আবাসন সংবাদ
ড্যাপ সংশোধনীর প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রণীত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) সংশোধনীর প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই অনুমোদনের ভিত্তিতে শিগগিরই ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে।
আজ রোববার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের সভাপতিত্বে রাজউক প্রণীত ড্যাপ বাস্তবায়ন মনিটরিং ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধনীর সুপারিশ প্রণয়ন–সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় ড্যাপ সংশোধনীর প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ড্যাপের ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) ও জনঘনত্ব, বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল ও কৃষিজমি সংরক্ষণ-সংক্রান্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে পরিবেশগত সংবেদনশীলতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিধান সংশোধনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, রাজউক এলাকার প্রায় সব জায়গায় ফার ও জনঘনত্ব বাড়ানো হবে। আগে বিদ্যমান ড্যাপ (২০২২-২০৩৫)-এ কৃষিজমিতে সীমিত পরিসরে নাগরিক সেবা নির্মাণের অনুমতি ছিল। তবে নতুন সংশোধনীতে তা বাতিল করা হয়েছে।
বিদ্যমান ড্যাপে (২০২২-৩৫) উল্লিখিত মুখ্য জলস্রোত ও সাধারণ জলস্রোত পৃথকভাবে থাকলেও নতুন সংশোধনীতে তা একত্র করে ‘বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এ এলাকায় কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। পাশাপাশি টিওডি (ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট), রিজেনারেশন এবং ব্লকভিত্তিক উন্নয়নকে উৎসাহ দিতে ফার বৃদ্ধির সুপারিশও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (২০২০) ও ড্যাপ (২০২২-৩৫)–এর সমন্বয় করে শহর উন্নয়নের প্রাবল্যতার সঙ্গে যুগোপযোগীকরণের লক্ষ্যে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধনীর অনুমোদন করেছে। ইমারতের ব্যত্যয় নিয়ন্ত্রণে (যেমন অতিরিক্ত ভয়েড স্পেস, সেটব্যাক, ভূমি আচ্ছাদন, জনঘনত্ব ইত্যাদি) বিধিবিধানের সংশোধন, পরিমার্জন ও বিল্ডিং কোডের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে।
এ ছাড়া দুর্যোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নির্মাণ অনুমোদনকালে স্থাপত্য নকশার পাশাপাশি কাঠামোগত ও অন্যান্য নকশা অনুমোদনের বিধান রয়েছে। গ্রাহক হয়রানি লাঘবে বিশেষ ও বৃহতায়তন প্রকল্পের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না, নির্মাণ অনুমোদন সুপারিশ পাওয়ার পর অনুমোদন ফি জমা প্রদান করতে হবে। ভবন নির্মাণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে পাঁচ কাঠা বা তদূর্ধ্ব আয়তনের জমির জন্য সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রিন বিল্ডিং প্রণোদনা প্রদান, আপিল কমিটি গঠন ইত্যাদি বিষয় সংযোজন বা পরিমার্জন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান নগর–পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী, পরিবেশবাদী সংগঠন—সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে ড্যাবের সংশোধনীর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন সংশোধনীর কারণে রাজধানীর ধানমন্ডি ও গুলশান এলাকা বাদে প্রায় সব এলাকায় ভবন এক থেকে দোতলার বেশি করা যাবে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলামসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, একই বিষয়ে চলতি বছরের ১৯ মার্চ ড্যাপ রিভিউ–সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে পুনরায় যাচাই করে উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনার আলোকে রাজউক ও মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কমবেশি ৩৫টি সভা করে চূড়ান্ত খসড়া আজ সভায় উপস্থাপন করা হয়।
