর খেলার মাঠ, পড়ে আছে মরিচা-পড়া গাড়ি। কুমিরের ভয়ে এখানকার পানিতে সাঁতার কাটাও যায় না।

Advertisement

ফরেস্ট সিটি’র মলের বেশিরভাগ দোকান ও রেস্তোরাঁ বন্ধ। ছবি: গেটি ইমেজেস ভিয়া বিবিসি
শপিংমলগুলোতে দোকানপাট বা রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ। কিছু নির্মাণ এলাকা একদম খালি।

রাতে ফরেস্ট সিটি অন্ধকারের চাদরে ঢেকে যায়। শহরের প্রত্যেক ব্লকে শত শত অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, কিন্তু আধা ডজনের চেয়ে বেশি অ্যাপার্টমেন্টে বাতি জ্বলতে দেখা যায় না। এখানে যে মানুষ বাস করে, সেটি বিশ্বাস করাই কঠিন।

জোয়ান কাউর বলেন, “স্থানটি ভূতুড়ে। এমনকি দিনে যখন সদর দরজার বাইরে আসি, দেখি, করিডোর অন্ধকার।”

তিনি আর তার স্বামী একটি টাওয়ার ব্লকের আটাশ তলায় থাকেন। কিন্তু পুরো ফ্লোরে তারা ছাড়া আর কেউ নেই। তারাও নাজমির মতো ভাড়াটে এবং যত দ্রুত সম্ভব স্থানটি ত্যাগ করার কথা ‍ভাবছেন।

“যারা এখানে জায়গা কিনেছে ও বিনিয়োগ করেছে, তাদের জন্য আমার দুঃখ হয়। আপনি যদি ‘ফরেস্ট সিটি’ লিখে গুগল করেন, তবে এখন যা দেখছেন, সেখানে তেমন পাবেন না”, তিনি বলেন।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, “মানুষকে যেমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, প্রকল্পটি তেমনই হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু তেমনটা হয়নি।”

চীনের যেসব লোকজন এখানে জায়গা কিনেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলা খুব সহজ নয়। তারপরও বিবিসি বেশ কয়েকজনের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা এমনকি অজ্ঞাত নামেও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কিছু পোস্টে ফরেস্ট সিটি সম্পর্কে কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। লিয়াওনিং প্রদেশের এক ক্রেতা এক পোস্টে লিখেছেন, “এটি বিভ্রান্তিকর। ফরেস্ট সিটি বর্তমানে ভূতুড়ে টাউন। মোটের ওপর এখানে কোনো মানুষ নেই। এটি শহর থেকে অনেক দূরে, বসবাস করার মতো সকল সুযোগ-সুবিধা এখানে নেই। এখানে গাড়ি ছাড়া চলাচল করা খুবই কঠিন।”

বিক্রি নেই বললেই চলে
এ ধরনের হতাশা পুরো চীনে বিরাজ করছে, দেশটিতে প্রোপার্টি মার্কেটে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খল অবস্থা।

ডেভেলপাররা অধিক হারে ঋণগ্রহণ করায় চীন সরকার ভীত হয়ে পড়ে। অবশেষে সরকার ২০২১ সালে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিং পিংয়ের মূলমন্ত্র হলো, “বাড়ি বসবাসের জন্য, ফটকাবাজির জন্য নয়।”

Advertisement

সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে অনেক কোম্পানি অর্থের অভাবে বড় বড় প্রকল্প শেষ করতে পারছে না।

অক্টোবরে কান্ট্রি গার্ডেনকে অস্ট্রেলিয়ায় দুটি প্রকল্প ছেড়ে আসতে বাধ্য করা হয়। তারা অসমাপ্ত এ প্রকল্প দুটি বিক্রি করে দেয়, যার একটি সিডনিতে ও অন্যটি মেলবোর্নে অবস্থিত।

স্থানীয় রাজনীতিও ফরেস্ট সিটির বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ চীনা ক্রেতাদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেন। দেশের মাটিতে বিদেশিদের জন্য শহর বানানোয় তার আপত্তি ছিল।

যে দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল, সে দেশে এ ধরনের মেগা প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করায় উদ্যোক্তাদের প্রজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কিছু বিশ্লেষক। মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকার ফরেস্ট সিটি প্রকল্পের প্রতি সহায়ক হলেও, একজন ভবিষ্যৎ ক্রেতার কাছে এটি অস্পষ্ট যে, সরকার এই সুবিধা কতদিন ও কী পরিসরে দেবে।

এছাড়া করোনা অতিমারীতে চলাচল ও বিদেশে অর্থ ব্যয়ের ওপর চীন সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপের মতো কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যাও কান্ট্রি গার্ডেনের এ প্রকল্পের অগ্রগতিতে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

