Connect with us

আবাসন সংবাদ

দেশের সম্ভাবনাময় শিল্প খাত হওয়ার পথে নির্মাণসামগ্রী

বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা, কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, মহামারী, বৈশ্বিক অস্থিরতা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সত্ত্বেও বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার এখন ৬ শতাংশ। এ বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য দেশের সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন, যেখানে নির্মাণ শিল্পের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশীদের মাথাপিছু ইস্পাত খরচ ২০২০ সালে ছিল ৪৫ কেজি, যা ২০৩০ সালের আগেই ১০০ কেজিতে পৌঁছে যেতে পারে। এ ক্রমবর্ধমান চাহিদাই প্রমাণ করছে দেশে ইস্পাত শিল্প বিকাশের প্রয়োজনীয়তা। ১৯৫২ সালে আকবরআলী আফ্রিকাওয়ালা ও তার চার ভাইয়ের হাত ধরে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের ইস্পাত শিল্পের গোড়াপত্তন হয়। তাদের প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে বাংলাদেশ স্টিল রি রোলিং মিলস বা BSRM নামে পরিচিত এবং দেশের ইস্পাত শিল্পকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাজারে আরো আছে কেএসআরএম, একেএস, জিপিএইচ, আনোয়ার ইস্পাত, রহিম স্টিল, এসসিআরএম, জেডএসআরএম, গোল্ডেন ইস্পাতসহ প্রায় ২০০টি ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান।

এদিকে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্প অত পুরনো না হলেও দেশে সিমেন্ট শিল্পের গোড়াপত্তন হয় ইস্পাতের আগেই। ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির হাত ধরে ১৯৪১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ক্ষমতাধীন ভারতবর্ষের সিলেটে প্রথম সিমেন্ট উৎপাদন শুরু হয়। আগে এ কোম্পানির নাম ছিল আসাম বেঙ্গল সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে দেশের দ্বিতীয় সিমেন্ট ফ্যাক্টরি গড়ে ওঠে চট্টগ্রামে চিটাগং সিমেন্ট ক্লিংকার অ্যান্ড গ্রাইন্ডিং ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বর্তমানে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট) নামে।

নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন বিনিয়োগ বাড়ায় দেশের নির্মাণ শিল্পে ঘটে যায় ছোটখাটো বিপ্লব। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ বাংলাদেশের নির্মাণ শিল্পের কাঠামোকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পরিণত করে। চট্টগ্রামের বড় ইস্পাত ও সিমেন্ট কারখানার পাশাপাশি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জভিত্তিক নির্মাণ ব্যবসায়ীদের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ে কারখানা স্থাপন করে বাজারে পা রাখে এ সময়। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির বড় একটা অংশজুড়ে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে গড়ে ওঠা ইস্পাত ও সিমেন্টের বড় এ শিল্প-কারখানাগুলো যাদের মাঝে অনেকেই নিজেদের পণ্য রফতানি করছে বিদেশে।

এদিকে আধুনিক যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণ শিল্পে বড় স্থান দখল করে নিতে শুরু করে কাচ ও সিরামিক টাইলস। বাংলাদেশে কাচ, বিশেষ করে শিট, ফ্ল্যাট আর ফ্লোট গ্লাস যা কিনা আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় ধরনের ভবনে ব্যবহার হয় তার বাজার দিন দিন বাড়ছে রকেটের গতিতে, যা শুরু হয় এ শতাব্দীর শুরুতে। বাংলাদেশে মূলত কনভেনশনাল শিট গ্লাস প্রযুক্তিতে কাচ তৈরি করা হতো সরকারি তত্ত্বাবধানে উসমানিয়া শিট গ্লাস ফ্যাক্টরিতে। তখন দেশের চাহিদার প্রায় সম্পূর্ণ কাচ আমদানি করতে হতো। পরবর্তী সময়ে নতুন ফ্লোট গ্লাস প্রযুক্তি নিয়ে নাসির গ্রুপ আর পিএইচপি কাচ উৎপাদনে যুক্ত হয়। বর্তমানে দেশে ছোট-বড় প্রায় ৫০টি কাচ কারখানা রয়েছে, যারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও কাচ রফতানি করছে।

