Connect with us

আবাসন সংবাদ

রাজউকের প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দে নতুন বিধিমালা

রাজউকের প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দে নতুন বিধিমালা

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ভূমি, প্লট, স্পেস ও ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়ে নতুন বিধিমালা জারি করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গত ২৫ এপ্রিল ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ভূমি, প্লট, স্পেস ও ফ্ল্যাট বরাদ্দ) বিধিমালা, ২০২৪’ জারি করা হয়।

বিধিমালায় রাজউকের ভূমি বা আবাসিক প্লট, বাণিজ্যিক প্লট, বাণিজ্যিক স্পেস, শিল্প প্লট, প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বা ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে এ বিষয়ে ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ল্যান্ড অ্যালোটমেন্ট) রুলস, ১৯৬৯’ ছিল। যেটি বাতিল করে নতুন বিধিমালা জারি করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, রাজউক পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা বা উন্নয়নের জন্য নির্ধারিত কোনো প্রকল্পের ভূমি বা কোনো আবাসন প্রকল্পের অনুমোদিত লে-আউট প্ল্যানে চিহ্নিত ভূমি বা আবাসিক প্লট বরাদ্দ দিতে পারবে। প্লট বরাদ্দ দিতে জনসাধারণের কাছে আবেদন আহ্বান করে কমপক্ষে দুটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।

ভূমি বা আবাসিক প্লটের বরাদ্দ পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক এবং বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর হতে হবে।

কোনো ব্যক্তি ভূমি বা আবাসিক প্লট বরাদ্দ পাওয়ার আবেদন করার অযোগ্য হবে না, যদি তিনি নিজ নামে বা তার স্ত্রী বা স্বামীর নামে ইতোপূর্বে কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমি বা আবাসিক প্লট বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে কোনো আবেদন দাখিল করলে আবেদন বাতিল করতে হবে এবং তার জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

ভূমি বা আবাসিক প্লট অন্য কারো কাছে হস্তান্তর করার পর যদি প্রমাণিত হয় যে, বরাদ্দ গ্রহীতা মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে প্লটের বরাদ্দ নিয়েছেন, তবে ওই বরাদ্দ ও হস্তান্তর বাতিল করতে হবে। এক্ষেত্রে মূল বরাদ্দ গ্রহীতা হস্তান্তর গ্রহীতাকে দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ দিবে।

প্লটের ধরন ও আকারভেদে ভূমি বা আবাসিক প্লটের সংখ্যা যোগ্য আবেদনকারীর তুলনায় কম হলে উন্মুক্ত লটারি ও তাৎক্ষণিক ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে বরাদ্দ দিতে হবে।

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা সমমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি, সংসদ-সদস্য, বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনী, আধা-সামরিক বাহিনী, সরকারি কর্মচারি, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী (নিবাসী), সাংবাদিক, স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থার চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বেসরকারি চাকরিজীবী ও শিক্ষক, শিল্পী, সাহিত্যিক, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, আইনজীবী, আইন ও আইনগত দলিলাদি নিরীক্ষা কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারী, কৃষিবিদ, প্রকৌশলী, স্থপতি, পরিকল্পনাবিদ, চিকিৎসক, মূল অধিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক আবাসিক প্লট সংরক্ষণ করা যাবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষের আওতাধীন যে কোনো প্রকল্পের আবাসিক প্লটে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের জন্য ২ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থার কর্মচারীদের জন্য ২ শতাংশ এবং কর্তৃপক্ষের কর্মচারীদের জন্য ২ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা যাবে।

বিধিমালা অনুযায়ী, রাজউক জনস্বার্থে নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে আবাসিক প্লট বরাদ্দ দিতে পারবে- মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী বা সমমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি; সংসদ-সদস্য; বীর মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ পরিবারের সরাসরি সদস্য এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মে বা কর্তৃপক্ষের আইন প্রণয়নবিষয়ক কাজে উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রেখেছেন এমন সরকারি কর্মচারী বা এমন কোনো পেশাজীবী যিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত না থেকেও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনসেবা বা জনকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বা করেছেন বা এমন কোনো ব্যক্তি যিনি জনগণ বা রাষ্ট্রের কল্যাণে বিশেষ অবদান রেখেছেন বা নিবেদিত প্রাণ কোনো সমাজকর্মী বা সমাজসেবক।