Advertisement

“আমার মনে হয়, তারা প্রকল্পের বিষয়ে একটু তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে”, বলেন কেজিবি ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি কনসালট্যান্টসের তান উই তিয়াম। তিনি বলেন, “এটির মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতে অবশ্যই অর্থের যোগানের বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।”

চীনের প্রোপার্টি মার্কেটে বর্তমান পরিস্থিতিকে কান্ট্রি গার্ডেন নিছক নয়েজ বা বিশৃঙ্খলা হিসেবে দেখছে। তারা মনে করে, মালেয়েশিয়ায় তাদের গৃহীত প্রকল্পই তাদের ব্যবসাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

ফরেস্ট সিটিকে মালয়েশিয়া ও প্রতিবেশী সিঙ্গাপুরের মাঝে নতুন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলাই এখন কান্ট্রি গার্ডেনের পরিকল্পনা, যা প্রকল্পটিকে স্থিতিশীল ও নিরাপদ করে তুলবে।

কিন্তু অর্থের যোগান না থাকায় প্রকল্পটি শেষ করা ও এখানে বসবাসের জন্য মানুষকে আকর্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ সময় চীনা কোম্পানি কর্তৃক নির্মিত প্রোপার্টি বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আরইডিডি ইন্টেলিজেন্স, এশিয়া-এর ইভেলিন দনুব্রতের মতে, “এটি ডিম আগে নাকি মুরগি আগের মতো অবস্থা।” তিনি বলেন, “একজন ডেভেলপার তার নির্মাণ কাজে অর্থায়নের জন্য অগ্রিম-বিক্রয়ের উপর নির্ভর করে। কিন্তু ক্রেতারা নির্মাতাকে অগ্রিম অর্থ দেবে না, যদি তারা শেষ পর্যন্ত অ্যাপার্টমেন্টের চাবি হাতে পাওয়ার নিশ্চয়তা না পায়।”

Advertisement

উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতা
যখন চীনের প্রোপার্টি সংকটের বিষয়টি সামনে আসে, তখন প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির একটি ক্লাসিক ঘটনা হিসেবে ‘ফরেস্ট সিটি’ নিয়ে কথা বলা যায়। কিছু স্থানীয় বিষয় বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কিছুটা দায়ী হলেও এটি প্রমাণিত যে, দূরবর্তী ও নিরস জায়গায় হাজার হাজার অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করে মানুষকে সেখানে বসবাসের জন্য আকর্ষণ করা সম্ভব নয়।

ফরেস্ট সিটি ও চীনের শত শত প্রকল্পের ভাগ্যে কী ঘটবে, তা নির্ভর করছে চীন সরকারের ওপর। গত মাসে প্রকাশিত বেশ কিছু ‍প্রতিবেদনে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তাতে দেখা যায়, ডেভেলপার নিয়ে করা সরকারের প্রাথমিক তালিকায় স্থান পেয়েছে কান্ট্রি গার্ডেন, যারা চীন সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেতে পারে, যদিও এ সহায়তার পরিমাণ কী হবে, তা স্পষ্ট নয়।

তারপরও এখানে নাজমির মতো লোকেদের ফেরার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, “এরপর আমি অনেক সতর্কতার সাথে সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু আমি খুশি যে, আমি স্থানটি ত্যাগ করতে পেরেছি। আমি আমার জীবন ফিরে পেয়েছি।”

Continue Reading
Advertisement

আবাসন ক্যারিয়ার

সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার হতে চান, তাহলে জানতে হবে যে বিষয়গুলো

Published

on

By

আবাসন কনটেন্ট কাউন্সিলর
সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার হতে চান, তাহলে জানতে হবে যে বিষয়গুলো

সিরামিক টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার-এ তিনটি শিল্পকে একত্রে সিরামিক খাত বলা হয়। এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত আছেন কয়েক লাখ মানুষ। প্রতিবছর এ শিল্পের প্রসারে বাড়ছে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ। চাইলে আপনিও একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

কাজের ক্ষেত্র ও ধরন
সিরামিক কাজের চাহিদা ও ক্ষেত্র অনেক বড়। একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে এ খাতে। উৎপাদননির্ভর শিল্প হিসেবে কারখানা পরিচালনার জন্য প্রকৌশলী, ব্যবস্থাপক, সিরামিস্ট, কেমিস্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, আইটি খাতের কাজ জানেন- এমন লোকদের কাজের সুযোগ আছে।

অবশ্য পণ্যের নকশা, কালার ম্যাচিং, গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা দেখাই হচ্ছে সিরামিক প্রকৌশলীর মূল কাজ। এ ছাড়া একজন সিরামিক প্রকৌশলী তার সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে নিত্যনতুন সিরামিক পণ্যের ধারণা দিয়ে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করতে পারেন।

