অর্থ ও বাণিজ্য
বিদেশী পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী টোকিওর হোটেলগুলো
চলতি বছর ব্যাংক অব জাপান ঋণাত্মক সুদহার নীতি প্রত্যাহার করে সুদহার বাড়ানোর পর থেকে জাপানি মুদ্রা ইয়েন দুর্বল হতে শুরু করে। ইয়েনের দুর্বল মান টোকিও শহরের হোটেলগুলোকে বিদেশী পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য আরো সাশ্রয়ী করে তুলতে সাহায্য করেছে। ফলে হোটেল অপারেটররাও ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ একটি পেয়েছে।
হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি অ্যানালিটিকস কোম্পানি স্মিথ ট্রাভেল রিসার্চের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ৩১ মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে টোকিও শহরে হোটেল রুমের গড় ভাড়া ছিল ১৭৭ ডলার ৩০ সেন্ট, যা নিউইয়র্ক বা লন্ডনের তুলনায় ৩০-৪০ শতাংশ কম।
২০১৮-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত টোকিও শহরে গড় হোটেল রুম ভাড়া ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বা প্রায় ৮ ডলার ৯০ সেন্ট বেড়েছে। একই সময়ে নিউইয়র্কের হোটেল রুমের ভাড়ার হার ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ৩০৪ ডলার ৪০ সেন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে লন্ডনে হোটেল রুমের ভাড়া গড়ে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ২৪৪ ডলার ৮০ সেন্টে দাঁড়িয়েছে। আর সিঙ্গাপুরের রুম ভাড়া গড়ে ২৭ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ২৫০ ডলার ৯০ সেন্টে দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন ডলারের পরিবর্তে জাপানের নিজস্ব মুদ্রায় ইয়েনে হোটেলগুলোর ভাড়ার দিকে তাকালে টোকিওতে পাঁচ বছরে হোটেল ভাড়া প্রায় ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। এমন বৃদ্ধি একই সময়ে তাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করে লন্ডনে ২৬ শতাংশ ও সিঙ্গাপুরে ৩০ দশমিক ২ শতাংশ ভাড়ার বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি ছিল।
টোকিওর হোটেলগুলো এখন বিদেশী পর্যটকদের টার্গেট করেই মূলত ভাড়া বাড়াচ্ছে। ফলে বিদেশী পর্যটকরা চাপের মুখে পড়েছেন। দামি বিলাসবহুল প্রপ্রার্টির এ মূল্যবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। নতুন চালু হওয়া বুলগারি হোটেল টোকিওতে চলতি মাসে প্রতি রাতের জন্য প্রায় ৩ লাখ ইয়েন অর্থাৎ ১ হাজার ৯০০ ডলার একটি রুমের জন্য চার্জ করছে।
জেডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেল টোকিও ও হিলটনের ওয়াল্ডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া টোকিও নিহনবাশির মতো আসন্ন অভিজাত হোটেলগুলো শহরে গড় কক্ষ ভাড়াকে আরো বাড়িয়ে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া জাপানের সাশ্রয়ী মূল্যের বাণিজ্যিক হোটেলগুলোয় ভাড়ার হার বাড়ছে। ভ্রমণের মৌসুমে প্রায় ৮০ শতাংশ হোটেল কক্ষই অতিথিতে পূর্ণ থাকছে। এর একটি উল্লেখযোগ্যই বিদেশী দর্শনার্থী। এছাড়া জনপ্রিয় পর্যটন এলাকাগুলোয় রিজার্ভেশন পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বাণিজ্যিক হোটেল রুমের ভাড়া প্রতি রাতের জন্য ২০ হাজার ইয়েন ছাড়িয়ে গেছে। টোকিওর কাবুকিচো অঞ্চলে কিছু বাণিজ্যিক হোটেল নির্দিষ্ট বিশেষ দিনে ৩০ হাজার ইয়েনেও পৌঁছতে পারে।
কক্ষ ভাড়া বাবদ আয় বাড়ার একটি চিত্র দেখা গেছে সম্প্রতি কিয়োরিতসু মেইনটেন্যান্স প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে। প্রতিষ্ঠানটি হোটেল চেইন ডরমি ইন পরিচালনা করে। তারা জানায়, মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছর কোম্পানির নিট মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ২৪০ কোটি ইয়েন, যা আগের বছরের প্রায় তিন গুণ।
জাপান ন্যাশনাল ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চে ৩০ লাখেরও বেশি আন্তর্জাতিক পর্যটক এসেছে জাপানে, যা একটি নতুন মাসিক রেকর্ড গড়েছে। ইনবাউন্ড ট্যুরিজম ও সুদহারের ব্যবধান ইয়েনকে দুর্বল রাখার সঙ্গে হোটেলগুলো কভিড-১৯ মহামারী ক্ষতির পর আবারো লাভের দিকে মনোনিবেশ করতে শুরু করেছে। সূত্র: নিক্কেই এশিয়া।