Advertisement

কোনো বরাদ্দ গ্রহীতা সাময়িক বরাদ্দ প্রাপ্তির পর যৌক্তিক কারণ ছাড়া প্রথম কিস্তির অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ না করলে আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দিয়ে বরাদ্দপত্র বাতিল করা যাবে।

ভূমি বা আবাসিক প্লট বরাদ্দ গ্রহীতাকে আবশ্যিকভাবে ইজারা দলিল রেজিস্ট্রেশন করার পর ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ চার বছরের মধ্যে বসবাস উপযোগী করে বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। কেউ বাড়ি নির্মাণ করতে ব্যর্থ গহলে প্রতি বছর প্রতি কাঠার জন্য ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।

বাণিজ্যিক প্লট বা বাণিজ্যিক স্পেস, শিল্প প্লট, প্রাতিষ্ঠানিক প্লট, বরাদের আবেদন, বরাদ্দের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে বিধিমালায়।

ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, রাজউক কোনো আবাসিক প্রকল্পে অধিক সংখ্যক জনগণের আবাসন ব্যবস্থা করার জন্য উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যম ও স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য এক বা একাধিক এলাকা বা ব্লক আকারে ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করতে পারবে।

কর্তৃপক্ষের আওতাধীন যে কোনো প্রকল্পে নির্মিত ফ্ল্যাটের মোট সংখ্যার ১০ শতাংশ সরকারি কর্মচারীদের জন্য, ৩ শতাংশ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে বরাদ্দের জন্য, ৩ শতাংশ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বরাদ্দের জন্য এবং ২ শতাংশ কর্তৃপক্ষের কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।

Advertisement

বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি ফ্ল্যাটের ৫০ শতাংশ মূল্য কিস্তিতে পরিশোধের পর অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ মূল্য কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে পরবর্তী ১৫ বছরের কিস্তিতে বা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে পারবে। কর্তৃপক্ষ আবাসিক ফ্ল্যাটের মূল্য নির্ধারণের জন্য এক বা একাধিক কমিটি গঠন করতে পারবে।

রাজউক নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় চিহ্নিত এলাকায় বা কর্তৃপক্ষের কোনো আবাসন প্রকল্পের অনুমোদিত লে-আউট প্ল্যানে চিহ্নিত স্থানে ভবন নির্মাণ করে সাশ্রয়ী ভাড়া বা মূল্য পরিশোধের ভিত্তিতে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিতে পারবে বলে বিধিমালায় জানানো হয়েছে।

আবাসন সংবাদ

ভূমিকম্পে ঢাকার বড় বিপদ স্পষ্ট হচ্ছে

Published

on

By

আবাসন কনটেন্ট কাউন্সিলর

ভূমিকম্পে রাজধানী শহর ঢাকার বড় বিপদের ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের নৈকট্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রাণহানির ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে এমন মত দিয়েছেন ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা।

গত শুক্র ও গতকাল শনিবার প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশে চারটি ভূমিকম্পের ঘটনা এমন ঝুঁকির বিষয়টি সামনে এনেছে। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎস ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে।

ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎপত্তিস্থলের গভীরতা যত কম হবে, তত বেশি ঝাঁকুনি হবে। শুক্রবারের ভূকম্পনের তীব্রতা ছিল স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তীব্র ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। এ ভূমিকম্পের ঘটনায় শিশুসহ ১০ জন নিহত হন। আহত হন ৬ শতাধিক মানুষ।

২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে গতকাল সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার এবং সাড়ে সাত ঘণ্টার পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আরও একটি ভূমিকম্প হয়, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। এ ভূমিকম্প দুটোরই উৎপত্তি ছিল নরসিংদী। সন্ধ্যায় কাছাকাছি সময়ে আরও একটি ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডা; যার মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭।

এসব মৃদু ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পকে বড় ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন ভূমিকম্প ঢাকার ঝুঁকি কতটা স্পষ্ট করছে, তা বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিগত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে।

Advertisement

আবহাওয়া অধিদপ্তরের নথিভুক্ত ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়ে ৩৯টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভেতরে। এর মধ্যে ১১টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৮৬ কিলোমিটার এলাকার ভেতরে। অর্থাৎ ২৮ শতাংশের বেশি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে। এসব ভূমিকম্পের মাত্রা ৩ দশমিক ৩ থেকে ৫ দশমিক ৭। এর মধ্যে শুক্রবার নরসিংদীতে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রার (৫ দশমিক ৬) ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ঢাকার ১০০ থেকে ২৬৭ কিলোমিটারের মধ্যে বাকি ২৮টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল।