ভালো করতে হলে
কাজটি যেহেতু সৃজনশীল, তাই এ কাজে মেধা ও মননের সঠিক ব্যবহার খুবই জরুরি। নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসতে পারলে এ পেশায় দ্রুত খুব ভালো অবস্থান অর্জন করা সম্ভব।

প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
এক সময় কোম্পানিগুলোতে সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার পদের জন্য সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি চাওয়া হতো। বর্তমানে সাধারণত বিএসসি বা এমএসসি ডিগ্রি চাওয়া হয়। আবার কোনো কোনো সিরামিকস কোম্পানি অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (কোয়ালিটি কন্ট্রোল) পদের জন্য সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং/টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা ও বিএসসি উভয় ডিগ্রিধারীদের আবেদনের সুযোগ দেয়।

Advertisement

অনেক সময় ডিগ্রির পাশাপাশি সিরামিক টেকনোলজির বিভিন্ন দিকের ওপর শর্ট কোর্স চাওয়া হয়। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে কাস্টিং সুপারভাইজার পদে আবেদনের জন্য ব্যাচেলর ডিগ্রির পাশাপাশি সিরামিক কাস্টারের ওপর ভোকেশনাল ট্রেনিং থাকা জরুরি।

এ ছাড়া একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের যে ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়- সিরামিকজাতীয় পণ্যের খুঁটিনাটি জ্ঞান; সর্বোচ্চ উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা; সোলার সেল, ইনসুলেটর আর সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে ভালো ধারণা; কম্পিউটার এইডেড ডিজাইনে (CAD) দক্ষতা; ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা; কোয়ালিটি কন্ট্রোল ও সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ধারণা।

অপরদিকে নন-টেকনিক্যাল জ্ঞানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সৃজনশীল উপায়ে ও যৌক্তিকভাবে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা; বিশ্লেষণী ক্ষমতা- যা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণে সাহায্য করতে পারে; অন্যদের সঙ্গে কাজ করার মানসিকতা থাকা; বিভিন্ন ধরনের কাজ একসঙ্গে সামলানোর দক্ষতা ও কারখানায় কাজ করার মানসিকতা থাকা।

পড়াশোনার সুযোগ
দেশে সিরামিক নিয়ে পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকসে চার বছর মেয়াদি সিরামিক টেকনোলজি ডিপ্লোমা কোর্স এবং দুই বছর মেয়াদি ট্রেড কোর্স চালু আছে। চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স আটটি সেমিস্টারে বিভক্ত। এ কোর্সে আসন সংখ্যা ৮০।

দুই বছরের সিরামিক ট্রেড কোর্সে ছয় সপ্তাহ বরাদ্দ রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিংয়ের জন্য। এসএসসি (ভোকেশনাল) সিরামিক ট্রেডে আসন সংখ্যা ৩০। এ বিষয়ে দেশে মাস্টার্স করার সুযোগ রয়েছে একমাত্র বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। এ ছাড়া সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে এ বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি দেওয়া হয়। প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যেই সাধারণ ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

Advertisement

ক্যারিয়ার
প্রথমে এন্ট্রি লেভেলে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করলেও দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে ধীরে ধীরে ডেপুটি ইঞ্জিনিয়ার, চিফ ইঞ্জিনিয়ার বা প্রোডাকশন হেড হওয়া সম্ভব। ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে মার্কেটিং আর বিজনেস সেক্টরে দক্ষতা থাকলে কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বা সিইও হওয়াও সম্ভব। দেশের বাইরেও রয়েছে এ খাতে কাজ করার প্রচুর সুযোগ। এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়লে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্তে থাকা যায়।

আয়
সৃজনশীল এ পেশায় পড়াশোনা চলাকালেও চাকরি করে আয়ের সুযোগ থাকে। সদ্য পাশ করা ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক আয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে। আর কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে মাসিক বেতন ৬০-৭০ হাজার হয়।

অবশ্য পুরোটাই নির্ভর করে একজনের কাজের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার ওপর। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়ার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের বেতন-ভাতা, আবাসনসহ অন্যান্য সুবিধা বহন করে।

Continue Reading

আবাসন ক্যারিয়ার

সেরা ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের খুঁজে বের করতে হচ্ছে বিশেষ প্রতিযোগিতা

Published

on

By

আবাসন কনটেন্ট কাউন্সিলর

ঘরের সাজসজ্জা বা ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের নিয়ে আগামী নভেম্বরে ‘আইডেব এক্সিলেন্স ইন ইন্টেরিয়র ডিজাইন ২০২৪’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