জানতে চাইলে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত ড্যাপে কী কী সংশোধন হচ্ছে, সে বিষয়ে আমরা শতভাগ নিশ্চিত নই। তারপরও বলব, আমরা আবাসন ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে ড্যাপ সংশোধনের অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে সেটি হওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আশা করছি, এবার আবাসন খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরবে।’
আবাসন সংবাদ
দ্বিগুণেরও বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণের সুযোগ দিয়ে ড্যাপ সংশোধন

দ্বিগুণেরও বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণের সুযোগ দিয়ে ড্যাপ সংশোধন, ঢাকার বাসযোগ্যতা নিয়ে শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। সংশোধিত ড্যাপে রাজধানীকে আগের ২৭৫টি জনঘনত্ব ব্লকের পরিবর্তে ৬৮টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। গাজীপুরের অংশ বাদ দিয়ে নতুন পরিকল্পনায় ঢাকাকে ১ হাজার ৯৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এতে ভবনের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সর্বোচ্চ জনঘনত্বও ২৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ করা হয়েছে।
ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় ভবনের উচ্চতা সীমা বাড়িয়ে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) ২০২২–২০৩৫-এর সংশোধন চূড়ান্ত হয়েছে। খুব শিগগিরই এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
একইসঙ্গে খসড়া ‘ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা–২০২৫’-এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।
সংশোধিত ড্যাপে রাজধানীকে আগের ২৭৫টি জনঘনত্ব ব্লকের পরিবর্তে ৬৮টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। গাজীপুরের অংশ বাদ দিয়ে নতুন পরিকল্পনায় ঢাকাকে ১ হাজার ৯৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এতে ভবনের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সর্বোচ্চ জনঘনত্বও ২৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ করা হয়েছে।
২০২২ সালে গেজেট প্রকাশের পর এক দফা সংশোধন আনা হয়েছিল। কিন্তু আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা বারবার ঢাকায় ভবনের উচ্চতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ সংশোধনে তাদের চাপেই ভবনের উচ্চতা ও জনঘনত্ব বাড়ানো হয়েছে বলে রাজউক ও মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে।
রাজউক সূত্র জানায়, ড্যাপ (২০২২–২০৩৫) সংশোধনে যেসব বিষয়ের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে—ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় ভবনের উচ্চতা সীমা বৃদ্ধি, মুখ্য ও সাধারণ জলস্রোত একীভূত করে ‘বন্যা প্রবাহ অঞ্চল’ ঘোষণা (যেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা করা যাবে না), এবং ব্লকভিত্তিক উন্নয়নে অন্তত ৫০ শতাংশ এলাকা খেলার মাঠ ও পার্কের জন্য সংরক্ষণ।
বিশেষ করে কেরানীগঞ্জ, সাভারের হেমায়েতপুর, নারায়ণগঞ্জের কাশিপুর, রূপগঞ্জের কাঁচপুর, ভুলতা ও গাউছিয়া এলাকায় আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতার ভবন নির্মাণের সুযোগ থাকছে।
এদিকে খসড়া ‘ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা–২০২৫’-এ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে ভবন নির্মাণের পর প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অকুপ্যান্সি সার্টিফিকেট নবায়ন বাধ্যতামূলক ছিল। নতুন বিধিমালায় একবার সার্টিফিকেট নিলেই তা আজীবনের জন্য কার্যকর থাকবে। পাঁচ কাঠা বা তার বেশি জমির প্লটে স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
২০০৮ সালের পুরোনো বিধিমালা অনুযায়ী, ভবন নির্মাণের আবেদন করলেই অনুমোদন ফি দিতে হতো। নতুন বিধিমালায় ভবন নির্মাণের সুপারিশপ্রাপ্তির পর ফি পরিশোধ করতে হবে। আবেদন নিষ্পত্তির সময়ও ৪৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৮০ দিন করা হয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, সংশোধিত ড্যাপে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি মুখে বলা হলেও বাস্তবে অধিকাংশ পরিবর্তন এসেছে ব্যবসায়িক স্বার্থে। শুধু জলস্রোত একীভূত করে ‘বন্যা প্রবাহ অঞ্চল’ ঘোষণা পরিবেশগত ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও বাকি সংশোধনগুলো ঢাকার ওপর আরও চাপ বাড়াবে। জনঘনত্ব ও ভবনের উচ্চতা বাড়লে রাজধানীর বাসযোগ্যতা কমবে এবং যানজট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
