ভাড়া বাড়ির নিয়ম-কানুন প্রায়ই হাজারো ঝামেলা ও দ্বিধার জন্ম দেয়। অনেক ক্ষেত্রেই ভাড়াটিয়ারা অন্যায্য ভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এছাড়া বাড়িওয়ালারা প্রতি বছরই ইচ্ছেমত ভাড়া বাড়ানোয় স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়ে। এ সমস্যাগুলো থেকে রেহাই পেতে জানতে হবে বাংলাদেশে প্রচলিত বাড়ি ভাড়ার চুক্তি ও নিয়ম-নীতি গুলো আসলে কী কী। প্রায় সব এলাকায়ই এসব নিয়ম-নীতিগুলো একই রকম তবে অল্প কিছু এলাকায় ব্যতিক্রমী নিয়ম প্রচলিত। বিপ্রপার্টির আইনি বিভাগের বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে সার্বক্ষবণিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে।
বাড়ি ভাড়ার চুক্তিতে শর্তাবলি
বাড়ি ভাড়ার চুক্তি করার সময় প্রতিটি বিধি-উপবিধি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেটা জেনে নিতে হবে। বাংলাদেশে বাড়ি ভাড়ার চুক্তিগুলো সাধারণত এই বিধি-উপবিধি যাচাই করে তৈরি করা হয়। বাড়ি ভাড়ার চুক্তি ও নিয়ম-নীতি গুলো একেক বাড়িওয়ালা একেকভাবে করে থাকেন। আবার, বিভিন্ন সোসাইটির মিউনিসিপাল কর্পোরেশনগুলোর বিভিন্ন অধ্যাদেশ অনুযায়ীও এই চুক্তিগুলো করা হয়ে থাকে। নিচে বাড়ি ভাড়ার চুক্তি ও নিয়ম-নীতি এর সবচেয়ে সাধারণ কিছু শর্তাবলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো (পারস্পরিক সমন্বয় অথবা তৃতীয় পক্ষের সালিসের মাধ্যমে কিছু পরিবর্তন সাপেক্ষে:
বাড়ি ভাড়া
বাড়ি ভাড়া দু’প্রকারের হতে পারে। এতে পানি, কমন/সাধারণ বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বিলের মতো সার্ভিস চার্জ থাকতে পারে। এবং নিরাপত্তা, লিফট, গ্যারেজ ও জেনারেটর রক্ষণাবেক্ষণ বিলের মতো পরিষেবা বিলও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। বাংলাদেশ কর আইনের অন্তর্ভুক্ত প্রযোজ্য শুল্ক প্রদানে বাড়িওয়ালার দায়বদ্ধ থাকবেন।
ইনক্রিমেন্ট ক্লজ
ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালারা পারস্পরিক সমঝোতার মধ্যে দিয়ে কমপক্ষে এক বছর পরে শতাংশের হিসেবে ভাড়া বৃদ্ধির চুক্তি করতে পারেন। আইন অনুযায়ী, প্রতি ৩ বছর পর পর বাড়িওয়ালা সর্বোচ্চ ১৫% পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া বাড়াতে পারে। চুক্তির বরখেলাপ, যেমন এর বেশি ভাড়া বাড়ানো কিংবা প্রতি মাসে/এক বছরের আগে ভাড়া বাড়াতে চাওয়া আইনত অপরাধ।
অগ্রিম সুরক্ষা জামানত
ভাড়াটিয়াদের অবশ্যই কমপক্ষে এক মাসের সুরক্ষা জামানত দিতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই দুই মাসের বেশি অগ্রিম জামানত দেয়া যাবে না। আইন অনুসারে, ভাড়াটিয়ারা বাসা ছাড়ার সময় বাড়িওয়ালা এই অগ্রিম আমানতের পুরো টাকাই ফেরত দিবেন।
ভাড়া পরিশোধের পদ্ধতি
ভাড়াটিয়াদের অবশ্যই প্রতি মাসের সাত তারিখের মধ্যে ভাড়া দিতে হবে। ভাড়া পাওয়ার পরে বাড়িওয়ালাদের অবশ্যই প্রমাণ হিসেবে একটি মানি রিসিট/রশিদ প্রদান করতে হবে।
সার্ভিস চার্জ
সব ধরণের সার্ভিস এবং অনান্য সেবা সংক্রান্ত বিল বহন করতে বাড়িওয়ালারা দায়বদ্ধ।
নানা ধরণের ইউটিলিটি বিল
