আবাসন সংবাদ

পাহাড়ে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল যুগের সূচনা

Published

on

ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের আওতায় পার্বত্য জেলাগুলোতে ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজেশনের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে শবিবার(১৩ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো এক বিশেষ কর্মশালা।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রদূত (অব.) জনাব সুপ্রদীপ চাকমা, যিনি বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নূরল্লাহ নূরী।

ডিজিটাইজেশন ৭৮০ ভুমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র
ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৫৯ জেলায় ৭৮০টি ভূমি সেবা সহায়তা কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। land.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নাগরিকরা সহজে ভূমি-সংক্রান্ত তথ্য ও সেবা পাবেন।

তবে প্রশ্ন উঠছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু হলেও কি মাঠপর্যায়ে ভূমি নিয়ে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি, হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধ হবে।
পার্বত্য জেলাগুলোতে ভূমি সমস্যার চিত্র সমতল এলাকার চেয়ে ভিন্ন। পাহাড়ে খাস জমি, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, রিজার্ভ ফরেস্ট, এবং ঐতিহ্যগত মালিকানা নিয়ে রয়েছে দীর্ঘদিনের জটিলতা। আদালত কিংবা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মামলা ও বিরোধের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশেষ করে রাঙামাটি শহরেই ভূমি বিরোধ সবচেয়ে প্রকট রূপ নিয়েছে।

মাঠপর্যায়ে হয়রানি ও দুর্নীতি ভূমি ব্যবস্থাপনার কাজে নাগরিক হয়রানি ও দুর্নীতি যেন নিত্যদিনের ঘটনা। দলিল নেওয়া, নামজারি, ভূমির ম্যাপ উত্তোলন সব ক্ষেত্রেই ঘুষ ও জটিলতার অভিযোগ আছে। প্রশ্ন উঠছে ডিজিটাল উদ্যোগ এ সমস্যাগুলো কতটা কমাতে পারবে।

Advertisement

হেডম্যান-কার্বারীর সুপারিশ পার্বত্য চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রশাসনিক কাঠামোয় ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য হেডম্যান ও কার্বারীর অনুমোদন প্রয়োজন হয়। নাগরিকরা অভিযোগ করেছেন, বিশেষ করে বোমাং সার্কেলে হেডম্যানের সনদ নিতে ১৫–২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। ফলে ভূমি ক্রয়-বিক্রয় ও নিবন্ধনের প্রক্রিয়া জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কর্মশালায় আলোচকরা বলেন, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা চালু হলে অনেক সমস্যা কমে আসবে। অনলাইনে নামজারি, ম্যাপ উত্তোলন, খাজনা প্রদান ইত্যাদি করা গেলে নাগরিক হয়রানি ও দুর্নীতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। তবে পাহাড়ের বিশেষ পরিস্থিতি—যেখানে ঐতিহ্যগত প্রথা, বন আইন ও সরকারি বিধি একসাথে জটিলতা তৈরি করেছে সেটি সমাধানের জন্য আলাদা উদ্যোগ নিতে হবে।

এই কর্মশালাকে অনেকে পার্বত্য এলাকায় ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের সূচনা হিসেবে দেখছেন। তবে নাগরিক প্রত্যাশা ডিজিটাইজেশন কেবল স্লোগান হয়ে না থেকে, বাস্তবে হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর হবে। পাহাড়ে ভূমি বিরোধ ও মামলার জট খুলবে কি না তা সময়ই বলে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

72 − 68 =
Powered by MathCaptcha

সর্বাধিক পঠিত

Exit mobile version