এদিকে, আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী ড্যাপ সংশোধন হওয়ায় তারা সন্তুষ্ট। তাদের মতে, এ সংশোধনের ফলে আবাসন খাতে নতুন গতি আসবে এবং ব্যবসায়ীরা পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
বাংলাদেশ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন (রিহ্যাব)-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, “আমরা মনে করি, ড্যাপে রাজউক এলাকার ভবনের উচ্চতায় যে বৈষম্য ছিল, সেটি সংশোধনের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়েছে। এতে যেমন আবাসন খাত পুনরুজ্জীবিত হবে, তেমনি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গতি আসবে।”
তিনি আরও বলেন, “ড্যাপে ভবনের উচ্চতা কমিয়ে দেওয়ার কারণে গত ১৫ মাস ধরে এই খাতের কার্যক্রম প্রায় স্থবির ছিল। এতে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সংশোধিত ড্যাপে আবাসন ব্যবসায়ীদের দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আবাসন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতের মন্দাও কাটবে।”
তবে খসড়া ‘ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা–২০২৫’-এ স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে রিহ্যাব আপত্তি জানাবে বলেও তিনি জানান।
অন্যদিকে রাজউক জানিয়েছে, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই ড্যাপ সংশোধন ও খসড়া ইমারত বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। ঢাকার বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করেই প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, “ড্যাপের সংশোধন ঢাকার পরিবেশ, আবাসন ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দাদের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে করা হয়েছে। বিশেষভাবে পরিবেশ সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। মিড আরবান এরিয়ায় ভবনের উচ্চতা সীমা কিছুটা বাড়ানো হলেও ব্লকভিত্তিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচ কাঠা বা তদূর্ধ্ব প্লটে ভবন নির্মাণে স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “সংশোধনীগুলো ঢাকার বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনা করেই করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ঢাকার আশপাশের সাভার, বিরুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, ভুলতা–গাউসিয়া ও নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় ভবনের উচ্চতা সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে, ফলে কেন্দ্রীয় ঢাকার ওপর চাপ কিছুটা কমবে।”
কোন এলাকায় ভবনের উচ্চতা কতটুকু বাড়ছে?
রাজউক এলাকার প্রায় সব জায়গাতেই ভবনের উচ্চতা বাড়ছে। সংশোধিত ড্যাপ ও খসড়া ‘ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা–২০২৫’ অনুযায়ী, অনেক স্থানে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর—ফার) দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে আগে যেখানে সর্বোচ্চ পাঁচতলা ভবন নির্মাণের সুযোগ ছিল, এখন সেখানে ১০ থেকে ১১ তলা পর্যন্ত ভবন তোলা যাবে। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো প্লটে যত বেশি খোলা জায়গা রাখা হবে, সে অনুযায়ী ভবনের উচ্চতায় অতিরিক্ত ছাড় দেওয়া হবে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো এলাকায় ফার-এর মান ২.৫ হয়, তাহলে ন্যূনতম ফাঁকা জায়গা রেখে ৪–৫ তলা ভবন করা যাবে। কিন্তু জমির মালিক যদি আরও বেশি জায়গা খালি রাখেন, তবে একই মানে ৭–৮ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যাবে।
