মানুষ জমানো টাকার নিরাপত্তা চায়। পাশাপাশি চায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়তি মুনাফাও। দিন শেষে সবার চাওয়া সময়মতো টাকা ফেরত পাওয়া। টাকাও নিরাপদ থাকবে, আবার ভালো মুনাফাও মিলবে-এমন আর্থিক পণ্য দেশে খুব বেশি নেই।
এ কারণে সাধারণ মানুষের কাছে সঞ্চয়ের জন্য এখনো প্রথম পছন্দ সঞ্চয়পত্র। যদিও সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানোর ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। আবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ কর কর্তন করে সরকার।
এ জন্য নিরাপদ বিনিয়োগ ও ভালো মুনাফা পেতে বিনিয়োগের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড। সঞ্চয়পত্রের মতো বিল ও বন্ড দিয়ে সরকার ঋণ নিয়ে থাকে। ব্যাংকের সুদহার বাড়তে থাকায় এসব পণ্যেরও সুদহার এখন ঊর্ধ্বমুখী। এমনকি ব্যাংকের চেয়েও বেশি সুদ মিলছে কোনো কোনো বিল-বন্ডে। পাশাপাশি এসব পণ্যের বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা পাওয়া যায়, তা থেকে কর কর্তন করা হয় ৫ শতাংশ।
আবার মুনাফার টাকাও পাওয়া যায় বিভিন্ন মেয়াদে। তিন মাসের জন্য বিনিয়োগ উপযোগী পণ্যও রয়েছে। সরকারের পক্ষে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই এই বিনিয়োগকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
দেশের সব শ্রেণি-পেশার নাগরিক এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। অন্যান্য বন্ডের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের একটি ঊর্ধ্বসীমা থাকে। কিন্তু ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। তাই এ বন্ডে আপনি যত খুশি তত বিনিয়োগ করতে পারবেন।
কীভাবে কিনবেন বিল ও বন্ড
বর্তমানে ব্যাংক, পুঁজিবাজার, ব্রোকারেজ হাউস ও বিনিয়োগ ব্যাংক থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ড কেনার সুযোগ রয়েছে। তবে সব ব্যাংক এই সেবা দেয় না। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োজিত ডিলার ব্যাংকই ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে। পাশাপাশি সহযোগী কিছু ব্যাংকও এই সেবা দিয়ে থাকে। তাই বিনিয়োগের আগে খোঁজ নিতে হবে, যে ব্যাংকে আপনার হিসাব রয়েছে, ওই ব্যাংক ট্রেজারি পণ্য বিক্রি করে কি না।
যদি না করে, তাহলে যে ব্যাংক ট্রেজারি পণ্য বিক্রি করে, সেই ব্যাংকে হিসাব খুলে কিনতে হবে। আর শেয়ারবাজার থেকে কেনার ক্ষেত্রে আপনার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও হিসাব থাকতে হবে। মূলত ট্রেজারি ব্যাংকের মাধ্যমে কিনতে আপনার নামে বিপি হিসাব খুলতে হবে। দেশে ট্রেজারি ব্যাংক রয়েছে ২৪টি। এর মাধ্যমে বিল ও বন্ড দুটোই কেনা যায়। শেয়ারবাজারের মাধ্যমে শুধু বন্ড কেনা যায়।
আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে-আপনি ব্যাংক নাকি শেয়ারবাজার থেকে ট্রেজারি পণ্য কিনবেন। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ট্রেজারি বন্ডের অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু ১০০ টাকা অর্থাৎ আপনি চাইলে ১০০ টাকাও বিনিয়োগ করতে পারবেন একটি ট্রেজারি বন্ডে। তবে ব্যাংক থেকে কেনার ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। ব্যাংক থেকে ন্যূনতম এক লাখ টাকার ট্রেজারি বন্ড কিনতে হয়। তাই আপনি যদি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হন, তাহলে আপনার জন্য পুঁজিবাজার থেকে বন্ড কেনা ভালো। আপনি যদি অনাবাসী বাংলাদেশি হন, তাহলে ব্যাংক থেকে বন্ড কেনা আপনার জন্য সহজ। এতে আপনি আপনার বিনিয়োগের অর্থ ও মুনাফা ডলারে ফেরত নিতে চাইলে সহজেই তা ফেরত নিতে পারবেন।
সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকের তুলনায় বিল-বন্ডে কেমন মুনাফা
আপনি যদি স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে বিল কিনতে পারেন। দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বন্ড। গত বছরের জুলাইয়ে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদ ছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা এখন বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ১৮২ দিন মেয়াদি বিলের সুদ গত বছরের জুলাইয়ে ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ, যা এখন বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলের সুদ ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ শতাংশ।
একইভাবে বেড়েছে বন্ডের সুদহারও। গত বছরের জুলাইয়ে পৌনে দুই বছর মেয়াদি বন্ডের সুদ ছিল ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, যা এখন বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। ৫ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদ ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদ ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ।
এখন বিভিন্ন মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের গড় সুদহার ৯ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ। ব্যাংকের মেয়াদি আমানতে সুদ ১১ শতাংশের মধ্যে। ফলে বিনিয়োগের জন্য এখন ট্রেজারি বিল ও বন্ড বড় উৎস। তবে এসব বিল ও বন্ডে ব্যক্তি বিনিয়োগ এখনো ৫ শতাংশের নিচে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ ৪ লাখ ৪ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগের পরিমাণ ১ লাখ ৪৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এসব বিল ও বন্ডের বড় গ্রাহক হলো ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।