লোহিত সাগরে চলাচলকারী জাহাজে হুথি বিদ্রোহীদের আক্রমণ শুরু করার পর থেকে ২০০ দিনের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। রুটটি সুরক্ষিত করার একাধিক উদ্যোগ এরই মধ্যে ব্যর্থ হয়েছে এবং শিগগিরই সচল হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে এশিয়া-ইউরোপের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী সুয়েজ খাল রুট কার্যত অচল হয়ে আছে।
লোহিত সাগরের ২০ মাইল প্রশস্ত সরু প্রণালি বাব এল-মানদেব। জিবুতি ও ইয়েমেনের মধ্যবর্তী এ বাণিজ্যপথের জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে হুথি বিদ্রোহীরা। ফলে পণ্যবাহী জাহাজকে লোহিত সাগর বা সুয়েজ খাল এড়িয়ে বেছে নিতে হচ্ছে আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ। এতে প্রতিটি যাত্রায় অতিরিক্ত যোগ হচ্ছে চার হাজার মাইলের ঘুরপথ, যা পরিবহনের সময় ও খরচ ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।
লোহিত সাগরের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার পর ভারত থেকে ইউরোপে পরিবহন খরচ চার-পাঁচ গুণ বেড়েছে। কনটেইনারপ্রতি খরচ দাঁড়িয়েছে ৪-৫ হাজার ডলার। এসব তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় একটি ফরওয়ার্ডিং সংস্থার কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, ‘লোহিত সাগরের পরিস্থিতির সমাধানের কোনো লক্ষণ নেই, বরং সামনে আরো খারাপ হতে চলেছে।’
একটি বৃহৎ চামড়া কোম্পানির কর্মকর্তা বলেন, ‘জাহাজ ভাড়া পাঁচ-ছয় গুণ বেড়েছে, যা রফতানিকারকদের খুবই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এছাড়া সিঙ্গাপুর ও পোর্ট ক্ল্যাংয়ের মতো ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে জট আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।’
শুরুর দিকে হুথিরা দাবি করেছিল, গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় তারা এ হামলা চালাচ্ছে। দীর্ঘায়িত গাজার যুদ্ধের মাঝে গত মাসেও ইয়েমেনভিত্তিক গ্রুপটি বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলা চালিয়েছিল, এর মধ্যে একটি ডুবে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিপিং পরামর্শক জো মনরো সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, ‘হুথিরা আক্রমণের গতি কমিয়ে দেয়নি বরং তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। এখন আকাশপথের পরিবর্তে সামুদ্রিক ড্রোন দিয়ে জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।’
এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বব্যাপী কনটেইনার বাণিজ্যের ৩০ শতাংশ সুয়েজ খাল দিয়ে চলাচল করে। এ কারণে লোহিত সাগরে শিপিং সংকট সরবরাহের চেইনকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করেছে।
কোম্পানিটির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নোরা সেজেনটিভানি বলেন, ‘ডেলিভারিতে বেশি সময় নিলে তা সরবরাহ চেইনকে ধাক্কা দেয়। আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপের আশপাশের নতুন রুটে ট্রানজিট করায় সময় প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে, যা বৈশ্বিক কনটেইনার শিপিং ক্ষমতার প্রায় ৯ শতাংশ হ্রাস বোঝায়।’ সূত্র: দ্য হিন্দু।