যেসব এলাকায় ফার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে—মিরপুরে ২.৮ থেকে ৩.৪, দক্ষিণ খানে ২ থেকে ৩.১, শেওড়াপাড়ায় ২ থেকে ৩, কড়াইলে ০ থেকে ২, মহাখালীতে ২.২ থেকে ৩.৩, মোহাম্মদপুরে ২.৭ থেকে ৩.৪, পুরান ঢাকায় ২.৬ থেকে ৩.৩, খিলগাঁওয়ে ২ থেকে ৩.৪, টঙ্গীতে ২.৪ থেকে ৩.২, রূপগঞ্জে ২ থেকে ৩.২, সাভারে ২ থেকে ৩.৪, মিরপুর ডিওএইচএসে ২.৫ থেকে ৪.৮ এবং খিলক্ষেত আবাসিক এলাকায় ২ থেকে ৪.৪।
এছাড়া বারিধারা, বসুন্ধরা, কচুক্ষেত, উত্তরা, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, পান্থপথ, ডেমরা ও মগবাজারসহ আরও বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যমান ফার-এর মানের তুলনায় সর্বোচ্চ ১.৫ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। শুধু ফার-এর মান বৃদ্ধি নয়—যদি ব্লকভিত্তিক উন্নয়নে একাধিক প্লট একীভূত করা হয়, তাহলে নির্ধারিত ফার-এর ওপর অতিরিক্ত ০.২৫ থেকে ০.৭৫ পর্যন্ত বোনাসও দেওয়া হবে।
রাজউক জানিয়েছে, কোনো মালিক যত বেশি খোলা জায়গা ছেড়ে দেবেন, তার প্লটে ভবনের উচ্চতা তত বেশি করা যাবে। ফলে ভবনের উচ্চতা বাড়লেও খোলা জায়গা ও সবুজ এলাকা সংরক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
ফ্লোর ইউনিটও বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি
ভবনের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোর ইউনিটের সংখ্যাও বেড়েছে, অনেক জায়গায় যা দ্বিগুণেরও বেশি। ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রায় সব এলাকাতেই ফ্লোর ইউনিট বা আবাসন ইউনিটের হার বাড়ানো হয়েছে, ফলে ফ্ল্যাট নির্মাণের সুযোগও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এলাকাভেদে আবাসন ইউনিটের হার মূল ড্যাপের তুলনায় বাড়ানোয় সব এলাকাতেই ফ্ল্যাটের সংখ্যা বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ, মূল ড্যাপে পুরান ঢাকায় আবাসন ইউনিটের হার ছিল ১.২, যা এখন দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে ৩.১ করা হয়েছে। ফলে পুরান ঢাকার পাঁচ কাঠা জমিতে আগে সর্বোচ্চ ছয়টি ফ্ল্যাট করা যেত, এখন সেখানে ১৩টি পর্যন্ত ফ্ল্যাট নির্মাণের সুযোগ থাকবে।
সংশোধিত ড্যাপের তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণ খানে ফ্লোর ইউনিট ১.৪ থেকে বাড়িয়ে ২.৯, মিরপুরে ১.৭ থেকে ২.৯, শেওড়াপাড়ায় ১.৩ থেকে ৩, মহাখালীতে ১.৯ থেকে ৩.২, মোহাম্মদপুরে ১.৭ থেকে ২.৮, পুরান ঢাকায় ১.২ থেকে ৩.১, টঙ্গীতে ১.২ থেকে ৩, রূপগঞ্জে ১.২ থেকে ৩, সাভারে ১.২ থেকে ৩, মিরপুর ডিওএইচএসে ১.৯ থেকে ২.৭ এবং খিলক্ষেত আবাসিক এলাকায় ১.২ থেকে ২.৬ করা হয়েছে।
‘ড্যাপের সংশোধন হতাশাজনক’— বিশেষজ্ঞরা
নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদরা বলছেন, ড্যাপের সংশোধন যেভাবে করা হয়েছে তা হতাশাজনক এবং এতে ঢাকার ওপর চাপ আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, “ড্যাপের এই সংশোধন পুরোপুরি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থে করা হয়েছে। যেখানে ঢাকার ওপর জনঘনত্বের চাপ কমানোর কথা, সেখানে তা ২৫০ থেকে ৩০০ করা একেবারেই হঠকারী সিদ্ধান্ত। বিশ্বের কোনো শহরেই জনঘনত্ব ১৫০ থেকে ২০০-এর বেশি নয়। আগের ড্যাপে যে এফএআর (ফার) নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটিই বেশি ছিল; এখন সেটিকে আবার দ্বিগুণ করা হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলো সুউচ্চ ভবনের বস্তিতে পরিণত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সংশোধিত ড্যাপ ও ইমারত বিধিমালা–২০২৫-এ ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের কথা বলা হলেও, ফার ও ইউনিট সংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে ঢাকার ট্রাফিক পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হবে। ভবন নির্মাণের সময় খোলা জায়গা দেখালেও বাস্তবে মালিকরা নিয়ম ভঙ্গ করে ভবন নির্মাণ করেন। ফলে উচ্চতায় ছাড় দিয়ে আবাসন ব্যবসায়ীদের আরও সুযোগ করে দেওয়া হলো।”
তিনি আরও বলেন, “ভবন নির্মাণের আবেদন নিষ্পত্তির সময় ৪৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৮০ দিন করায় জমির মালিকদের ভোগান্তি বাড়বে। রাজউকের ফাইল প্রক্রিয়াকরণে সর্বোচ্চ তিন মাস সময় লাগতে পারে, সেখানে ছয় মাসে উন্নীত করায় জটিলতা আরও বাড়বে।”
