জাপানে সুদহার ১৭ বছরের সর্বোচ্চে উঠে এসেছে। মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর দেশটির আবাসন খাত নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে বিদেশী পর্যটকদের সামনে রেখে হোটেল খাতে বিনিয়োগ বাড়বে বলে ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।
আবাসন খাতের বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান জোনস ল্যাং লাসালের (জেএলএল) গবেষণা বিভাগের সিনিয়র পরিচালক ইউটো ওহিগাশি। তিনি বলেন, ‘গত বছরের মতো না হলেও চলতি বছর ওয়্যারহাউজের তুলনায় হোটেল ও অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বেশি থাকবে।’
সঙ্গে যোগ করেন, ‘ক্রমবর্ধমান সুদহারের কারণে বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি প্রভাবিত হননি। বরং বিদেশের আবাসন খাতে তারা আরো বেশি বিনিয়োগ করতে সক্ষম।’
ক্রমাগত মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা ও যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘস্থায়ী কঠোর মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের বিষয়টি জাপানের আর্থিক বাজারের ওপর চাপ তৈরি করছে। তবে দেশটির আবাসন খাত এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মিৎসুবিশি ইউএফজে ট্রাস্ট অ্যান্ড ব্যাংকিংয়ের (এমইউটিবি) বিশ্লেষক ইয়োশিকাজু ফুনাকুবো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান সুদহার সহসাই কমছে না। আর এটি জাপানের আবাসন খাতের জন্য ইতিবাচক।’
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগের দিক থেকে জাপানের আবাসন খাত ৪৪ শতাংশ সংকোচনের মধ্য দিয়ে গেছে। গত বছর নিম্ন সুদহারের কারণে বিনিয়োগ ৪ শতাংশ বেড়েছে। ইয়োশিকাজু ফুনাকুবো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি সুদহার কমিয়ে দেয় তাহলে জাপানের বাজার আকর্ষণ হারাবে।’
জেএলএলের তথ্যানুযায়ী, জাপানের আবাসন খাতে মোট বিনিয়োগের ২০-২৫ শতাংশ বিদেশী। বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা এ খাতে তাদের অবদান আরো বাড়াতে চাইছে। এমইউটিবির ফুনাকুবো বলেন, ‘তাদের কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাজার কার্যক্রম নির্ধারিত হয়ে থাকে।’
জাপানে শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুরের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল জিআইসি। প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ব্ল্যাকস্টোনের কাছ থেকে বড় পরিসরে ওয়্যারহাউজ কিনেছে। জাপানের বাজার অবস্থা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইউটো ওহিগাশি জানান, বাজারমূল্যের দিক থেকে বতর্মানে সম্পত্তির দাম ক্রমেই ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। যে কারণে সম্পদের ধরন ও অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ ব্যয় করবে বিনিয়োগকারীরা। কোন ধরনের আবাসন কী পরিমাণ আয় এনে দিতে পারবে সে বিষয়টিও তারা নজরে রাখবে।
ডলার ও ইয়েনের বিনিময় হার আবাসন খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মিজুহো সিকিউরিটিজের সিনিয়র ক্রেডিট বিশ্লেষক কোজি ইশিজাকি উল্লেখ করেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সস্তা ইয়েনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। ইয়েনের বিনিময় হার কম থাকলে সম্পদ ক্রয়ে খরচ কম হবে। এটি অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি হোটেল খাতকেও এগিয়ে নিয়ে এসেছে।
মিজুহোর ইশিজাকির পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছর জাপানের হোটেল ও আবাসন খাতে বিনিয়োগের হার খানিকটা বাড়বে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকদের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে জাপানের রিয়েল এস্টেট খাতে বিদেশী বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। কিন্তু ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) তা পুনরায় বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে লজিস্টিডের কাছ থেকে ২৯টি ওয়্যারহাউজ কিনে নিয়েছে কেকেআর মালিকানাধীন একটি রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট। সূত্র: নিক্কেই এশিয়া।