রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় চোখধাঁধানো অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছে এডিসন রিয়েল এস্টেট। এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ।
প্রশ্ন: চাকরিজীবনের শুরুতে সিমেন্স বাংলাদেশের কনজ্যুমার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ডিভিশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরপর শুরু করেন সিম্ফনি মোবাইল কোম্পানির ব্যবসা। নতুন করে এখন আবাসন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হলেন কেন?
আমিনুর রশিদ: এডিসন গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বেশ সুনামের সঙ্গেই কাজ করে যাচ্ছি আমরা। যে খাতেই হাত দিয়েছি, সেখানেই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছি। ইলেকট্রনিকস, পাওয়ার, মোবাইল, কমিউনিকেশন ইত্যাদি ব্যবসায়ে নিজেদের সুনাম বজায় রেখেছি। এডিসন গ্রুপ দেশ ও দেশের মানুষের অগ্রগতির অংশীদার হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে এডিসন রিয়েল এস্টেটের যাত্রা শুরু হয়। এই ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পেছনে আমাদের মূল ইন্সপিরেশন ছিল বর্তমান প্রজন্মের উন্নত জীবনের চাহিদা বৃদ্ধি এবং সে অনুযায়ী যথাযথ আবাসনের অভাব পূরণ করা। আমি দেখেছি যে মানুষের উন্নত জীবনের এই চাহিদা সাধ্যের ভেতরে পূর্ণ করার ব্যাপারে আহামরিভাবে কেউ কাজ করছে না। বিশ্বাস করুন, অনেক কিছু করার আছে আমাদের এই রিয়েল এস্টেট সেক্টরে এবং অনেক জায়গা আছে, যেগুলোকে অনেকে গুরুত্বসহকারে না দেখলেও কাস্টমারের কাছে চাহিদাগুলো আপন। আমি চাই, এডিসন গ্রুপের ঐতিহ্যের ধারা বজায় রেখে এডিসন রিয়েল এস্টেট লিমিটেডও মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাদের অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করবে।
আপনিও জানেন, বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট বা আবাসন একটি অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল খাত। এরপরও মানসম্মত আবাসস্থলের ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ের মধ্যে বড় ঘাটতি রয়েছে এবং এটার ওপর জোর দিয়েই আমরা আমাদের মূল্যবান গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা করার পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড হয়ে ওঠার লক্ষ্যে এডিসন জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে অনন্য ডিজাইনের উচ্চ মানসম্পন্ন বাসস্থান নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা ক্লায়েন্টদের আবাসনের ক্ষেত্রে অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে ক্রমাগত সেরা চেষ্টা করে চলেছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানিত ও সবচেয়ে বিশ্বস্ত রিয়েল এস্টেট ব্র্যান্ড হয়ে উঠব। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে অবিচল থাকব এবং গ্রাহকের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করে তাঁদের জীবনে সুখের নতুন এক সূচনা করব ইনশা আল্লাহ।
প্রশ্ন: আপনাদের বেশির ভাগ প্রজেক্ট বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাভিত্তিক কেন, বলবেন?
আমিনুর রশিদ: দেখুন, বসুন্ধরা হলো বর্তমান সময়ে দেশের বড় আবাসিক এলাকাগুলোর মধ্যে একটি। এই সেখানকার প্ল্যানও বেশ গোছানো। এই এলাকায় সবচেয়ে বড় শপিং কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে নামকরা স্কুল-কলেজ, ইউনিভার্সিটি, হসপিটাল, কনভেনশন সেন্টার, খেলার জায়গা—সবই রয়েছে। এরপর পাশেই পূর্বাচল ৩০০ ফুট রাস্তা, এয়ারপোর্ট, বনানী, গুলশান—এসব এলাকাও কাছেই। সে জন্য বসুন্ধরাকে যদি উন্নত ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বলি, তাহলে ভুল হবে না। আর মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের কথাও যদি বলি, তাঁরাও এমন গোছানো আবাসিক পরিবেশে থাকতেই বেশি আগ্রহী। এরপর বসুন্ধরার মতো অন্য কোনো এলাকায় আমরা ১০-২০ কাঠার প্লট সহজে পাই না। আমাদের পক্ষে বসুন্ধরাতেই সুলভ মূল্যে উন্নত মানের আবাসন দেওয়া সম্ভব। সব মিলিয়ে বলব, আবাসন খাতে যে বিপ্লব আমরা আনতে চাইছি, সেটা কেবল বসুন্ধরাতেই সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।