তবে তিনি নতুন বিধিমালায় ভবনে স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার, পানি পুনর্ব্যবহার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা যুক্ত করাকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে এসবের কার্যকর বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
নতুন বিধিমালায় ইমারত নির্মাণে অতিরিক্ত ভয়েড স্পেস, সেটব্যাক, ভূমি আচ্ছাদন ও জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে সংশোধন আনা হয়েছে এবং বিল্ডিং কোডের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগঝুঁকি বিবেচনায় রেখে স্থাপত্য নকশার পাশাপাশি কাঠামোগত ও অন্যান্য নকশা অনুমোদনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
রাজউক জানিয়েছে, গ্রিন বিল্ডিং নির্মাণে প্রণোদনা প্রদান, আপিল কমিটি গঠনসহ আরও কয়েকটি নতুন বিষয় সংযোজন ও পরিমার্জন করা হয়েছে।
আবাসন সংবাদ
ড্যাপ সংশোধনীতে ফ্লোর ইউনিটও বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি: জেনে নিন কোন এলাকায় কত

ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) ২০২২–২০৩৫-এর চূড়ান্ত সংশোধনীতে ভবনের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ফ্লোর ইউনিটের সংখ্যাও বেড়েছে, অনেক জায়গায় যা দ্বিগুণেরও বেশি।
ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় ভবনের উচ্চতার সীমা বাড়িয়ে ড্যাপ সংশোধনী চূড়ান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে খসড়া ‘ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা–২০২৫’-এর নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। শীঘ্রই চূড়ান্ত সংশোধনী গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
সংশোধনীতে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রায় সব এলাকাতেই ফ্লোর ইউনিট বা আবাসন ইউনিটের হার বাড়ানো হয়েছে, ফলে ফ্ল্যাট নির্মাণের সুযোগও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংশোধিত ড্যাপের তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণ খানে ফ্লোর ইউনিট ১.৪ থেকে বাড়িয়ে ২.৯, মিরপুরে ১.৭ থেকে ২.৯, শেওড়াপাড়ায় ১.৩ থেকে ৩, মহাখালীতে ১.৯ থেকে ৩.২, মোহাম্মদপুরে ১.৭ থেকে ২.৮, পুরান ঢাকায় ১.২ থেকে ৩.১, টঙ্গীতে ১.২ থেকে ৩, রূপগঞ্জে ১.২ থেকে ৩, সাভারে ১.২ থেকে ৩, মিরপুর ডিওএইচএসে ১.৯ থেকে ২.৭ এবং খিলক্ষেত আবাসিক এলাকায় ১.২ থেকে ২.৬ করা হয়েছে।
সংশোধিত ড্যাপ-এ ফ্লোর এরিয়া রেশিও
এলাকা |
বর্তমান ফার |
প্রস্তাবিত ফার |
মিরপুর |
২.৮ |
৩.৪ |
দক্ষিণ খান |
২.০ |
৩.১ |
শেওড়াপাড়া |
২.০ |
৩.০ |
কড়াইল |
০.০ |
২.০ |
মহাখালী |
২.২ |
৩.৩ |
মোহাম্মদপুর |
২.৭ |
৩.৪ |
পুরান ঢাকা |
২.৬ |
৩.৩ |
খিলগাঁও |
২.০ |
৩.৪ |
টঙ্গী |
২.৪ |
৩.২ |
রূপগঞ্জ |
২.০ |
৩.২ |
সাভার |
২.০ |
৩.৪ |
মিরপুর ডিওএইচএস |
২.৫ |
৪.৮ |
খিলক্ষেত |
২.০ |
৪.৪ |
যদি কোনো এলাকায় ফার-এর মান ২.৫ হয়, তাহলে ন্যূনতম ফাঁকা জায়গা রেখে ৪–৫ তলা ভবন করা যাবে। কিন্তু জমির মালিক যদি আরও বেশি জায়গা খালি রাখেন, তবে একই মানে ৭–৮ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যাবে।
-
বিবিধ2 years ago
বাংলাদেশে প্রচলিত বাড়ি ভাড়ার চুক্তি, নিয়ম ও নীতিমালা
-
নির্বাচিত প্রতিবেদন1 year ago
রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করবেন যেভাবে
-
আবাসন সংবাদ1 month ago
রাজউকের নির্দেশে নর্থ সাউথ গ্রীন সিটি বন্ধ
-
আবাসন সংবাদ2 months ago
মাত্র ২৪ ঘন্টায় খতিয়ানের ভূল সংশোধনের সরকারি নির্দেশনা
-
আবাসন সংবাদ1 month ago
সীমান্ত রিয়েল এস্টেট এর অনুমোদনহীন সীমান্ত সিটি ও সীমান্ত কান্ট্রি প্রকল্প
-
ফিচার1 month ago
প্রথম ফ্ল্যাট কিনে ঠকতে না চাইলে মেনে চলুন এই ১০ কৌশল
-
আইন-কানুন1 year ago
রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের সাথে জমি বা ফ্ল্যাট নিয়ে সমস্যা ও তার প্রতিকার (১ম পর্ব)
-
আবাসন সংবাদ1 month ago
আবাসন পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও হিসাবরক্ষক সাময়িক বরখাস্ত