Advertisement

সিরামিক শিল্প তুলনামূলক পুরনো কাচের চেয়ে। প্রায় সাড়ে ছয় দশক আগে এ ভূখণ্ডে সিরামিক পণ্যের উৎপাদন শুরু হয়। তবে টাইলসের যাত্রাটা শুরু হয় আরো পরে। ১৯৯৩ সালে মধুমতি সিরামিকস দেশে প্রথম টাইলস কারখানা স্থাপন করে। তারপর গত তিন দশকে বাজারে আসে বেশকিছু কোম্পানি। তবে সিরামিক খাতের বেশির ভাগ বিনিয়োগ এসেছে ২০০০ সালের পর, অর্থাৎ গত দুই যুগে। এ খাতের কারখানাগুলোর মধ্যে ৬০টিই গত দুই দশকে প্রতিষ্ঠিত। দেশে সিরামিকের বাজার বৃদ্ধির পেছনে সরকারের নেয়া বিভিন্ন নীতিসহায়তা সহায়ক ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

দেশের নির্মাণ শিল্পের আরেকটি বড় অংশজুড়ে আছে রঙ ও কোটিং। বহুজাতিক কোম্পানি যেমন বার্জার, এশিয়ান পেইন্টস ইত্যাদির পাশাপাশি দেশে রক্সি, এলিট ইত্যাদি রঙ কোম্পানি বিদ্যমান যারা দুই দশকের বেশি সময় ধরে রঙ ও কোটিং শিল্পের প্রবৃদ্ধি ধরে দেখে দেশের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে।

দেশের নির্মাণ ও স্থাপত্য শিল্পের এ উপাদানগুলোর বর্তমান বাজার যথেষ্ট বড়। এর মাঝে সবচেয়ে বেশি অংশজুড়ে আছে ইস্পাত, বর্তমানে যার আকার প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে দেশে ব্যবহৃত হয়েছিল ৩ কোটি ৮০ লাখ টন সিমেন্ট, যার পরিমাণ সামনে আরো বাড়বে। সমগ্র পৃথিবীর হিসাবে বাংলাদেশের সিমেন্ট বাজারের অবস্থান বিশ্বে ৪০তম। এদিকে কাচ শিল্পের বর্তমান বাজারের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যার মাঝ থেকে রফতানির মাধ্যমে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ আয় করেছে প্রায় ১৪ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশে প্রায় ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকার টাইলস বিক্রি হয়েছিল এবং Coatings World নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যমতে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের পেইন্টস ও কোটিং শিল্পের আকার ছিল ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি (৪৭১ মিলিয়ন ডলার)। বাজারের উপাত্তগুলো দেশের শিল্প খাতে নির্মাণ ও স্থাপত্যসামগ্রীর সম্ভাবনা ও প্রভাবের একটি চিত্র তুলে ধরে নিঃসন্দেহে। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, রাজনৈতিক ও আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সচেতনতা এ খাতকে গড়ে তুলতে পারে দেশের পরবর্তী সবচেয়ে বড় রফতানিমুখী খাত হিসেবে।

Continue Reading
Advertisement

আবাসন সংবাদ

ভূমিকম্পে ঢাকার বড় বিপদ স্পষ্ট হচ্ছে

Published

on

By

আবাসন কনটেন্ট কাউন্সিলর

ভূমিকম্পে রাজধানী শহর ঢাকার বড় বিপদের ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের নৈকট্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রাণহানির ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে এমন মত দিয়েছেন ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা।

গত শুক্র ও গতকাল শনিবার প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশে চারটি ভূমিকম্পের ঘটনা এমন ঝুঁকির বিষয়টি সামনে এনেছে। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎস ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে।

ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎপত্তিস্থলের গভীরতা যত কম হবে, তত বেশি ঝাঁকুনি হবে। শুক্রবারের ভূকম্পনের তীব্রতা ছিল স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তীব্র ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। এ ভূমিকম্পের ঘটনায় শিশুসহ ১০ জন নিহত হন। আহত হন ৬ শতাধিক মানুষ।

২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে গতকাল সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার এবং সাড়ে সাত ঘণ্টার পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আরও একটি ভূমিকম্প হয়, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। এ ভূমিকম্প দুটোরই উৎপত্তি ছিল নরসিংদী। সন্ধ্যায় কাছাকাছি সময়ে আরও একটি ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডা; যার মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭।

এসব মৃদু ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পকে বড় ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন ভূমিকম্প ঢাকার ঝুঁকি কতটা স্পষ্ট করছে, তা বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিগত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে।

