সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) কাঙ্ক্ষিত হারে বাস্তবায়িত হয়নি। এ জন্য ছয়টি কারণ জানিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কারণ তুলে ধরেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মতে, এডিপি বাস্তবায়ন যেসব কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে: ১. মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলায় জটিলতা তৈরি হয়। ফলে সরবরাহকারীরা যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ করতে পারেননি। ২. জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা। ৩. কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ, প্রশিক্ষণ, গাড়ি কেনায় প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল। কৃচ্ছ্রসাধনের কারণে এসব খাতে খরচ কম হয়েছে।
৪. দুর্গম এলাকার প্রকল্পে শ্রমিক দুষ্প্রাপ্য ছিল। তাই ওই সব প্রকল্প বাস্তবায়ন কম হয়েছে। ৫. অর্থবছরের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রকল্পের অর্থ ধরে রাখা হয়েছে। এতে প্রকল্পের অগ্রগতি কম হয়েছে। ৬. ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটিই ছিল চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম একনেক সভা।
* চলতি অর্থবছরে প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিতে আগামীকাল সচিবদের সঙ্গে বৈঠক।
* ১০৭টি নতুন থানা ভবন নির্মাণে ১ হাজার ৬২৪ কোটি টাকার প্রকল্প পাস।
* সব মিলিয়ে গতকালের একনেক সভায় ১১ প্রকল্প পাস হয়েছে।
সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসের হিসাবে এডিপি বাস্তবায়নে কোনো চমক ছিল না। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৫৭ শতাংশ। বাস্তবায়নের এই হার গত তিন অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সর্বনিম্ন।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা।
প্রতি থানায় নতুন ভবন হবে
এদিকে গতকালের একনেক সভায় ১ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশ পুলিশের থানার প্রশাসনিক কাম ব্যারাক নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের পুরো অর্থ স্থানীয় উৎস থেকে জোগান দেওয়া হবে।
প্রকল্প দলিল সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের মে মাসে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় আপাতত ১০৭টি থানা ভবন নির্মাণ করা হবে। ১২ তলা পর্যন্ত থানা ভবন নির্মাণের পাশাপাশি সদস্যদের ব্যারাকও থাকবে সেখানে।
এ ছাড়া সারা দেশের যেসব থানা জরাজীর্ণ আছে সেগুলো সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘যাঁরা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন, তাঁরাই যদি নিরাপদ না থাকেন, তাহলে কীভাবে হবে?’
জানা গেছে, সারা দেশে বর্তমানে ৬৩৯টি থানা আছে। এর মধ্যে ১৭৭টি থানার ভবন ইতিমধ্যে নির্মাণ হয়ে গেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০৭টি থানা ভবন নির্মাণ করা হবে। বাকি ৩৫৫টি থানা ভবন নির্মাণের জন্য আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হবে।
১১ প্রকল্প পাস
গতকালের একনেকে সব মিলিয়ে ৫ হাজার ৪৬০ কোটি টাকার ১১টি প্রকল্প পাস করা হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় মুদ্রায় জোগান দেওয়া হবে ৫ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। বিদেশি সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ১৪১ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বরাদ্দ থাকবে ১০৫ কোটি টাকা।
গতকাল অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো: ১৪৬ কোটি টাকার ঢাকা অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন; ৩০০ কোটি টাকার বরগুনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন; ৭০০ কোটি টাকার মুন্সিগঞ্জ জেলায় গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন; ১০৫ কোটি টাকার রায়পুরা ১২০ মেগাওয়াট (এসি) পিক গ্রিড টাইড সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ; ১৮৪ কোটি টাকার বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী; কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাট ও চট্টগ্রামে ৫৬২ কোটি টাকার শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন;
১৮২ কোটি টাকার ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন; ১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকার কুমিল্লা-সালদা-কসবা (সৈয়দাবাদ) সড়ককে জাতীয় মহাসড়ক মানে উন্নীত করা; ১৬৬ কোটি টাকার নগরাঞ্চলের ভবন সুরক্ষা প্রকল্প; ৯৫ কোটি টাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদ-নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীর রক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘কাজের মান নিশ্চিত করতে সবারই দায়িত্ব আছে। ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নিয়ে বৈঠক করবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়; যাতে প্রকল্পের কাজ দ্রুত হয়। এ বিষয়গুলো লক্ষ রেখে কাজ করতে হবে। ২০৪১ সালের দিকে উন্নয়নশীল দেশে চলে আসব আমরা। এ জন্য আন্তমন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।’
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য এমদাদ উল্লাহ মিয়ান; কৃষি, পানি, পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য আবদুল বাকী, তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিনসহ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।