প্রশ্ন: আপনাদের প্রকল্পগুলোর ভিন্নতা ও নতুনত্ব নিয়ে যদি কিছু বলতেন।
আমিনুর রশিদ: আমাদের প্রজেক্টগুলো গতানুগতিক নয়, বরং বেশ চোখে পড়ার মতো। যেমন আমাদের লাক্সারি ক্যাটাগরির অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে আমরা যেসব অত্যাধুনিক ফিচার রাখছি, তা মূলত উন্নত বিশ্বের কন্ডোমিনিয়াম আবাসনে থাকে। আবার কিছু কিছু জায়গায় না–ও থাকতে পারে। আমাদের প্রিমিয়াম প্রজেক্টগুলোতে যেসব সুবিধা থাকছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সুইমিংপুল, জিম, কমিউনিটি স্পেস, বাচ্চাদের খেলার জায়গা ইত্যাদি। এগুলো বর্তমান যুগে দেশের লিভিং স্ট্যান্ডার্ডে নতুন মাত্রা যোগ করবে। আমাদের এন্ট্রি লেভেলের কমফোর্ট প্রজেক্টগুলোতেও আমরা যেসব সুবিধা দিচ্ছি, সেগুলো অন্য অনেক কোম্পানিতে লাক্সারি হিসেবে ধরা হয়। দেশের নামীদামি ও অভিজ্ঞ আর্কিটেক্টরা আমাদের প্রজেক্টগুলোর ডিজাইন করেন। এসব প্রজেক্টে সর্বোচ্চ মান ও গ্রাহকদের সন্তুষ্টি নিশ্চিতে আমরা থাইসেনক্রাপ, ওয়েল অ্যান্ড পাওয়ার, আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড, গ্রহি, এবিবি, হোলসিম, বিএসআরএমের মতো বিশ্বমানের নামীদামি ব্র্যান্ডের ম্যাটেরিয়াল ও অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার করে থাকি।
প্রশ্ন:আপনাদের প্রকল্পগুলো নিয়ে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
আমিনুর রশিদ: আমরা বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। বিশেষ করে সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখে আমাদের প্রিমিয়াম দুটি প্রজেক্ট ‘এডিসন আমোর’ ও ‘এডিসন এপ্রিকাস’ উদ্বোধন করার পর থেকে আমরা আরও ভালো সাড়া পাচ্ছি। এর চেয়েও বেশি সাড়া পাওয়ায় আমাদের কাজের গতি অনেক বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। এই পর্যায়ে আমরা যে সাড়াটা পাচ্ছি, তা যেকোনো কোম্পানিকে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বেশ অনুপ্রেরণামূলক। সামনে আমাদের যে প্রজেক্টগুলো আসছে, সেগুলো আরও বেশি সাড়া ফেলবে বলে আমরা মনে করছি।
প্রশ্ন : নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের প্রতি কি কোনো বার্তা আছে, যারা আবাসন খাত নিয়ে কাজ করছে?
আমিনুর রশিদ: আসলে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের আমি এই খাত নিয়ে নতুন করে ভাবতে বলব। ইয়াং ব্লাড ব্যাপারটা পুরো ব্যবহার করতে হবে তাদের। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছি। সেই তুলনায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেকচারাল ইনোভেশনের ক্ষেত্রে এখনো আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। দেশ–বিদেশ ঘুরে দেখতে হবে যে কাদের আর্কিটেকচারাল ডিজাইন ও প্র্যাক্টিস কেমন। আমাদেরও সেই পর্যায়ে যাওয়ার স্পৃহা থাকতে হবে। আমাদের জ্ঞান বিতরণ করতে হবে এবং দেশে এমন একটি প্র্যাক্টিস ও ইকোসিস্টেম ডেভেলপ করতে হবে যেন আর্কিটেক্টরা স্বাধীনভাবে বৈশ্বিক মানের ডিজাইন বা নকশা বাস্তবায়নে আগ্রহ নিয়ে কাজ করেন। এখানে কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। যে প্রজেক্টগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে, তার প্রতিটিই যেন একেকটা আর্কিটেকচারাল মাস্টারপিস হয়, সে লক্ষ্যে মেধা ও শ্রম দিতে হবে। প্রজেক্টগুলোর প্রতি ইঞ্চি জায়গার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এডিসন রিয়েল এস্টেটে আমরা তরুণদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছি। গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে দেশের রিয়েল এস্টেট সেক্টরে নতুন এবং ভালো কিছু করার প্রত্যয়ে আমাদের পুরো টিম কাজ করছে।