দেশের যেকোনো ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান-নির্বিশেষে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন।

বিশেষ এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইডেব)।

এ উপলক্ষে শনিবার রাজ ধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে সংগঠনটি।

সেরা ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের খুঁজে বের করতে হচ্ছে বিশেষ প্রতিযোগিতা

ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এক্সিলেন্স ইন ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিযোগিতাটি এখন থেকে প্রতিবছর চলমান থাকবে। এ প্রতিযোগিতার বিষয়ে আইডেব অ্যাওয়ার্ড ডটকম ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত জানা যাবে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে আইডেব অ্যাওয়ার্ড ডটকম ওয়েবসাইট থেকে ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে। এ জন্য কোনো ফি লাগবে না।

প্রতিযোগিতায় প্রকল্প জমা দেওয়ার বিষয়ে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন প্রকল্পে কোনো ধরনের ওয়াটারমার্ক বা লোগো থাকা যাবে না। নকশার প্রভাব, সৃজনশীলতা থেকে শুরু করে দেশীয় ঐতিহ্যকে লালন, পরিবেশগত মূল্যবোধ ও রং-এর গুণগত ব্যবহারকে বিচারিক মানদণ্ড হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মোট ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের পুরস্কার দেওয়া হবে।

Advertisement
সেরা ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের খুঁজে বের করতে হচ্ছে বিশেষ প্রতিযোগিতা

ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিযোগিতার নানা দিক তুলে ধরেন আইডেবের আহ্বায়ক শফিউল ইসলাম ও সদস্যসচিব সৈয়দ কামরুল আহসান। তাঁরা জানান, বাংলাদেশের ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের সংগঠন আইডেব ২০১৯ থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের কার্যক্রমকে তুলে ধরতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। সেই ধারাবাহিকতায় এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

আইডেব আহ্বায়ক শফিউল ইসলাম বলেন, ১৯৮০ সালের পর থেকে দেশে এই পেশা এলোমেলোভাবে একটু একটু করে এগিয়েছে। বর্তমানে দেশে ২৫ লাখ মানুষ এই পেশার সঙ্গে জড়িত। প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার কাজ হচ্ছে এই খাতে। বাংলাদেশের বহু ডিজাইনার বর্তমানে আন্তর্জাতিক ডিজাইনারদের সঙ্গে তুলনীয় একই মানের কাজ করে যাচ্ছেন। তবে তাঁদের কাজের তেমন স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। তাই এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা দেশের সেরা ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের সামনে তুলে আনতে চাই।

শফিউল ইসলাম বলেন, ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের কাজের স্বীকৃতি নিশ্চিত করা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও সমাজে তাঁদের সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কল করা যাবে +880 1725-151515 এই মোবাইল নম্বরে। এ প্রতিযোগিতার বিষয়ে আইডেব অ্যাওয়ার্ড ডটকম ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজ থেকে বিস্তারিত জানা যাবে।

 

Advertisement
Continue Reading
Advertisement
Advertisement
আবাসন সংবাদ3 weeks ago

রিহ্যাবের আধুনিক ভবন নির্মাণে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওনাল অফিসে রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান হাজী দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সিডিএ কর্তৃক প্রস্তাবিত মাস্টারপ্ল্যান...

নির্বাচিত প্রতিবেদন4 weeks ago

আবাসন খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে

দেশের আবাসন খাতের অবস্থা বিভিন্ন কারণে কিছুটা নাজুক। এ খাতের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির জন্য যে পরিবেশ দরকার, তা অনুপস্থিত। এর ওপর...

অর্থ ও বাণিজ্য4 weeks ago

ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মুনাফা বেড়েছে ২১ কোটি টাকা

দেশের আবাসন খাতের কোম্পানি ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মুনাফা সাড়ে ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি গত জুনে সমাপ্ত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ৭৭...

আবাসন সংবাদ4 weeks ago

আবাসন পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও হিসাবরক্ষক সাময়িক বরখাস্ত

চাকুরির গ্রেড ও বেসিক বেতন বিবেচনায় না নিয়ে সরকারি বাসা বরাদ্দের সুপারিশ, ডি-১ ও ডি-২ শ্রেণির বাসা বরাদ্দের ক্ষেত্রে মোটা...

আইন-কানুন1 month ago

একই জমি দুইজনের কাছে বিক্রি: কে হবেন প্রকৃত মালিক?

একটি জমি যদি ভিন্ন সময়ে দুইজন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়, তাহলে প্রকৃত মালিক কে হবেন? এ বিষয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া...

Advertisement

সর্বাধিক পঠিত