পাঁচ বছরে ১৮ জেলায় ভূমিকম্প হয়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট, নেত্রকোনা, দিনাজপুর, হবিগঞ্জ, রংপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, পাবনা, হবিগঞ্জ, রাঙামাটি, চুয়াডাঙ্গা, শরীয়তপুর, যশোর ও কুড়িগ্রাম।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রে একসময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন মো. মমিনুল ইসলাম। এখন তিনি আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নরসিংদীতে এর আগেও ভূমিকম্প হয়েছে। তবে মাত্রা ছিল কম। বাংলাদেশের সীমান্তে তিনটি টেকটনিক প্লেট আছে। এই তিনটি প্লেটই সক্রিয়। প্রতিনিয়ত এখানে ছোট ছোট ভূমিকম্প হচ্ছে। প্লেট বাউন্ডারির পাশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকে।

মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, নরসিংদীতে একটি সাব-ফল্ট রয়েছে। নরসিংদীতে আগে ছোট ভূমিকম্প হলেও গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এখন বোঝা যাচ্ছে, এই সাব-ফল্ট অনেক বড়। এটা ঢাকার কাছ পর্যন্ত চলে এসেছে। এই ভূমিকম্প প্রমাণ করল ঢাকা বড় ঝুঁকির মধ্যে।

বেশি ভূমিকম্প রাতে
গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে হওয়া ৩৯টি ভূমিকম্প কোন সময় হয়েছে, সেটিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশ্লেষণে এসেছে। এতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ভূমিকম্প হয়েছে রাতে। যেমন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সময়ে ভূমিকম্প হয়েছে ২৩টি। বাকি ১৬টি ভূমিকম্প হয়েছে দিনের বেলায় (ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা)।

Advertisement

রাতে বেশির ভাগ মানুষ ঘুমিয়ে অথবা বাসায় থাকে। এমন সময়ে ভূমিকম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা বেশি থাকে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, যে পরিমাণ ভূমিকম্পের শক্তি সাবডাকশন জোনে (দুটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থল) পুঞ্জীভূত হয়ে আছে, তার ১ শতাংশের কম নির্গত হয়েছে। ফলে বারবার হওয়া এই ভূকম্পগুলো বড় একটি ভূমিকম্পের পথ খুলে দিয়েছে।

অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর ‘আফটার শক’ হবে, এমনটা আগেই ধারণা করা হয়েছিল। তবে আফটার শকগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ভূ-অভ্যন্তরের যে ফাটল বা ফল্ট লাইনটি এত দিন ধরে প্রচণ্ড চাপে একে অপরের সঙ্গে আটকে ছিল, তা নড়তে শুরু করেছে এবং শক্তি নির্গমনের একটি প্রক্রিয়া চালু করেছে। এমন আফটার শক হতে হতে বড় ভূমিকম্প হবে। সেটা খুবই নিকটে হতে পারে।

ঝুঁকির চার কারণ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব হাসান চারটি কারণে ঢাকার বিপদটা স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উৎপত্তিস্থল থেকে ঢাকার নৈকট্য একটা কারণ। ঢাকার কাছে এ ফল্টটা সম্পর্কে এত স্পষ্ট ধারণা ছিল না। সেটা এখন খুলতে শুরু করেছে। যার প্রভাবে সামনে আরও ভূমিকম্প হতে পারে।

মাটির গঠনকে দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উল্লেখ করে রাকিব হাসান বলেন, ঢাকার নতুন অংশগুলো খুব নিচু জায়গায় মাটি ভরাট করে গড়ে উঠেছে। এমন অঞ্চলে ভূমিকম্পের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। তৃতীয়ত, ঢাকার ভবনগুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ডিজাইন কোড মেনে হচ্ছে না। চার নম্বর হলো ঢাকা শহরের জনঘনত্ব। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে।

Advertisement

প্রস্তুতি কেমন
২০১৬ সালে ভূমিকম্পের প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলার অংশ হিসেবে ন্যাশনাল অপারেশন সেন্টার নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি হলেও গত এক দশকে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ সেন্টার নির্মাণে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় জায়গাও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব আবু দাউদ মো. গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, তেজগাঁওয়ে এক একর জায়গা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভবন নির্মাণ করতে গেলে নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য কমপক্ষে আরও ২৫ বর্গমিটার জায়গা থাকা দরকার। সেটা পাওয়া যায়নি।