Advertisement

আবহাওয়া অধিদপ্তরের নথিভুক্ত ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়ে ৩৯টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভেতরে। এর মধ্যে ১১টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৮৬ কিলোমিটার এলাকার ভেতরে। অর্থাৎ ২৮ শতাংশের বেশি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে। এসব ভূমিকম্পের মাত্রা ৩ দশমিক ৩ থেকে ৫ দশমিক ৭। এর মধ্যে শুক্রবার নরসিংদীতে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রার (৫ দশমিক ৬) ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ঢাকার ১০০ থেকে ২৬৭ কিলোমিটারের মধ্যে বাকি ২৮টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল।

পাঁচ বছরে ১৮ জেলায় ভূমিকম্প হয়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট, নেত্রকোনা, দিনাজপুর, হবিগঞ্জ, রংপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, পাবনা, হবিগঞ্জ, রাঙামাটি, চুয়াডাঙ্গা, শরীয়তপুর, যশোর ও কুড়িগ্রাম।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রে একসময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন মো. মমিনুল ইসলাম। এখন তিনি আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নরসিংদীতে এর আগেও ভূমিকম্প হয়েছে। তবে মাত্রা ছিল কম। বাংলাদেশের সীমান্তে তিনটি টেকটনিক প্লেট আছে। এই তিনটি প্লেটই সক্রিয়। প্রতিনিয়ত এখানে ছোট ছোট ভূমিকম্প হচ্ছে। প্লেট বাউন্ডারির পাশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকে।

মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, নরসিংদীতে একটি সাব-ফল্ট রয়েছে। নরসিংদীতে আগে ছোট ভূমিকম্প হলেও গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এখন বোঝা যাচ্ছে, এই সাব-ফল্ট অনেক বড়। এটা ঢাকার কাছ পর্যন্ত চলে এসেছে। এই ভূমিকম্প প্রমাণ করল ঢাকা বড় ঝুঁকির মধ্যে।

বেশি ভূমিকম্প রাতে
গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে হওয়া ৩৯টি ভূমিকম্প কোন সময় হয়েছে, সেটিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশ্লেষণে এসেছে। এতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ভূমিকম্প হয়েছে রাতে। যেমন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সময়ে ভূমিকম্প হয়েছে ২৩টি। বাকি ১৬টি ভূমিকম্প হয়েছে দিনের বেলায় (ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা)।

Advertisement

রাতে বেশির ভাগ মানুষ ঘুমিয়ে অথবা বাসায় থাকে। এমন সময়ে ভূমিকম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা বেশি থাকে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, যে পরিমাণ ভূমিকম্পের শক্তি সাবডাকশন জোনে (দুটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থল) পুঞ্জীভূত হয়ে আছে, তার ১ শতাংশের কম নির্গত হয়েছে। ফলে বারবার হওয়া এই ভূকম্পগুলো বড় একটি ভূমিকম্পের পথ খুলে দিয়েছে।

অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর ‘আফটার শক’ হবে, এমনটা আগেই ধারণা করা হয়েছিল। তবে আফটার শকগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ভূ-অভ্যন্তরের যে ফাটল বা ফল্ট লাইনটি এত দিন ধরে প্রচণ্ড চাপে একে অপরের সঙ্গে আটকে ছিল, তা নড়তে শুরু করেছে এবং শক্তি নির্গমনের একটি প্রক্রিয়া চালু করেছে। এমন আফটার শক হতে হতে বড় ভূমিকম্প হবে। সেটা খুবই নিকটে হতে পারে।

ঝুঁকির চার কারণ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব হাসান চারটি কারণে ঢাকার বিপদটা স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উৎপত্তিস্থল থেকে ঢাকার নৈকট্য একটা কারণ। ঢাকার কাছে এ ফল্টটা সম্পর্কে এত স্পষ্ট ধারণা ছিল না। সেটা এখন খুলতে শুরু করেছে। যার প্রভাবে সামনে আরও ভূমিকম্প হতে পারে।

মাটির গঠনকে দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উল্লেখ করে রাকিব হাসান বলেন, ঢাকার নতুন অংশগুলো খুব নিচু জায়গায় মাটি ভরাট করে গড়ে উঠেছে। এমন অঞ্চলে ভূমিকম্পের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। তৃতীয়ত, ঢাকার ভবনগুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ডিজাইন কোড মেনে হচ্ছে না। চার নম্বর হলো ঢাকা শহরের জনঘনত্ব। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে।

Advertisement

প্রস্তুতি কেমন
২০১৬ সালে ভূমিকম্পের প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলার অংশ হিসেবে ন্যাশনাল অপারেশন সেন্টার নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি হলেও গত এক দশকে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ সেন্টার নির্মাণে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় জায়গাও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব আবু দাউদ মো. গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, তেজগাঁওয়ে এক একর জায়গা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভবন নির্মাণ করতে গেলে নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য কমপক্ষে আরও ২৫ বর্গমিটার জায়গা থাকা দরকার। সেটা পাওয়া যায়নি।

