১ কোটির বেশি টাকা ডিপোজিট আছে, ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে ১৩,৮৮১ জন।
প্রতি কাঠা ২৫- ৫২ লাখ টাকার মধ্যে পূর্বাচলে হাউজিং প্লট বরাদ্দ দিচ্ছে ইউএস-বাংলা অ্যাসেটস।
এসব প্লট পাওয়া যাচ্ছে ৩ কাঠা থেকে ১ বিঘার মধ্যে। এসব প্লটের নির্ধারিত দাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোম্পানিটির টার্গেট উচ্চ আয়ের গ্রাহকরা। উচ্চবিত্ত গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে ২০ হাজার প্লটের এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে হাউজিং কোম্পানিটি।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পাঁচ দিনব্যাপী মেলার প্রথম চারদিনেই গ্রাহকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছে ইউএস-বাংলা, এখনি ৩৫টি বুকিং পেয়েছে কোম্পানিটি।
মেলা প্রাঙ্গনে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে ইউএস-বাংলা অ্যাসেটসের সিনিয়র ম্যানেজার এমআই মঈন বলেন, গ্রাহকদের সাড়া দেখে বোঝা যাচ্ছে মানুষের হাতে টাকা আছে।
তিনি জানান, মহামারির আগে ন্যূনতম দাম ছিল ৯ লাখ, যা এখন তিনগুণ বেড়েছে। তারপরও আগের চেয়ে বিক্রি বেড়েছে।
দাম বাড়ার পরও বিলাসবহুল হাউজিং প্লট আর ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়ছে। পূর্বাচলের মতো উপশহরে হাউজিং প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী মানুষ। এমআই মঈন জানান, সবুজ পরিবেশ, লেক, পার্ক, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও সুপারমার্কেটসহ বিলাসবহুল জীবন যাপনের সব উপাদানে থাকার কারণেই এই আগ্রহ।
অন্যান্য রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোও টার্গেটও ধনী গ্রাহকরা। পেন্টহাউজ, বিশেষ ডিজাইনের অ্যাপার্ট্মেন্ট, ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট এখন জনপ্রিয়। ঢাকার উপকণ্ঠে পূর্বাচল-উত্তরার মতো নতুন গড়ে ওঠা উপশহর এসব গ্রাহকদের প্রধান আকর্ষণ।
এছাড়া, ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকে আছে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ধানমন্ডি।
আরেকটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি রূপায়নও রিহ্যাব মেলায় উচ্চ আয়ের গ্রাহকদের জন্য অ্যাপার্ট্মেন্ট নিয়ে এসেছে।
উত্তরায় এ প্রকল্পের অ্যাপার্ট্মেন্টের আকার ন্যূনতম দুই হাজার বর্গফুট থেকে সর্বোচ্চ আট হাজার বর্গফুট। দাম প্রতি বর্গফুট ১১,৮০০ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
রূপায়নের সহকারি ম্যানেজার বায়েজিদ হাসান বলেন, উচ্চ আয়ের গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখেই ১৪৪ বিঘা জমিতে উত্তরার এই প্রকল্প গড়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, মহামারির পর অ্যাপার্টমেন্টের দাম প্রতি বর্গফুটে ৩ হাজার বাড়লেও চাহিদা বেশি ছিল, মেলায় গ্রাহকদের সাড়াও ছিল সন্তোষজনক।
মেলায় নিজেদের নতুন হাউজিং প্রকল্প নিয়ে আসে নাভানা রিয়েল এস্টেটও। গুলশানের এ প্রকল্পের অ্যাপার্ট্মেন্টগুলোর আকার ৪-৫ হাজার বর্গফুট, প্রতি বর্গফুটের দাম কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা।
মেলায় নাভানার স্টলে কোম্পানিটির কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, মহামারির প্রভাব কমে আসার পর হাউজিং ব্যবসা বেশ ভালো চলছে। মানুষ নিজেদের জমানো টাকায় আবাসন খাতে বিনিয়োগ করছে।
এছাড়া, মহামারির সময় দেশে বেড়েছে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যাও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১ কোটির বেশি টাকা ডিপোজিট আছে, ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে ১৩,৮৮১ জন।
গত বছরের জুনের পর ১ কোটির বেশি টাকা ডিপোজিট আছে এমন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল ৮৬,০৩৭টি। চলতি বছর এ সংখ্যা বেড়ে ৯৯,৯১৮ এ দাঁড়িয়েছে।
দাম বাড়ছে কেন?
রেডিমেড ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়া। মহামারির পর গ্রাহকদের হাতে নগদ অর্থের যোগান থাকাও দাম বাড়ার কারণ বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
ঋণদাতারাও ৭.৫ শতাংশ অর্থায়নের অফার দিচ্ছে যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন। একারণেও ফ্ল্যাট কিনতে প্রলুব্ধ হচ্ছেন ক্রেতারা।
ইস্টার্ন হাউজিংয়ের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ ফরহাদুজ্জামান বলেন, মহামারির কারণে বিনিয়োগের সুযোগ কমে এসেছে। কম সুদে ডিপোজিট রাখার সুবিধা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া, আবাসনে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় এ খাতের বিনিয়োগ বাড়ছে।
চাহিদা বাড়লেও মহামারির সময় নতুন প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে আগানোয় চাহিদার সঙ্গে সরবরাহ বাড়েনি। নতুন ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে (ডিএপি) ‘ওয়েট-অ্যান্ড-সি’ নীতি হাতে নিয়েছে হাউজিং কোম্পানিগুলো।
ফরহাদুজ্জামান বলেন, বেশি চাহিদা আর কম সরবরাহের মধ্যে ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে।
কিউব হোল্ডিংসের ডেপুটি ম্যানেজার মো শফিকুর রহমান সবুজ বলেন, মহামারির পর ছোট অ্যাপার্ট্মেন্টের দামও প্রতি বর্গফুটে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা বেড়েছে।
কোম্পানিটি বসুন্ধরায় ২ হাজার থেকে আড়াই হাজারের অ্যাপার্ট্মেন্ট বিক্রি করছে, দাম প্রতি বর্গফুট ন্যূনতম নয় হাজার থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা।