শীত চলে এসেছে। সাথে শুরু হয়ে গেছে শীতের প্রস্তুতির ছোটাছুটিও। শীতের মরসুমে ঘর গরম রাখতে অনেক মানুষ নানা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে। ঠান্ডায় রুম হিটার ও ব্লোয়ার দেখা যায়। রুম হিটার এবং ব্লোয়ার ব্যবহার করার ফলে কেবল উচ্চ বিদ্যুতের বিল আসে না, স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কিছু সহজ পদ্ধতির সাহায্যে রুম হিটার ও ব্লোয়ার ছাড়াও ঘর গরম রাখতে পারেন।
হিমশীতল মৌসুমে বাড়িতে নিজেকে উষ্ণ এবং আরামে রাখাই সবার উদ্দেশ্য। তবে সেটা করতে যথেষ্ট প্রস্তুতির দরকার। এই প্রস্তুতির জন্য কিছু কেনাকাটা প্রয়োজন, যা হয়ে উঠতে পারে ব্যয়বহুল। যেমন, শীতকালে ঘরকে উষ্ণ রাখার অন্যতম সাধারণ উপায়গুলোর একটি হচ্ছে একটি হিটিং সিস্টেম ব্যবহার করা। কিন্তু হিটিং সিস্টেমের মতো এসব উপায় ব্যবহার করলে প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যাতে পারে আপনার পরিষেবা বিল। কিন্তু শীতে উষ্ণ থাকতে চান, আবার পরিষেবা বিলেও অতিরিক্ত খরচ করতে চান না – তাহলে কী করবেন? চিন্তা নেই, উত্তর আছে আমাদের কাছে। পুরো বাড়িটি উষ্ণ রাখুন, কিংবা কিছু নির্দিষ্ট রুম – ঘরকে আরামদায়ক অবস্থায় রাখার প্রচুর স্বল্প ব্যয়ের উপায় আছে। নিজের খরচ না বাড়িয়ে শীতকালে আরামে থাকার জন্য পড়ে নিতে পারেন পাঁচটি দুর্দান্ত টিপস:
ফয়েল পেপারের ব্যবহার
শীতকালে ঘর গরম রাখতে আপনি ফয়েল পেপার ব্যবহার করতে পারেন
শীতে ঘর উষ্ণ রাখার উপায়গুলো – র মধ্যে এটি দারুণ কার্যকরী। ফয়েল পেপার মূলত গোটানো অ্যালুমিনিয়াম শীট, যা খাবারের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়। অ্যালুমিনিয়াম একটি দুর্দান্ত তাপ পরিবাহক। তাপ প্রতিফলনের ক্ষেত্রেও এটা দারুণভাবে কাজে আসে। এর মানে এই, শীতকালে ঘর গরম রাখতে আপনি ফয়েল পেপার ব্যবহার করতে পারেন। রান্নাঘরের দেয়ালে কিছু ফয়েল পেপার লাগিয়ে রাখুন। বিশেষ করে চুলার আশেপাশে। অ্যালুমিনিয়ামের প্রতিফলনের ক্ষমতার কারণে দেয়ালের মধ্যে দিয়ে তাপ চলে যেতে পারে না, বরং ঘরে প্রতিফলিত হতে বাধ্য হয়।
বিছানা উষ্ণ রাখতে গরম পানির বোতল
গরম পানির বোতল যেহেতু পানিকে গরম রাখে, আপনার বিছানাও এর তাপে উষ্ণ হয়ে উঠবে
রাতের বেলা ঠান্ডা বিছানায় ঘুমোতে কারোই ভালো লাগে না। আর শীতে ঘর উষ্ণ রাখার উপায়গুলো এর মধ্যে গরম পানির বোতল ভীষণ উপযোগী। শীতকালে বিছানা অনেকক্ষণ খালি থাকলে সেটা খুবই ঠান্ডা হয়ে যায়। কিন্তু বিছানা আরামদায়ক এবং উষ্ণ করে রাখার একটা দারুণ উপায় আছে। একটা গরম পানির বোতল ভরে কম্বলের নিচে রেখে দিন। গরম পানির বোতলগুলো সাধারণত রাবার দিয়ে বানানো হয়। এবং এই রাবারের তাপ ধরে ক্ষমতা পানিকে সহজে ঠান্ডা হয়ে যেতে দেয় না। এর মানে, গরম পানির বোতল যেহেতু পানিকে গরম রাখে, আপনার বিছানাও এর তাপে উষ্ণ হয়ে উঠবে।
বাবল র্যাপ ব্যবহার করুন
