প্রত্যেক মানুষ একটি সুন্দর ও নিরাপদ বাড়ির স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু নিরাপদ বাড়ি কীভাবে বানাবেন তা অনেকেই জানেন না। নিরাপদ বাড়ি তৈরির জন্য মাটি পরীক্ষা ও স্ট্রাকচার বা ফাউন্ডেশন, বাড়ির ডিজাইন, ভালো মানের রড, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার আবশ্যক।
তবে এ বিষয়ে বেশির ভাগ বাড়ির মালিকের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা প্রতারিত হচ্ছেন। জেনে রাখা ভালো, সঠিক নিয়ম না মেনে যত্রতত্র বাড়ি বানালে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
নিরাপদ বাড়ি বানাতে আপনি ঘরে বসেই বই পড়ে প্রাথমিক সব তথ্য জানতে পারবেন। প্রয়োজনে আমাদের সহায়তা নিয়ে পছন্দের প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগও করে নিতে পারবেন। নিরাপদ বাড়ির বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী (সিভিল, বুয়েট, ঢাকা)
আসুন জেনে নেই স্বপ্নের নিরাপদ বাড়ি বানাতে করণীয়।
মাটি পরীক্ষা ও বাড়ির স্ট্রাকচার
নিরাপদ বাড়ি নির্মাণের প্রথম শর্ত দুটি। মাটি পরীক্ষা ও বাড়ির স্ট্রাকচার। এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নেয়া জরুরি। এই দুটি বিষয়ের সঙ্গে নো কমপ্রোমাইজ।
রড, সিমেন্ট ও বালি
ভালো মানের রড, সিমেন্ট ও বালি চেনা বাড়ির মালিকদের ক্ষেত্রে একটু জটিল ব্যাপার। কারণ সব কোম্পানি বলে থাকে আমার পণ্যগুলো বুয়েট থেকে পরীক্ষিত। তবে এক্ষেত্রে একজন ভালো ইঞ্জিনিয়ার কিংবা কোনো কনস্ট্রাকশন কোম্পানির পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
জমি নির্বাচন
আয়তকার অথবা বর্গাকৃতি জমি বাড়ি নির্মাণের জন্য ভালো। এ ধরনের জমিতে বাড়ি বানালে জায়গার অপচয় হয় না। এছাড়া বাড়ির প্ল্যান (নকশা) করার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।
ভূমিকম্প
ভূমিকম্পের প্রস্তুতিসহ বাড়ি বানাতে হলে বাড়ির প্রতিটি ফ্লোরের ভারবহন ক্ষমতার সামঞ্জস্য রাখতে হবে। বাড়ি নির্মাতারা ভারবহন কিংবা লোড রেয়ারিং ক্ষমতা বের করার হিসাবটি জানেন না। বাড়ির নিচতলা, দোতলা ও তিনতলা এমনকি চতুর্থ তলাসহ সবকটি ফ্লোরের ভারবহন ক্ষমতার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। তাহলেই বাড়ি বা ওই ভবন অনেকটা ভূমিকম্প সহনীয় হবে।
ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড
সরকার বলছে ভূমিকম্প এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড মেনে চলা। ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড মেনে চললে মোটামুটি তীব্র মাত্রার, এমনকি ৮ রিখটার স্কেল মাত্রার ভূমিকম্প হলেও বাড়ি টিকে থাকবে। তবে বিল্ডিং কোড মেনে চললে ৫ থেকে ৭ ভাগ খরচ বেশি পড়বে।
জলাশয়ের বাড়ি নির্মাণ
জলাশয়ের বাড়ি নির্মাণ করলে শতভাগ ঝুঁকি রয়েছে। যদি মাটি পরীক্ষা করা না হয় তাহলে জলাশয় কেন যে কোনো ভূমিতে ভূমিকম্পের সময় ভবন হেলে পড়া কিংবা ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
সাধ ও সাধ্য
সাধ ও সাধ্যের মধ্যে বাড়ি বানাতে চাইলে অর্থ উপযোগী সুন্দর পরিকল্পনা প্রয়োজন। বেশির ভাগ বাড়ির মালিকরা এ বিষয়ে কোনো পরামর্শ নিতে চান না। তারা নিজেরাই ইঞ্জিনিয়ারদের ওপর বুঝে না বুঝে বিভিন্ন বিষয় চাপিয়ে দেন। একজন ইঞ্জিনিয়ার চাইলে ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ ব্যয় কমাতে পারেন।
বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস
বাড়ির নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। বাড়ি নির্মাণের সময় বাড়িতে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের জন্য যেসব সরঞ্জাম কেনা হয়, তা যাচাই-বাছাই করতে হবে। সব সময় ভালো মানের পণ্য কিনতে হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ
পরিকল্পিত একটি বাড়ি নির্মাণের পর তার স্থায়িত্বকাল ১০০-১৫০ বছর হয়ে থাকে। এর মানে এটি নয় যে, এই সময়ের পর সেটি কি ধ্বংস হয়ে যাবে? ঠিক তা নয়। সময়মতো সংস্কার করা হলে স্থায়িত্বকাল আরও সুসংহত ও দীর্ঘ হওয়াটা স্বাভাবিক।
লেখক : ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী
বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার- সিভিল, বুয়েট, ঢাকা