দুর্যোগের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগের জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। বড় দুর্যোগের ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসকে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন সংস্থার জন্য আরও সরঞ্জাম সংগ্রহের কাজ চলমান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে আমরা সে সংগ্রহ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা উপকূলে আমাদের ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক আছেন। নগরে আছে ৪৮ হাজার। তাঁদের যুক্ত করে মানুষকে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতন করার কাজ শুরু করব।’

তবে প্রস্তুতি ও করণীয় দিকগুলো যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন দুর্যোগ ফোরামের সদস্যসচিব গওহর নঈম ওয়ারা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জেলা পর্যায়ে চিঠি দিয়েছে দুর্যোগের তথ্য দেওয়ার জন্য। এ ধরনের দুর্যোগে এমনিতে তথ্য আসার কথা। সেটার জন্য চিঠি দিতে হবে কেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নরসিংদীর দুর্যোগের তথ্য আসতে লেগেছে এক দিনের বেশি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারের জায়গা নেই জানিয়ে গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, যে দেশগুলো স্থানীয় সরকারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, তারা দুর্যোগ মোকাবিলায় এগিয়ে আছে। দুর্যোগ নিয়ে সচেতনতার বিষয়টি পাঠ্যসূচিতে থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে ছাত্ররা লাফিয়ে পড়েছে। এ রকম কেন হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব চর্চা করায় না। এটা স্কুল থেকে শেখাতে হবে।

Advertisement
Continue Reading

আবাসন সংবাদ

ভূমিকম্প-পরবর্তী জরুরি পরিস্থিতি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ দিন বন্ধ ঘোষণা

Published

on

By

আবাসন কনটেন্ট কাউন্সিলর

ভূমিকম্প–পরবর্তী উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতিতে আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়ালি এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্প ও পরাঘাতের কারণে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক আঘাতের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি তাঁদের সার্বিক নিরাপত্তার দিক সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সভায় বুয়েটের বিশেষজ্ঞ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের পরিচালক এবং প্রধান প্রকৌশলীর মতামত বিশ্লেষণ করা হয়। তাঁরা ভূমিকম্প–পরবর্তী আবাসিক হলগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সামগ্রিক ঝুঁকি মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার বলে মতামত দেন। ঝুঁকি নিরূপণ ও সম্ভাব্য সংস্কারের স্বার্থে আবাসিক হলগুলো খালি করার কথাও বলেন তাঁরা।

এ পটভূমিতে সভায় আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা এবং আবাসিক হলগুলো খালি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই আগামীকাল বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছেড়ে যেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রাধ্যক্ষদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

Advertisement

তবে বন্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসগুলো যথারীতি খোলা থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এর আগে আজ রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছিল।

Continue Reading
Advertisement
Advertisement
আবাসন সংবাদ1 week ago

ভূমিকম্পে ঢাকার বড় বিপদ স্পষ্ট হচ্ছে

ভূমিকম্পে রাজধানী শহর ঢাকার বড় বিপদের ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের নৈকট্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রাণহানির ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে...

প্রধান প্রতিবেদন1 week ago

আমরা কি জেনেবুঝে বিপর্যয় ডেকে আনছি

ঢাকার মাটির নিচে যে ভূতাত্ত্বিক শক্তি সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে, তার সামান্যতম বিচ্যুতিতেও এই মহানগরী এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে। এই...

আবাসন সংবাদ1 week ago

ভূমিকম্প-পরবর্তী জরুরি পরিস্থিতি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ দিন বন্ধ ঘোষণা

ভূমিকম্প–পরবর্তী উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতিতে আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের...

আবাসন সংবাদ1 week ago

ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের নেতৃত্বে আরিফুল-মোসলেহ উদ্দিন

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর ১৭তম কার্যনির্বাহী পরিষদ (২০২৬–২০২৭) নির্বাচন ২০২৫ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। গত শুক্রবার (২১...

অর্থ ও বাণিজ্য1 month ago

দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট জগতে সফল বাংলাদেশি উদ্যোক্তা আকিব মুনির

দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত: এক দশকেরও কম সময়ে কঠোর পরিশ্রম, সততা এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে...

Advertisement

সর্বাধিক পঠিত