চীনের আবাসন বাজারের সংকটের মাঝে সর্বশেষ যুক্ত হওয়া নাম হলো সিনো-ওশান গ্রুপ হোল্ডিং। সম্প্রতি হংকংয়ের একটি আদালতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে লিকুইডেশন পিটিশন দাখিল করেছে মার্কিন ব্যাংক।
মাঝারি আকারের রিয়েল এস্টেট কোম্পানি সিনো-ওশান রাষ্ট্রীয় সমর্থন পেয়ে আসছে। কোম্পানিটি গত শুক্রবার নিশ্চিত করেছে, হংকং হাইকোর্টে উইন্ডিং-আপ পিটিশন দায়ের করেছে ব্যাংক অব নিউইয়র্ক মেলনের লন্ডন শাখা। এ ধরনের পিটিশন গ্রাহ্য হলে সাধারণত কোনো কোম্পানি স্বাভাবিক পরিচালন বন্ধ করে দিয়ে বকেয়া পরিশোধে বাধ্য হয়।
মামলায় আবেদনকারী জানায়, সিনো-ওশান গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিনো-ওশান ল্যান্ড ট্রেজার ফোর লিমিটেড বন্ডের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। কোম্পানিটির কাছে ব্যাংকের মোট বকেয়া ৪০ কোটি ডলার।
গ্রুপটির ২৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ শেয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চায়না লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, আবাসন খাত উদ্ধারে সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সংকট কাটেনি। এছাড়া সংকট বেসরকারি কোম্পানির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকা কোম্পানিতেও ছড়িয়ে যাচ্ছে। অবশ্য কোম্পানিগুলোর প্রধান শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রাষ্ট্রীয় করপোরেশন থাকলেও এগুলো পৃথক সত্তা আকারে পরিচালিত হয়।
২০২৩ সালে ২ হাজার ১০৯ কোটি ইউয়ান বা ২৯০ কোটি ডলার নিট লোকসান করেছে সিনো-ওশান, যা আগের বছরের ১ হাজার ৯০৩ কোটি ইউয়ান থেকে বেশি। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬১৪ কোটি ইউয়ান।
ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আবাসন বিক্রি সিনো-ওশানের আয়ের প্রধান উৎস। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে এ ধরনের চুক্তি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে গেছে। ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় বিক্রি ৬৭ শতাংশ কমে ৯৫৬ কোটি ইউয়ানে নেমে এসেছে। বিক্রি হয়েছে আগের বছরের তুলনায় অর্ধেক স্পেস, যার পরিমাণ ১০ লাখ বর্গমিটার।
তবে সিনো-ওশান জানিয়েছে, তারা আদালতে জোরালোভাবে পিটিশনের বিরোধিতা করবে। এ পিটিশন অন্য স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে না এবং কোম্পানির সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এদিকে কাইসা গ্রুপ ও শিমাও গ্রুপ হোল্ডিংসসহ বেশ কয়েকটি চীনা আবাসন কোম্পানি গত সপ্তাহে একই ধরনের পিটিশনের মুখোমুখি হয়েছে। মামলাগুলো করেছে যথাক্রমে সিটিকর্প ইন্টারন্যাশনাল ও চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংক (এশিয়া)। এছাড়া ব্যাংক অব নিউইয়র্কের লন্ডন শাখাও আরেক ডেভেলপার রেডসান প্রপার্টিজ গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
বর্তমানে আইনি উপদেষ্টাদের নিয়ে পরিস্থিতির উত্তরণ নিয়ে কাজ করছেন শিনো-ওশানের নির্বাহীরা। তারা নতুন করে ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। তবে পিক্টেট ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের এশিয়া বিষয়ে প্রধান বিশ্লেষক ডং চেন জানান, চীনা আবাসনে বিনিয়োগের বিষয়ে সতর্ক রয়েছে সুইস ব্যাংকগুলো। কারণ ভবিষ্যতে এ খাতে একই ধরনের ধসের আশঙ্কা করছেন তারা। এছাড়া জনসংখ্যা হ্রাস হাউজিং মার্কেটের চাহিদা আরো সীমিত করবে।
সূত্র: নিক্কেইএশিয়া।