বৈশ্বিক এভিয়েশন খাত চলতি বছর বড় পরিসরে ঘুরে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)। তবে উড়োজাহাজ সরবরাহ ও মেরামতসংক্রান্ত জটিলতা সারা বছরই শিল্পটিকে প্রভাবিত করবে।
গতকাল ঘোষিত সংশোধিত পূর্বাভাসে সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে রেকর্ড সংখ্যক ভ্রমণকারী আকাশপথ বেছে নেবে। এতে এভিয়েশন শিল্পের মোট আয় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে।
আইএটিএর পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছরে বিশ্বব্যাপী এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো ৩ হাজার ৫০ কোটি ডলার মুনাফা করবে। এর আগে ২০২৩ সালে মুনাফার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার।
কভিড-১৯ মহামারীর কারণে শিল্পটি ২০২০ সালে ১৪ হাজার কোটি ডলার লোকসান দিয়েছিল। এর চার বছর পর ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে এবারের পূর্বাভাসে। এ বিষয়ে আইএটিএর মহাপরিচালক উইলি ওয়ালশ বলেন, ‘এভিয়েশন খাতের পরিবেশ আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে ভালো। বিশেষ করে এশিয়ায় আকাশ পথে ভ্রমণ বেড়েছে।’
তবে ভ্রমণের চাহিদায় শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী উড়োজাহাজ সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়ায় চলতি বছরও এ শিল্প বাধাগ্রস্ত হবে। এ সর্তকবার্তা দিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
আইএটিএর পূর্বাভাস অনুসারে, মাইলপ্রতি ২০২৩ সালের তুলনায় যাত্রীপ্রতি আয় বাড়বে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ, পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গড় ভাড়া বাড়ছে।
তবে কার্গো পরিবহনের ক্ষেত্রে ২০২৪ সালে উল্টো চিত্র দেখা যাবে। মহামারীর সময় আকাশপথে পরিবহন বাড়লেও বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। এ কারণে ২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছর উড়োজাহাজে কার্গো পরিবহন কমবে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
এয়ারলাইনস শিল্প ব্যাপকভাবে ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ও ভোক্তা আস্থার ওপর নির্ভরশীল। বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির জন্য একে লিটমাস টেস্ট হিসেবেও দেখা হয়। এছাড়া সুনির্দিষ্ট উচ্চ খরচ ও আন্তঃসীমান্ত নীতির কারণের খাতটি বিভিন্নভাবে প্রভাবিত।
আইএটিএর মহাপরিচালক জানান, এ শিল্পে মুনাফার পরিমাণ এখনো প্রত্যাশার চেয়ে কম। শিল্পটিতে মাত্র ৩ শতাংশের বেশি মুনাফা দেখা যাচ্ছে। তার মতে, এ শিল্পের পারফরম্যান্স বর্তমানে যেখানে থাকা দরকার তার নিচে রয়েছে।
চীনে আন্তর্জাতিক ভ্রমণে মন্থর পুনরুদ্ধার সত্ত্বেও এশিয়ায় এ শিল্পের মুনাফার পূর্বাভাস তিন গুণ বাড়িয়ে ২২০ কোটি ডলার করেছে আইএটিএ। এছাড়া আগের পূর্বাভাস অপরিবর্তিত থাকা সত্ত্বেও ১ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার মুনাফার পূর্বাভাস নিয়ে উত্তর আমেরিকা সবচেয়ে লাভজনক অঞ্চল হিসেবে রয়ে গেছে। অঞ্চলটিতে জীবনযাত্রা ব্যয়ের চাপ বাড়া সত্ত্বেও এখানে শক্তিশালী ভোক্তা ব্যয় অব্যাহত বলে জানিয়েছে আইএটিএ।
বিশ্বের ৮০ শতাংশ এয়ারলাইনস কোম্পানিটির প্রতিনিধিত্বকারী আইএটিএ বলছে, এয়ারলাইনস সংস্থাগুলো চলতি বছর অপ্রত্যাশিত রক্ষণাবেক্ষণ সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি নির্মিত ইঞ্জিনের জন্য চলতি গ্রীষ্মে কয়েকশ এয়ারবাস হ্যাঙ্গারে বসে থাকবে। মূলত মেরামতজনিত প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে এসব ইঞ্জিন।
এছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম উড়োজাহাজ নির্মাতা এয়ারবাস নতুন করে সরবরাহ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। এ কারণে বছরের দ্বিতীয়ার্ধের সরবরাহ পূর্বপরিকল্পিত আকারে থাকবে কিনা সন্দেহ। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি বোয়িং বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন ধরনের বিপত্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে মার্কিন নিয়ন্ত্রকরা কোম্পানিটির উৎপাদন সীমিত করে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বের এয়ারলাইনস শিল্পে। সূত্র: দি রয়টার্স।