র৵াংগ্স প্রপার্টিজের ডিজাইন ও পরিকল্পনার কাজে অনেক বছর যুক্ত থাকার পর ২০১৫ সালে একদল স্থপতি মিলে গড়ে তোলেন ইনস্পেস আর্কিটেক্টস লিমিটেড। আবাসন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদুর রহমান। তিন প্রিন্সিপাল আর্কিটেক্ট হিমেল কুমার সাহা, ওয়াহিদ আহমেদ ও আয়েশা শফিকের সঙ্গে আছে ৬৫ জনের অভিজ্ঞ একটি দল। বুদ্ধিবৃত্তি ও সৃজনশীলতার সমন্বয়ে আট বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়মিতই তাঁরা তৈরি করছে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনা। সবুজ পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিজেদের স্থাপনায় ভার্টিক্যাল গার্ডেন, ল্যান্ডস্কেপিং, সবুজ ফেকাড ও রুফটপ গার্ডেনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে ইনস্পেস আর্কিটেক্ট। সবুজ এই অংশগুলো ছাড়া আধুনিক বাসস্থান অপরিপূর্ণ, মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা।
পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবন যখন ভরসার নাম
আধুনিক স্থাপত্যে পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনকে কেন্দ্রে রেখে কাজ করার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো শহরে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সেই ধারায় কাজ করছে ইনস্পেস আর্কিটেক্টস। তাদের বিভিন্ন ভবন বা স্থাপনার নকশায় পরিবেশের পাশাপাশি অগ্রাধিকার পায় সবুজ। শুধু ফুলের টব বা ছাদবাগান নয়; ভবনের প্রতিটি স্তরে মেলে সবুজের দেখা। ইনস্পেসের ডিজাইন টেবিল থেকে আসা ডায়োরামা, মিরান্ডা, মেরিসা, রিফ্লেকশন, পার্ক টেরেস, মেমোরি ৭১, হোয়াইট ওকসহ বিভিন্ন ভবনের দিকে তাকালেই প্রশান্তি অনুভব করবেন যে কেউ। প্রাকৃতিক উপাদান ও উদ্ভিদের ব্যবহার ভবনের অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে রাখে স্বাস্থ্যকর, বায়ুপ্রবাহকে করে অবাধ, সেই সঙ্গে কমায় শক্তির খরচ। তাই ইনস্পেস আর্কিটেক্টসের ভবন নির্মাণের একটি কেন্দ্রীয় ভাবনা হয়ে উঠেছে এখন সবুজ নকশা।
নকশায় ভবিষ্যৎ অন্দরে মিনিমালিজম
ইনস্পেস আর্কিটেক্টসের নকশা করা ডায়োরামা ভবনটি ঘুরে দেখছিলাম। গুলশানে নির্মাণ করা হয়েছে এই আবাসিক ভবন। বারান্দায় সবুজের উপস্থিতি। গুলশানের মতো ব্যস্ত এলাকায়ও বাসিন্দারা পাচ্ছেন প্রকৃতির স্পর্শ। ইনস্পেসের স্থপতি ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘সবুজ স্থাপনায় মিনিমালিস্ট ডিজাইন, স্থাপত্যশিল্পে নতুন এক বিপ্লব আনতে কাজ করছি আমরা। সারা বিশ্বেই এখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভবনের ডিজাইন করা হচ্ছে। একই ভাবনা নিয়ে আমরাও বাংলাদেশে কাজ করছি।’
স্থাপত্যের এক নতুন ধারা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন মিনিমালিজম। ইনস্পেস আর্কিটেক্টসের কাজেও অতিরিক্ত জটিলতা আর অপ্রয়োজনীয় সাজসজ্জার বদলে সহজ ও ব্যবহারিক ভাবনাই দেখা যায় বেশি। ভবনের ইন্টেরিয়র ডিজাইনে প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের প্রবাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভেতরের আলোক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। প্রাকৃতিক উপাদানের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে করে ভবনের পরিবেশগত প্রভাব যেমন ঠিক থাকছে, তেমনি ব্যবহারকারীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ফেলছে ইতিবাচক প্রভাব।
‘পরিবেশের ভারসাম্যের বিষয়টি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ’
স্থপতি ওয়াহিদুর রহমান
শৈশব থেকেই নকশা ও স্থাপত্যের প্রতি আমার গভীর আকর্ষণ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় আরও গভীরতর হয়েছে সেই আগ্রহ। র৵াংগ্স প্রপার্টিজ লিমিটেডে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, স্থাপত্য কেবল ভবন নির্মাণেরই নয়, জীবনযাপনেরও অংশ। ইনস্পেস আর্কিটেক্টসে আমরা নান্দনিকতা, পরিবেশবান্ধব নকশা, ফাংশনাল ডিটেইল ডিজাইন ও স্থায়িত্বের ওপর গুরুত্ব দিই।
প্রতিটি প্রকল্পে শুধু বসবাসের চাহিদাই মেটাই না, পাশাপাশি ভবনের সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্যের দিকটাও আমাদের খেয়ালে থাকে। আমরা এমন ভবন নির্মাণে বিশ্বাসী, যা দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশ ও মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমাদের নকশায় প্রাকৃতিক আলো–বাতাসের প্রবাহ এবং আধুনিক উপকরণের ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এতে করে শক্তি খরচ হয় কম ও বাড়ে ভবনের স্থায়িত্ব। আমাদের লক্ষ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সবুজ, সুন্দর আর টেকসই একটি পরিবেশ তৈরি করা।
প্রতিটি স্থাপনার নকশায় আমরা ত্রিভুজ বা চতুর্ভুজের মতো সরল কিন্তু কার্যকর জ্যামিতিক বিন্যাস ব্যবহার করি, যা দৃষ্টিনন্দন ও ব্যবহারের উপযোগী। ভবনের ভেতরের স্থানগুলোকে আরও উন্মুক্ত, আরামদায়ক ও ব্যবহারবান্ধব করতে ফাংশনাল ডিজাইন করি।
সবুজ ফেকাড বা গাছপালায় আচ্ছাদিত ভবনের বাইরের অংশ পরিবেশবান্ধব নকশার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই পদ্ধতিতে শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, বাতাসের গুণগত মান ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখা যায়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে সবুজায়ন ও ফাংশনাল ডিজাইনের ভবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনসংখ্যা ও পরিবেশগত চাপের কথা মাথায় রেখে প্রতিটি নকশায় আমরা গ্রাহকের নিরাপত্তা ও পরিবেশের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।