বাতাসের যেহেতু তাপ আটকে রাখার অসাধারণ ক্ষমতা আছে, বাবল র্যাপও তাই ঘর উষ্ণ রাখতে দারুণভাবে কাজে আসতে পারে
শীতে ঘর উষ্ণ রাখার উপায়গুলো প্রয়োগ করতে চাইলে, বাবল র্যাপকে সহজ উপায় হিসেবে বেছে নিতে পারেন। শুধু প্যাকিংয়ের কাজে নয়, বাবল র্যাপ শীতকালে ঘর গরম রাখার কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে। বাবল র্যাপ আসলে কিছুই না, শুধু প্লাস্টিকের শীটের ভেতর আটকে রাখা বাতাসের বুদবুদ। বাতাসের যেহেতু তাপ আটকে রাখার অসাধারণ ক্ষমতা আছে, বাবল র্যাপও তাই ঘর উষ্ণ রাখতে দারুণভাবে কাজে আসতে পারে। যেকোনো আবদ্ধ জায়গায় বাতাস তাপমাত্রা ধরে রাখার চেষ্টা করে। কারণ, প্রতিটি বুদবুদের ভেতরে বাতাসের অণুগুলো অবাধে ঘোরাফেরা করে, যার কারণে তাপ স্থানান্তরের কাজটি জটিল হয়ে যায়। এভাবে তাপমাত্রা ধীর গতিতে বদলায়।
তাই তাপ রোধ করতে চাইলে আপনার জানালাগুলোয় একটি করে বাবল র্যাপের শিট ঝুলিয়ে রাখুন। বাবল র্যাপ ৫০% পর্যন্ত তাপ রোধ কমাতে পারে। এটি আপনার পরিষেবা বিলও বাঁচিয়ে দিবে।
টেরা কোটা হিটার
সারা বাসায় সেন্ট্রাল হিটিং সিস্টেম লাগানো কিংবা প্রতি রুমের জন্য আলাদা পোর্টেবল হিটার কেনা আপনাকে ঠান্ডা বাসা থেকে বাঁচাতে পারে। কিন্তু তাতে আপনার মানিব্যাগের উপর চাপ পড়তে পারে বাজেভাবে, সাথে পরিষেবা বিল তো আছেই। বিল সংক্রান্ত বিষয়ে বেশি খরচ করতে না চাইলে আপনার জন্য সমাধান হয়ে উঠতে পারে টেরা কোটা হিটার। শুধু একটি টেরা কোটা ফুলের পাত্র একটি মোমবাতির উপর উল্টো করে বসিয়ে দিন। পাত্রটিকে দুটি পাথর বা অন্য কিছুর সাহায্যে একটু উঁচুতে বসাতে হবে, যাতে মোমবাতি জ্বলার মতো বাতাস পেতে পারে। এভাবে মোমবাতিটির কারণে টেরা কোটা পাত্রটি উত্তপ্ত হয়ে উঠবে এবং পাত্রটি ঘরকে উষ্ণ রাখবে।
পর্দার ব্যবহারে বুদ্ধির পরিচয়
শীতকালে কখন পর্দা খুলে রাখবেন, সেই ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে
পর্দা একটি অসাধারণ জিনিস। শুধু একটি জায়গার সৌন্দর্য বাড়ানো ছাড়াও এটি অনেক কাজে ব্যবহার করা যায়। একটি বাসায় কিংবা রুমে কতখানি আলো এবং বাতাস ঢুকবে, সেটা পর্দাই নিয়ন্ত্রণ করে। তাই শীতকালে কখন পর্দা খুলে রাখবেন, সেই ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। রোদ থাকার সময়ে পর্দা খুলে রাখলে ঘরে আলো ঢুকবে, কিন্তু রাতে পর্দা বন্ধ রাখাই ভালো। ঘরে ভালোমতো আলো ঢুকতে পারলে তা সারা বাসাকেই উষ্ণ রাখতে সাহায্য করবে। রাতে আবার পর্দা বন্ধ করে দিলে এই উষ্ণতা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে না।
এই সবগুলোই খুব সহজ ডিআইওয়াই প্রোজেক্ট, এবং এগুলোর ব্যবস্থা করতে একটি শুক্র কিংবা শনিবারের বিকালই যথেষ্ট। শীতকালে ঘর উষ্ণ রাখতে এই টিপসগুলো সবচেয়ে সহজ, কার্যকরী এবং সস্তা উপায়ের কয়েকটি। এগুলো আপনার ঘর উষ্ণ রাখার পাশাপাশি অর্থ বাঁচাতেও সাহায্য করবে।