এশিয়ার অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগসম্পর্কিত নতুন আইন পাস করেছে দেশটির সরকার। এর মাধ্যমে অঞ্চলটিতে করপোরেট খাতে নিয়ন্ত্রণ আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ আইনের অধীনে এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে নয়টি কোম্পানি, যাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে শেল ও এক্সনমবিলের মতো জ্বালানি জায়ান্ট। এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো দেশটিতে মালিকানা বা নেতৃত্ব পরিবর্তন করতে চাইলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।
সিগনিফিকেন্ট ইনভেস্টমেন্টস রিভিউ অ্যাক্ট-২০২৪ বা সংক্ষেপে এসআইআরএ নামের নতুন আইনটির আওতায় দেশটির নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এমন নয়টি কোম্পানির নাম প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসায়িক স্বার্থ ও ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলো বিভিন্ন ধরনের নীতি প্রণয়নে জোর দিয়েছে। যেখানে গুরুত্ব পাচ্ছে বিনিয়োগ ও জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু। নতুন আইন পাস করে সে তালিকায় যোগ দিয়েছে সিঙ্গাপুর।
তালিকায় নাম লেখানো কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক জ্বালানি জায়ান্ট এক্সনমবিল ও শেলের সিঙ্গাপুরভিত্তিক সহযোগী কোম্পানি। রয়েছে সিঙ্গাপুর পেট্রোলিয়াম কোম্পানি ও শেভরনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত সিঙ্গাপুর রিফাইনিং কোম্পানির নামও। তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানি হলো সেম্বকর্প ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সহযোগী সংস্থা সেম্বকর্প স্পেশালাইজড কন্ট্রাকশন এবং প্রতিরক্ষা ও সরবরাহ চেইন সলিউশন কোম্পানি এসটি লজিস্টিকস। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আরো চিহ্নিত হয়েছে এসটি লজিস্টিকের চার সহযোগী সংস্থা এসটি ইঞ্জিনিয়ারিং মেরিন, এসটি ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যান্ড সিস্টেমস, এসটি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিফেন্স এভিয়েশন সার্ভিসেস ও এসটি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজিটাল সিস্টেম।
আইন অনুসারে, তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এসআইআরএ মেনে চলতে হবে। সেখানে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে এমন ব্যক্তিদের এসব কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্তি বিবেচনা করবে দেশটির সরকার। কর্তৃপক্ষ চাইলে ওইসব ব্যক্তির শেয়ার ক্রয়, মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ আটকে দিতে পারবে।
এসআইআরএ আইনে আরো বলা হয়েছে, তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদ স্বেচ্ছায় ভেঙে দিতে বা বিলুপ্তির জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে।
সিঙ্গাপুরে করপোরেট ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক আইন নতুন নয়। সেক্টরাল আইনের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ, ব্যাংকিং ও পরিষেবাসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করে থাকে নগররাষ্ট্রটির সরকার। নতুন আইনটিও এগুলোর পরিপূরক হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জ্বালানি সংস্থা শেল সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার চন্দ্র আসরি ও পণ্য সরবরাহকারী কোম্পানি গ্লেনকোরের মধ্যে একটি যৌথ উদ্যোগে সিঙ্গাপুরের সম্পত্তি বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে। তবে চুক্তিটি নিয়ন্ত্রণের অনুমোদন সাপেক্ষ বলে জানিয়েছে তারা। এক্ষেত্রে নতুন আইন বাধা হয়ে দাঁড়াবে কিনা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শেলের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এসআইআরএ আইনের আওতায় শেলের ওপর সিঙ্গাপুরের নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করি। বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম রয়েছে এমন একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা একই ধরনের নীতির সঙ্গে কাজ করেছি। আমরা যে দেশে কাজ করি সেখানে বিদ্যমান আইন ও নির্দেশিকা মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
অন্যদিকে এক্সনমবিলের এক মুখপাত্র বলেছেন,‘আমরা সিগনিফিকেন্ট ইনভেস্টমেন্টস রিভিউ আইনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত এবং আইনের সব ধারা মেনে চলব।’ সূত্র: দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।