দুর্যোগের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগের জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। বড় দুর্যোগের ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসকে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন সংস্থার জন্য আরও সরঞ্জাম সংগ্রহের কাজ চলমান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে আমরা সে সংগ্রহ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা উপকূলে আমাদের ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক আছেন। নগরে আছে ৪৮ হাজার। তাঁদের যুক্ত করে মানুষকে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতন করার কাজ শুরু করব।’

তবে প্রস্তুতি ও করণীয় দিকগুলো যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন দুর্যোগ ফোরামের সদস্যসচিব গওহর নঈম ওয়ারা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জেলা পর্যায়ে চিঠি দিয়েছে দুর্যোগের তথ্য দেওয়ার জন্য। এ ধরনের দুর্যোগে এমনিতে তথ্য আসার কথা। সেটার জন্য চিঠি দিতে হবে কেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নরসিংদীর দুর্যোগের তথ্য আসতে লেগেছে এক দিনের বেশি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারের জায়গা নেই জানিয়ে গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, যে দেশগুলো স্থানীয় সরকারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, তারা দুর্যোগ মোকাবিলায় এগিয়ে আছে। দুর্যোগ নিয়ে সচেতনতার বিষয়টি পাঠ্যসূচিতে থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে ছাত্ররা লাফিয়ে পড়েছে। এ রকম কেন হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব চর্চা করায় না। এটা স্কুল থেকে শেখাতে হবে।

Advertisement
Continue Reading

আবাসন সংবাদ

ভূমিকম্প-পরবর্তী জরুরি পরিস্থিতি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ দিন বন্ধ ঘোষণা

Published

on

By

আবাসন কনটেন্ট কাউন্সিলর

ভূমিকম্প–পরবর্তী উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতিতে আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়ালি এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্প ও পরাঘাতের কারণে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক আঘাতের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি তাঁদের সার্বিক নিরাপত্তার দিক সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সভায় বুয়েটের বিশেষজ্ঞ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের পরিচালক এবং প্রধান প্রকৌশলীর মতামত বিশ্লেষণ করা হয়। তাঁরা ভূমিকম্প–পরবর্তী আবাসিক হলগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সামগ্রিক ঝুঁকি মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার বলে মতামত দেন। ঝুঁকি নিরূপণ ও সম্ভাব্য সংস্কারের স্বার্থে আবাসিক হলগুলো খালি করার কথাও বলেন তাঁরা।

এ পটভূমিতে সভায় আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা এবং আবাসিক হলগুলো খালি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই আগামীকাল বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছেড়ে যেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রাধ্যক্ষদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

Advertisement

তবে বন্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসগুলো যথারীতি খোলা থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এর আগে আজ রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছিল।

Continue Reading
Advertisement
Advertisement
আবাসন সংবাদ4 weeks ago

ভূমিকম্পে ঢাকার বড় বিপদ স্পষ্ট হচ্ছে

ভূমিকম্পে রাজধানী শহর ঢাকার বড় বিপদের ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের নৈকট্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রাণহানির ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে...

প্রধান প্রতিবেদন4 weeks ago

আমরা কি জেনেবুঝে বিপর্যয় ডেকে আনছি

ঢাকার মাটির নিচে যে ভূতাত্ত্বিক শক্তি সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে, তার সামান্যতম বিচ্যুতিতেও এই মহানগরী এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে। এই...

আবাসন সংবাদ4 weeks ago

ভূমিকম্প-পরবর্তী জরুরি পরিস্থিতি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ দিন বন্ধ ঘোষণা

ভূমিকম্প–পরবর্তী উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতিতে আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের...

আবাসন সংবাদ4 weeks ago

ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের নেতৃত্বে আরিফুল-মোসলেহ উদ্দিন

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর ১৭তম কার্যনির্বাহী পরিষদ (২০২৬–২০২৭) নির্বাচন ২০২৫ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। গত শুক্রবার (২১...

অর্থ ও বাণিজ্য2 months ago

দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট জগতে সফল বাংলাদেশি উদ্যোক্তা আকিব মুনির

দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত: এক দশকেরও কম সময়ে কঠোর পরিশ্রম, সততা এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে...

Advertisement

সর্বাধিক পঠিত