ভাড়াটিয়ারা শুধু তাদের নিজেদের ফ্ল্যাটের মাসিক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবেন। তারা শুধু নিজেদের ফ্ল্যাটের সাথে সংযুক্ত মিটারের বিল বহন করতে দায়বদ্ধ। বাংলাদেশের বাড়ি ভাড়ার চুক্তি এবং নিয়ম-নীতির মধ্যে সাধারণত ইন্টারনেট এবং টিভির জন্য ক্যাবল অপারেটর বিল দেয়াও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
বাড়ি ভাড়া চুক্তির মেয়াদ, মেয়াদোত্তীর্ণতা এবং চুক্তি ভঙ্গের নিয়মাবলি
চুক্তিটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে নিজে থেকেই রিনিউ হবে। ভাড়াটিয়া যদি আরো ভাড়া বাসায় আরো বেশি থাকতে চান তাহলে অবশ্যই দুই মাস আগে তাদেরকে নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হবে। যদি তারা চুক্তি ভেঙ্গে দিতে চায় তবে তাদের অবশ্যই কমপক্ষে এক মাস আগে বাড়িওয়ালাকে জানাতে হবে/নোটিস দিতে হবে। বাড়িওয়ালাদেরও ক্ষয়ক্ষতির মূল্য পরিশোধের পরে অগ্রিম জামানত ফেরত দিতে হবে।
সাবলেট বা ভাড়া বাড়ির হস্তান্তর
বাংলাদেশের বাড়ি ভাড়ার চুক্তি ও নিয়ম-নীতি গুলো সাধারণত অন্য কাউকে ভাড়া দেয়া কিংবা ব্যবসায়িক স্বার্থে সাবলেট রাখার অনুমতি দেয় না। তবে কিছু বাড়িওয়ালা আবাসিক উদ্দেশ্যে সাবলেট রাখার অনুমতি দিয়ে থাকেন।
চুক্তি সংশোধন এবং বিরোধ নিষ্পত্তি
চুক্তি সংশোধনের প্রয়োজনে পরিবর্তন আনা বৈধ। তবে একটি অনুমোদন করার জন্য একটি তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন। তৃতীয় পক্ষের যে-ই থাকবেন, তাকে অনুমোদিত প্রতিনিধি হতে হবে। ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালা দুজনেই তাদের অনুমোদিত তৃতীয় পক্ষসহ চুক্তির সব পরির্বতনে সাক্ষর করে চুক্তি সংশোধনের অনুমোদন করবেন। ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালার মধ্যে কোনো বিরোধ কিংবা কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট থাকলে বিরোধের নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব অনুমোদিত তৃতীয় পক্ষের।
ভাড়াটিয়াদের দায়িত্বসমূহ
বিভিন্ন বাড়িওয়ালার সম্ভাব্য ভাড়াটিয়াদের ক্ষেত্রে নিজস্ব পছন্দ থাকে। এরপরেও ভাড়াটিয়াদের উপর ভাড়া বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের কিছু দায়িত্ব থাকে। এই দায়িত্বগুলোও বাড়ি ভাড়ার চুক্তি ও নিয়ম-নীতি এর অন্তর্ভুক্ত।
ফোর্স/বাধ্যতামূলক ম্যাজিউরস
ভাড়া দেয়া বাড়ি নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে, যেমন আগুন কিংবা অনান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। এই ধরণের দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার দায় ভাড়াটিয়া কিংবা বাড়িওয়ালার নয়। তাই এসব ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াদের ভাড়া না দিয়েই তাৎক্ষণিক চুক্তি ভেঙ্গে দেয়ার সব অধিকার আছে।
বিভিন্ন এলাকার এবং পৌরসভার বিভিন্ন ধরণের অধ্যাদেশের কারণে বাংলাদেশে বাড়ি ভাড়ার চুক্তি ও নিয়ম-নীতি গুলো বেশ জটিল। এগুলো বুঝে নিলে আপনি ফাঁদে পড়া থেকে বিরত থাকতে পারবেন। পছন্দের এলাকায় প্রিয় বাড়িটি খুঁজে নিতে পারবেন সহজেই।