সম্প্রতি আবাসনের সাথে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন রিয়েল স্টার প্রোপার্টিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন। আলাপে উঠে আসে রিয়েল স্টার প্রোপার্টিজ লিমিটেডের সেবা, কার্যক্রম, প্রজেক্টগুলো কী, স্টার অ্যাগ্রর কার্যক্রম, রিয়েল এস্টেট বিজনেসের বাধা, উত্তরণের উপায়সহ বিভিন্ন বিষয়।
আবাসন: রিয়েল স্টার প্রোপার্টিজ লিমিটেড শুরুর গল্পটা শুনতে চাই।
সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন: রাজশাহী একটা বিভাগীয় শহর হলেও এখনও এখানে ব্যবসা- বাণিজ্য সেভাবে গড়ে ওঠেনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে কাজের অভিজ্ঞতা লাভে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরিতে জয়েন করি। ২০২০ সালে আবার ফিরে আসি রাজশাহীতে। ততদিনে রাজশাহীতে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম মেম্বার।
২০০৮ সালে উনি যখন প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন, তখন উনার হাত ধরে রাজশাহীতে প্রথম বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সুযোগ তৈরি হয়। পরে ২০১৮ সালে যখন আবারও তিনি নির্বাচিত হন, তখন থেকে রাজশাহীতে ধীরে ধীরে এই রিয়েল এস্টেট বিজনেসের সুযোগটা সম্প্রসারিত হতে শুরু করে। পাশাপাশি তিনি রাজশাহী শহরে যে উন্নয়ন করেছেন, তা দেখে আশপাশের জেলা, উপজেলা ও দেশের অন্যান্য জেলা, উপজেলা থেকে মানুষ রাজশাহীতে আসা শুরু করে। সাধারণত, যেখানে উন্নয়ন হয়, মানুষ বাড়ে, সেখানেই আবাসনের প্রয়োজন হয়।
সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিভাগীয় নগরী হিসেবে রাজশাহীতে কোন ব্যবসাটার ভবিষ্যৎ ভালো, কোন ব্যবসাটা বেশি সম্ভাবনাময়, বিষয়গুলো নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষভাবে গবেষণা শুরু করি। পরে বুঝতে পারি রিয়েল এস্টেট বিজনেসটা সবচেয়ে ভালো হবে। এটি মানুষের জন্য খুবই উপকারী হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আমি ব্যবসার পরিকল্পনা শুরু করি। ২০২২ সালে সে পরিকল্পনা অনুসারে অফিশিয়ালি রিয়েল এস্টেট বিজনেসটা শুরু করি। নাম দেই রিয়েল স্টার প্রোপার্টিজ। পরে কোম্পানিকে লিমিটেড করি।
আবাসন: রিয়েল স্টার প্রোপার্টিজ কি ধরনের সেবা দিয়ে থাকে? সেগুলো কী কী?
সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন: আমরা সাধারণত মানুষের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং তৈরি করে থাকি। ভবিষ্যতে আমাদের পরিকল্পনা আছে রেডিমেট প্লট সেল করার। পাশাপাশি আমরা কনসালটেন্সি সার্ভিস দিয়ে থাকি। মানুষ কখন ফ্ল্যাট কিনবে, কোথায় থেকে ফ্ল্যাট কিনবে, কিভাবে ফ্ল্যাট কিনবে, কোন প্রাইজে ফ্ল্যাট কেনা উচিত, কোন প্রাইজে কেনা উচিত না, এ ধরনের সার্ভিসগুলো আমরা দিয়ে থাকি। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে আমরা ইন্টেরিয়র ডিজাইন সার্ভিসটাও চালু করবো। সেসাথে সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রী সরবারহ করার সার্ভিসটাও আমাদের চালু করার পরিকল্পনা আছে।
আবাসন: আপনি স্টার অ্যাগ্ররও ম্যানেজিং ডিরেক্টর। এর কার্যক্রমগুলো কী কী?
সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন: ২০২০ সালে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যখন মহামারী কোভিড আক্রমণ করে, তখন বেশিরভাগ ব্যবসার চাকাই থেমে যায়। বিশেষ করে রিয়েল এস্টেট বিজনেসের অচল অবস্থা তৈরি হয়। মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মধ্যে খাবারের চাহিদা কিন্তু মানুষের সব সময় থাকে। তখন আমরা চিন্তা করলাম কোভিড বা অন্য যেকোনো বড় ধরনের দুর্যোগময় পরিস্থিতি আসুক না কেনো, মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্যের প্রয়োজন হবেই।
ওই সময় দিনে দিনে মানুষের অর্গানিক খাদ্যের চাহিদা বাড়ছিল। খাদ্যের আইটেমগুলো যে কোন মানুষের যে কোন সময়ে প্রয়োজন হয়ে থাকে। ফলে তখন সময়ের প্রয়োজনে স্টার অ্যাগ্রর যাত্রা শুরু করি। অ্যাগ্রর উদ্দেশ্য হলো আমরা যাতে মানুষকে সব সময় অর্গানিক খাদ্য উপাদান অর্থাৎ তাজা শাক-সবজি, মাছ, গরুর মাংস, ডিম, দুধ, ফল-মূল, এগুলো যথাযথভাবে সরবরাহ করতে পারি।
একই সাথে রাজশাহী কিন্তু এখন আর শিক্ষা নগরীর ভেতরেই সীমাবদ্ধ না, পাশাপাশি এখন সবজি বা কৃষি পণ্য উৎপাদনেও সেরা জেলার মধ্যে অবস্থান করছে। রাজশাহীর জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত আমের পাশাপাশি মাছও কিন্তু সারা বাংলাদেশে সাপ্লাই করা হচ্ছে। রাজশাহীতে আমাদের যে এয়ারপোর্টটা আছে বর্তমান মেয়র সাহেব সেটি ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিকমানের এয়ারপোর্ট হিসেবে রূপান্তর করতে চান। ইতিমধ্যে সে কার্যক্রম শুরুও হয়ে গেছে।
ওনার টার্গেট হচ্ছে পরবর্তীতে এখানে যেনো টারগো বিমানও নামতে পারে, সে হিসেবে এয়ারপোর্টটি প্রস্তুত করছেন। বর্তমানে এখানে যে মাছ, আম, শাক-সবজি উৎপাদিত হয় সেগুলো শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও যাতে রপ্তানি করা যায়। সে টার্গেট নিয়ে কাজ করছেন। আমরা যারা তরুণ প্রজন্ম আছি তারা এই সুযোগটা পরবর্তীতে কাজে লাগাতে চাই। রাজশাহীর উৎপাদিত সবজি, আম, মাছ এগুলো আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে চাই। সেই উদ্দেশ্যেই আমরা স্টার অ্যাগ্রর যাত্রা শুরু করেছি।
আবাসন: রিয়েল স্টার প্রোপার্টিজর বর্তমান চলমান প্রজেক্টগুলো কী কী?
সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন: ২০২২ সালের জুলাই মাসে আমাদের কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়। প্রথম প্রজেক্ট চালু হয় ওই বৎসরের অক্টোবর মাসে। বর্তমানে আমাদের চারটি প্রজেক্ট চালু আছে। এর মধ্যে দুটি প্রজেক্টের কাজ এখনো চলমান আছে। আগামী আগস্ট মাসে আশা করছি সে প্রজেক্ট দুটি চালু করতে পারবো।
আবাসন: আপনাদের আগামীতে কী ধরনের প্রজেক্ট আসছে?
সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন: সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে রাজশাহীতে সময়োপযোগী বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজশাহী নগরীর সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে আমরাও চাচ্ছি আমাদের কোম্পানিতে আরও কিছু নতুন প্রজেক্ট নিয়ে আসতে।
রাজশাহীতে যে সমস্ত প্রিমিয়াম লোকেশন রয়েছে প্রত্যেকটা লোকেশনে যাতে একটা করে প্রজেক্ট থাকে, সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা পরিকল্পনা করে কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা যাতে সব মিলে দশটি প্রজেক্ট চালু করতে পারি, সেই টার্গেট নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমরা চারটি প্রজেক্ট চালু করেছি। বাকি সময়ের মধ্যে আশা করছি আরও ছয়টি প্রজেক্ট চালু করতে পারবো।
আবাসন: আপনার দৃষ্টিতে রিয়েল এস্টেট বিজনেসের প্রতিবন্ধকতাগুলো কী কী?
সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন: রাজশাহীতে এখনো সেই ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম শুরু হয়নি। এখানকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। এটাকে আমি একটা প্রতিবন্ধকতা মনে করি। একটু খেয়াল করলে দেখবেন গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কারণে নির্মাণ সামগ্রীর দাম কয়েক গুন বেড়ে গেছে। নির্মাণ সামগ্রী দাম বেড়ে যাওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হলো বৈশ্বিক বাজারের অস্থির অবস্থা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে পণ্য ও কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, ইসরাইল ফিলিস্তিনি যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাজারে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর প্রধান যে কাঁচামাল সিমেন্ট, রড এগুলো বেশিরভাগই আসে বিদেশ থেকে। নির্মাণ সামগ্রির দাম বেড়ে যাওয়া রিয়েল এস্টেট বিজনেসের জন্য একটি অন্যতম এবং প্রধান প্রতিবন্ধকতা। রাজশাহীতে যেহেতু বড় আকারে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ নাই, সেহেতু মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে না। এটা একটা প্রতিবন্ধকতা।
একই সাথে মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও মানসিকতায় সচেতনতার অভাব আছে। এখনো অনেক মানুষ ভাবে যে, আমি এক থেকে দেড় কোটি টাকা দিয়ে একটা ফ্লাট না কিনে, সে টাকাটা যদি কোন একটা ব্যাংকে এফডিয়ার করে রাখি, তাহলে সেখান থেকে যে লভ্যাংশ পাবো, সে টাকা দিয়ে তো আমি একটা ভাল লোকেশনে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতে পারি। বছরের পর বছর ধরে ভাড়া বাসায় থেকে বাড়িওয়ালাকে টাকা না দিয়ে, সে টাকা দিয়ে নিজে একটা ফ্ল্যাট কিনলে এটা যে একটা হালাল ইনভেস্টমেন্ট হবে, নিজের একটা স্থায়ী ঠিকানা হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা ভালো একটা সম্পদ হবে, এই ধারণাটা অনেক মানুষের মধ্যে নেই। এ বিষয়ে সচেতনতাটা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি।
আবাসন: একজন উদ্যোক্তা হিসেবে এ সমস্যা সমাধানে আপনার কি পরামর্শ থাকবে ?
সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন: দেখুন, আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় ইস্যুগুলোতে তেমন কোনো কিছু করতে পারি না। আমরা শুধু প্রতিনিধিদের বক্তব্যগুলো নীতি-নির্ধারণী সংস্থার কাছে পৌঁছে দিতে পারি। আমাদের রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী (র্যা ডা)–এর একটি সুযোগ্য নেতৃত্ব আছে।
এ সংগঠনের মাধ্যমে আমরা সাংগঠনিকভাবে বিভিন্ন সময় স্থানীয় নিয়ন্ত্রণকারী যেসব সংস্থা আছে, যেমন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার এগুলোর মাধ্যমে আমরা সব সময় প্রচার করি, যেনো নির্মাণ সামগ্রীর দাম সব সময় সাধ্যের মধ্যে রাখা হয়। যেনো ফ্ল্যাটের দাম মধ্যবিত্তদের হাতের নাগালে থাকে। পাশাপাশি, আমরা জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজও করি। যেমন, জমিতে বা ফ্লাটে বিনিয়োগ শতভাগ হালাল। এখানে কোন ঝুঁকির সুযোগ নাই। আপনার যেসব টাকা আছে, সেগুলো এখানে ইনভেস্ট করলে শতভাগ নিরাপদে থাকবে। জমি বা ফ্লাটের দাম কখনো কমে না। দিন দিন এটার দাম বাড়তে থাকে।
আমরা এ বিষয়টা বোঝানোর চেষ্টা করি। জনগণ যত বেশি বুঝবে, তত বেশি এই সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট করতে উৎসাহী হবে। আরেকটি বিষয়, এই সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে আমি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কাছে অনুরোধ জানানো প্রসার করার কাছে অনুরোধ জানাবো, রাজশাহীতে যেন আরও বেশি করে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হয়। মানুষের হাতে যত বেশি ব্যবসা-বাণিজ্য আসবে, তত বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং মানুষের টাকাও হবে। তখন মানুষেরা আবাসন খাতেও বিনিয়োগ করবে।
আবাসন: রিয়েল স্টার প্রোপার্টিজের বিশেষত্ব কী? শহরে এতো কোম্পানি রেখে মানুষ কেনো আপনাদের ফ্লাট কিনবে?
সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন: আমরা ব্যবসা শুরু করার আগেই বিশেষভাবে স্টাডি করেছি যে, রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সাথে সাধারণ মানুষের সম্পর্কগুলো কেনো নষ্ট হয়। সাধারণ জনগণ একটা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির কাছে কি চায়। একটা কোম্পানির কাছ থেকে জনগণ যা চায় ওই জিনিসগুলো সঠিকভাবে দেওয়ার জন্য আমরা পরিকল্পনা করি। একজন ক্রেতা চান ফ্লাটটা যেনো কোম্পানি তার কাছে সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে সব নিয়ম-কানুন মেনে হ্যান্ডওভার করে দেয়। আমরা সে কাজটিই নিখুঁতভাবে করার চেষ্টা করে থাকি। যদি কাজটা আমরা কোনভাবে করতে না পারি, তাহলে আমরা তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকি।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ফ্ল্যাটের জন্যে কী ধরনের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করব। এটা নিয়ে কাস্টমারের সাথে সবসময়ই একটা মনোমালিন্য তৈরি হয়। আমরা প্রথমে ঘোষণা করেছি যে, বিল্ডিংয়ের জন্য আমরা সেরা মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করব। এটা শুধু কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, কাস্টমার সঙ্গে যে এগ্রিমেন্ট থাকে সেখানে আমরা লিখে দিয়েছি। সব সময় আমরা কাস্টমারদেরকে বলি যে, আপনারা একটা ফ্ল্যাট মালিক সমিতি গঠন করুন, আপনারা সব সময় নিজে আসুন এবং দেখেন আমরা কি ধরনের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করি।
আমাদেরকে অন্য কোম্পানি থেকে আলাদা করেছে যে বিষয়টি সেটা হচ্ছে কন্ডোমিনিয়াম বিল্ডিং নির্মাণ ফেসিলিটি। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমানে সাধারণ ক্রেতারা শুধুমাত্র বিল্ডিংয়ে বসবাস করবে এ ধারণাটা আসলে পুরনো হয়ে গেছে। এখন একটা বিল্ডিংয়ে একই সাথে দেখতে মর্ডান হতে হবে। অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেখানে ভূমিকম্প প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
পাশাপাশি বিভিন্ন মৌলিক নাগরিক সুবিধা, যেমন একটা সুইমিংপুল, বাচ্চাদের একটা খেলার জায়গা, একটা কনফারেন্স হল, নামাজ পড়ার জায়গা, এই সুযোগ-সুবিধাগুলো থাকলে একটা বিল্ডিংকে কনডোমিনিয়াম বলা হয়। সেসাথে কোন অতিরিক্ত মূল্য ছাড়াই আমরা এই সুযোগ-সুবিধাগুলো সাধারণ ক্রেতাদেরকে দিচ্ছি। যে কারণে সাধারণ জনগণ আমাদের কোম্পানির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। অন্যান্য কোম্পানি থেকে এই বিষয়গুলো আমাদের কোম্পানিকে আলাদা করেছে।
আবাসন: রিয়েল স্টারের ফ্ল্যাট নিলে ক্রেতারা কী কী সুযোগ-সুবিধা পাবেন?
সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন: আমরা সব সময় ক্রেতাদের পছন্দ রুচি আর পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে তাদেরকে লক্ষ্য করে প্রত্যেকটা প্রোডাক্টকে ডিজাইন করার চেষ্টা করি। সেইসাথে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় উপহার দেওয়ার চেষ্টা করি। যেমন, রাজশাহীতে অনেক গরম। তাই যখন কেউ কোন ফ্ল্যাট বুকিং করে, তখন তাকে আমরা ফ্রিতে একটা এসি উপহার দেই। সেই সাথে ৫০ ইঞ্চি অ্যান্ড্রয়েড টিভি উপহার হিসেবে দিয়ে থাকি। অন্যদিকে আমরা ইএমআইয়ের মাধ্যমে কিস্তিতে ফ্ল্যাট কেনার ব্যবস্থা রেখেছি।
এখানে যেহেতু মধ্যবিত্তের সংখ্যা বেশি, তাই এককালীন ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থাটা না করে আমরা ৩৬ মাস বা ৪২ মাস সময় দিয়ে, প্রতিমাসে যেন সামান্য কিছু টাকা দিয়ে একটা ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা রেখেছি। বুকিংয়ের শুরুতে আমরা মিনিমাম একটা অ্যামাউন্ট ডাউনপেমেন্ট হিসেবে নেই। পরে ইএমআইয়ের মাধ্যমে টাকাগুলো পরিশোধ করার সুযোগ দিয়ে থাকি। এরপরেও কেউ যখন কোন সমস্যায় পড়ে নির্দিষ্ট মাসে টাকা দিতে না পারেন, আমরা সেটি আলোচনা করে পরের মাসে দেওয়ার সুযোগ দিয়ে থাকি।
আবাসন: উদ্যোক্তা হিসেবে আর কোন কোন সামাজিক উদ্যোগ বা কার্যক্রমের সাথে জড়িত আছেন? সেগুলো কি কি?
সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন: আমি সব সময় আমার ব্যবসার কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকার চেষ্টা করি। আমি জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই)-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এটা একটা আন্তর্জাতিক সংগঠন। পৃথিবীর প্রায় ১২০টি দেশের সাথে এর কার্যক্রম চলমান আছে। বাংলাদেশের প্রায় ৫০টি সেক্টরে ৫ হাজারের বেশি মানুষ ১৮ থেকে ৪০ বছরের যুবকরা এই সংগঠনটি পরিচালনা করছে। আমি রাজশাহীতে জেসিআই-এর ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত আছি। আমরা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকি।
বিশ্ব বিদ্যালয় জীবন থেকে আমি দুটি সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম। রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ক্যারিয়ার ক্লাব। রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ক্লাব। এই দুটি সংগঠনেরও ব্যানারে আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম করে থাকি। একই সাথে আমাদের আরেকটি সংগঠন আছে রিয়েল স্টার সোসাইটি। আমি এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমরা বিভিন্ন সময় দরিদ্র মানুষদের পাশাপাশি যে সমস্ত স্টুডেন্টদের আর্থিক অবস্থা ভালো না, পড়াশোনা করার মতো সামর্থ্য নেই, এসব স্টুডেন্টদের আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকি। আমাদের উদ্দেশ্য এসব ছাত্র ছাত্রীদের চাকরি ব্যবস্থা করে দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর তাদের ক্যারিয়ার-ভিত্তিক বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেওয়া, বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন করা। এ সমস্ত কার্যক্রমের অর্থগুলো আসে আমাদের রিয়েল স্টার সোসাইটি থেকে।
আবাসন: যারা ফ্ল্যাট কিনবে তাদের প্রতি আপনার কি মেসেজ থাকবে?
সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন: যারা ফ্ল্যাট কিনতে চান তাদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনি যখন কোন কোম্পানি থেকে ফ্ল্যাট কিনতে যাবেন, তখন সেই কোম্পানির ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ-খবর জেনে নিয়ে তারপর সে কোম্পানি থেকে ফ্ল্যাট কিনবেন। সে কোম্পানি মালিক কারা, তাদের সাথে কে কে জড়িত আছে, কোম্পানির ব্যাকগ্রাউন্ড কি, তাদের অতীত হিস্ট্রি, কর্মকাণ্ড কেমন, তাদের অফিসটা কেমন, তাদের সিটি কর্পোরেশনের থেকে ট্রেড লাইসেন্স আছে কিনা, তারা রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী (র্যা ডা)-এর মেম্বার কি না, তাদের প্রজেক্টগুলো থেকে কাস্টমাররা যে সার্ভিস নিয়েছে তারা কতটুকু সন্তুষ্ট, সেই রিভিউগুলো ভালো করে দেখে, জেনে, স্টাডি করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
পাশাপাশি, কোন নির্দিষ্ট লোকেশনে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট থাকলে আপনাকে প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করতে হবে, সেই ফ্ল্যাট নির্মাণে কি ধরনের নির্মাণ সামগ্রি ব্যবহার করছে। শ্রমিকরা কিভাবে কাজ করছে, সেটা পরিবেশবান্ধব বিল্ডিং কি না, একটা বিল্ডিং নির্মাণ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যত ধরনের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেগুলো কি তারা নিয়ে কাজ করছে কি না, কাজের অগ্রগতি কেমন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এটা হস্তান্তর করতে পারবে কি না, এই বিষয়গুলো খুব সচেতনভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং স্বপ্নের ফ্ল্যাট সবকিছু নিয়ম মেনে বুঝে নিতে হবে।
আবাসন: তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন: যারা রিয়েল এস্টেট বিজনেস করার জন্য স্বপ্ন দেখছেন, তাদের প্রতি আমার বক্তব্য হলো, এই সেক্টরের কাজ করার জন্য একটা বড় ধরনের ইনভেস্টমেন্ট দরকার হয়। পরিচিতি দরকার হয়। ফেসভ্যালুর দরকার হয়। পাশাপাশি কিছু দক্ষতার দরকার। যেমন, ম্যানেজমেন্ট স্কিল, কনস্ট্রাকশন বিষয়ে অভিজ্ঞতা, মানুষ কি ধরনের ফ্ল্যাট পছন্দ করে, কোথায় নির্মাণ করলে বেশি ভালো হবে, কোন লোকেশনে করলে বেশি বিক্রি হবে, অনেক বিষয়ে জানার বিষয় আছে। কেউ যদি রিয়েল এস্টেট বিজনেসে আসতে চান, তাহলে প্রথমে পড়াশোনা শেষ করে যে কোন একটা কোম্পানিতে জব করুন। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন এবং নিজেকে প্রস্তুত করুন। পাশাপাশি পড়াশোনা করতে হবে। জানতে হবে। সেক্টর সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সামাজিক কর্মকান্ড অংশগ্রহণ করতে হবে। নিজের ফেসভ্যালু বাড়াতে হবে। ব্যবসা চলে বিশ্বাসে। তাই আপনার কাজকর্ম দিয়ে সেই বিশ্বাস ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে হবে।
আবাসন: উদ্যোগ নিয়ে ভবিষ্যতে কী স্বপ্ন দেখেন?
সৈয়দ আব্দুলাহ শাওন: ব্যক্তি হিসেবে আমি একজন দেশ প্রেমিক ও স্বপ্নবাজ মানুষ। রাজশাহীতে অল্প দিন হয় ব্যবসা বাণিজ্যর সুযোগ শুরু হয়েছে। তাই এখানে রাজশাহীর আবাসন সেক্টরকে বাংলাদেশের প্রধান আবাসন সেক্টর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। পাশাপাশি রাজশাহীতে যে আড়াই লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের জন্য ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। আমার কোম্পানির মাধ্যমে এই বিষয়গুলো ভবিষ্যতে নিশ্চিত করতে চাই। ঢাকা যেহেতু বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র সারা বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য নগরী, তাই ভবিষ্যতে আমাদের ব্যবসাকে ঢাকার মধ্যেও নিয়ে যেতে চাই। আমাদের কোম্পানিটাকে বাংলাদেশের একটা প্রথম সারির আবাসন কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।