যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রে ২০২৩ সালে এশিয়ার দেশগুলো নতুন রেকর্ড গড়েছে। এ বিনিয়োগের পরিমাণ ৯৮ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার। আর বরাবরের মতো এ বিনিয়োগে নেতৃত্ব স্থানে রয়েছে জাপান। ইউএস ব্যুরো অব ইকোনমিক অ্যানালাইসিসের তথ্যানুসারে, টানা পঞ্চম বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী বিনিয়োগের শীর্ষ উৎস হিসেবে রেকর্ড করেছে এশিয়ার অন্যতম এ অর্থনীতি।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মোট এশীয় বিনিয়োগের বেশির ভাগেরই জোগানদাতা জাপান, এর পরিমাণ ৭৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। অন্যদিকে একই বছরে ৭৫ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করে জাপানের পর দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ কানাডা। এর পরই রয়েছে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের অবস্থান।
যুক্তরাষ্ট্রে এফডিআইয়ের ক্ষেত্রে ২০১৯ সাল থেকে জাপানি কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীরা শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ওই বছরই এশিয়ার দেশটির বিনিয়োগকারীরা প্রথমবারের মতো কানাডাকে ছাড়িয়ে যায়।
অবশ্য সমষ্টিগত বিদেশী বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক উৎস হিসেবে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ অবস্থানে ছিল ইউরোপ। এ অঞ্চলের দেশগুলো ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, যা দেশটির মোট এফডিআইয়ের ৬৫ শতাংশ। এর আগের বছর ইউরোপের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বেড়েছে ১৬ শতাংশ।
সম্প্রতি প্রকাশিত এ এফডিআই ডাটায় যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অধিগ্রহণ, অধিভুক্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, পুনর্বিনিয়োগ ও ঋণদান কার্যকলাপের মতো লেনদেনগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাত ছিল বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকারের শীর্ষে। এ খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত হিসেবে ১১ শতাংশ বিনিয়োগ পেয়েছে আর্থিক ও বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো। উৎপাদন খাতের মধ্যে জাপানের বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় অংশ ছিল রাসায়নিক, পরিবহন সরঞ্জাম, কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিকস খাতে।
বিদেশী কোম্পানি হিসেবে বিনিয়োগ অনুসরণ করা হলে নেদারল্যান্ডস ছিল শীর্ষে। দেশটিতে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এরপর জাপানের বিনিয়োগ ছিল ৬৮ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। তবে চূড়ান্ত সুবিধাভোগী মালিকানা হিসেবে নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগ তুলনামূলক কম ছিল। এর অর্থ হলো ডাচ কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের বেশির ভাগই শেষ পর্যন্ত এমন কোথাও থেকে এসেছে, যা অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আগের বছরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে এফডিআই বাড়লেও ২০২৩ সালে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ কমেছে। এছাড়া কমেছে পূর্ব বিদ্যমান ব্যবসায়িক কার্যকলাপের সম্প্রসারণ এবং বিদেশী সংস্থার নতুন ব্যবসার ওপর বিনিয়োগ। এ ধরনের বিনিয়োগ ২০২২ সালের ২০ হাজার ৬০০ কোটি ডলার থেকে ২৮ শতাংশ কমে গত বছর ১৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার হয়েছে। নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কানাডা ছিল প্রথম স্থানে। দেশটির বিনিয়োগকারীরা ২০২৩ সালের যুক্তরাষ্ট্র ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এরপর জাপানের বিনিয়োগকারীরা খরচ করেছেন ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
এফডিআইয়ের ক্ষেত্রে পরিচিত একটি ধরন হলো গ্রিনফিল্ড ইনভেস্টমেন্ট। এতে সাধারণত প্যারেন্ট কোম্পানিগুলো অন্য দেশের বিনিয়োগের মাধ্যমে সহযোগী কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে।
২০২৩ সালে ইভি ব্যাটারিসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও অন্যান্য উৎপাদন খাতে গ্রিনফিল্ড বিনিয়োগ বেড়েছে, যা ছিল মোট বিনিয়োগের প্রায় ৭১ শতাংশ। এ ধরনের বিনিয়োগে অন্য অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এগিয়ে ছিল এশিয়া-প্যাসিফিকের দেশগুলো।
সাম্প্রতিক বছরে বিনিময় হারের দিক থেকে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে ডলার। নতুন বিনিয়োগগুলোয় অগ্রাধিকার পেয়েছে বিষয়টি।
জাতীয় নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করে মার্কিন সরকার বর্তমানে যেকোনো লেনদেন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে। ভূরাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রে সিএফআইইউএফের পর্যালোচনার পরিধি সম্প্রসারণ করেছে। সেমিকন্ডাক্টর ও বায়োটেকনোলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির খাত, সেই সঙ্গে সামরিক ঘাঁটির মতো জাতীয় নিরাপত্তা অবকাঠামোর কাছাকাছি রিয়েল এস্টেট লেনদেনকে এমন গুরুত্ব দিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।
কমিটির রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, ২০২১ সাল থেকে চীনের বিনিয়োগকারীরা পর্যালোচনার জন্য সিএফআইইউএফের কাছে সর্বাধিক নোটিস দাখিল করেছে, যা মোট সংখ্যার ১৪ শতাংশ। এরপর রয়েছেন সিঙ্গাপুর, কানাডা ও জাপানের বিনিয়োগকারীরা। সূত্র: নিক্কেই এশিয়া।