২০২৩ সালে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল বা জিসিসি অঞ্চলের আর্থিক কোম্পানিগুলো বৈশ্বিক সমকক্ষদের তুলনায় ভালো পারফরম্যান্স করেছে। এর ধারাবাহিকতায় উপসাগরীয় ব্যাংকগুলো চলতি বছর শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আর্থিক ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সংস্থা ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোং।
সেখানে বলা হচ্ছে, জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাতের শক্তিশালী অবস্থা, উচ্চ সুদহার ও ফিনটেক উদ্ভাবনের মতো বিষয় এ প্রবৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রাখবে।
ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোংয়ের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী সামষ্টিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তা সত্ত্বেও ব্যতিক্রমী পরিচালন পরিবেশের কারণে উপসাগরীয় অঞ্চলের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২৩ সালে তাদের আন্তর্জাতিক সমকক্ষদের ছাড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে চলতি বছরও খাতটি একটি শক্তিশালী পারফরম্যান্সের জন্য প্রস্তুত।
কভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে বৈশ্বিক ব্যাংক খাত। এ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় বাধা হিসেবে সামনে আসে মূল্যবৃদ্ধি ও আর্থিক কড়াকড়ির মতো বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ দ্রুতগতিতে সুদহার বাড়িয়েছে। ফলে ব্যাংকের মুনাফা বাড়লেও পাশাপাশি ক্ষতির ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এর বড় উদাহরণ-সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতন ও ক্রেডিট সুইস বিক্রি হওয়ার ঘটনা।
বিশ্লেষকদের ধারণা, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনা ও যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘায়িত উচ্চ সুদহার বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ওপর আরো চাপ বাড়াতে পারে। এ সমস্যাগুলো ‘প্রাইস টু বুক রেশিও’ ১০ শতাংশ হ্রাসের দিকে পরিচালিত করেছে এবং বৈশ্বিক ব্যাংক খাতে মূলধন ৯০ হাজার কোটি ডলার হ্রাস করেছে।
জিসিসি অঞ্চলের ব্যাংক খাতের জন্য সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোং। সংস্থাটি ভাষ্য, চলতি বছর জিসিসি ব্যাংকগুলো ইকুইটির ওপর একটি ব্যতিক্রমী উচ্চ রিটার্ন দেখতে পাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আঞ্চলিক আর্থিক খাত গত এক দশকে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে যথেষ্ট রিটার্ন দিয়েছে এবং বৈশ্বিক গড়কে ছাড়িয়ে গেছে।’
৮০টিরও বেশি জিসিসি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ-সমন্বিত শেয়ারের দাম অনুসরণ করে শেয়ারহোল্ডার রিটার্ন সূচক প্রকাশ করেছে ম্যাকেঞ্জি। এতে ২০১০-২৪ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক বেঞ্চমার্কের তুলনায় ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর প্রবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। এটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও শেয়ারহোল্ডারদের রিটার্ন প্রদানের ক্ষেত্রে খাতটির সক্ষমতাকে তুলে ধরেছে।
জিসিসি অঞ্চলের ব্যাংকগুলো বিশ্বব্যাপী ইকুইটি স্তরে উচ্চতর রিটার্ন ও শক্তিশালী বাজারের গুণগত মান বজায় রেখেছে। সম্প্রতি সংকুচিত হওয়া সত্ত্বেও তাদের রিটার্ন অব ইকুইটি ধারাবাহিকভাবে ২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক গড়কে ৩-৪ শতাংশীয় পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। ফলে চ্যালেঞ্জিং বৈশ্বিক ব্যাংকিং পরিস্থিতির মধ্যেও ব্যাংকগুলো মূলধন ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও উচ্চ মুনাফা অর্জনের প্রমাণিত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং কোম্পানিগুলোর উচ্চ মুনাফা অর্জনের রেকর্ড গড়তে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে উচ্চ সুদহার। পাশাপাশি জিসিসি ব্যাংকগুলোকে শেয়ারহোল্ডারদের উল্লেখযোগ্য মূল্যবৃদ্ধিতেও সমর্থন করেছে।
বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় জিসিসি ব্যাংগুলোর উচ্চ নিট সুদহার ও রাজস্ব-থেকে-সম্পদ অনুপাত বেশি রয়েছে। বিশ্বব্যাপী নিট সুদহার ১ দশমিক ৪ শতাংশের তুলনায় জিসিসি অঞ্চলে এ হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
বৈশ্বিক সমকক্ষদের তুলনায় অধিক ইমপেয়ারমেন্ট খরচের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও জিসিসি অঞ্চলের ব্যাংকগুলো কম পরিচালন ব্যয়ের সঙ্গে কাজ করেছে এবং দক্ষ খরচ ব্যবস্থাপনার কৌশল দেখিয়েছে। তাদের গড় রিটার্ন অব ইকুইটি ১০ দশমিক ৯ শতাংশ শক্তিশালী মূলধন প্রতিফলিত করেছে, যা বিশ্বব্যাপী গড় ৯ শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে। সূত্র: আরব নিউজ।