বৈশ্বিক অতিধনীদের কাছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রধান শহরগুলোর আকর্ষণ ক্রমেই বাড়ছে। বিনিয়োগ ও বসবাস দুই ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে দুবাই ও আবুধাবির মতো চাকচিক্যময় শহর। বিশেষ করে কোটি ডলার বা আরো বেশি দামের বাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে এগিয়ে দুবাই।
মার্চে শেষ হওয়া বছরের প্রথম প্রান্তিকে এ খাতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখেছে শহরটি। এ খাতে ক্রেতাদের আগ্রহের পেছনে একাধিক প্রভাবককে সামনে আনছেন বিশ্লেষকরা।
২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় জানুয়ারি-মার্চে দুবাইয়ে ১ কোটি ডলার বা আরো বেশি দামের বাড়ি বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ৬ শতাংশ। এ বিনিয়োগে বিদেশী অতিধনীদের হিস্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খাত বিশ্লেষকরা।
আবাসন খাতের নেতৃত্বস্থানীয় পরামর্শক নাইট ফ্রাংক জানিয়েছে, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কোটি ডলারের ১০৫টি বাড়ির ক্ষেত্রে ক্রেতারা খরচ করেছেন ১৭৩ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের একই সময়ে এ খাতে খরচ হয়েছিল ১৬০ কোটি ডলারের বেশি।
কোটি ডলারের বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের আধিপত্য ছিল এবং চাহিদার শীর্ষে ছিল পাম গাছের আকৃতির বিখ্যাত কৃত্রিম দ্বীপ পাম জুমেইরাহ। মাল্টি-মিলিয়ন আবাসন বাবদ ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ খরচ এ দ্বীপেই হয়েছে। তালিকার পরের অবস্থানে জুমেইরাহ বে দ্বীপ ও দুবাই হিলস এস্টেট।
কয়েক বছর ধরে জ্বালানি তেলনির্ভর বাণিজ্য থেকে সরে অর্থনীতি বৈচিত্র্যকরণ নীতি অনুসরণ করছে ইউএই। এ পরিকল্পনায় বিদেশী বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে ব্যবসা, বিনিয়োগ ও বসবাসে আকর্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে অর্থশালীদের জন্য ইউএইতে বসবাস সহজ হয়ে গেছে। এ কারণে বৈশ্বিক পুঁজির বড় একটি অংশ এখন ইউএইর শহরগুলোর দিকে ধাবিত হচ্ছে, যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ অবৈধপথে অর্জিত। এসব শহর এখন ‘সেফ হাভেন’, ‘ট্র্যাক্স হ্যাভেন’ নামেও পরিচিতি।
বিশ্লেষকরা জানান, ইউইএতে বিনিয়োগকারীদের জন্য চালু করা সুবিধার দীর্ঘ তালিকায় রয়েছে সহজ মর্টগেজ রেট ও সরকারের বিভিন্ন নীতি, যা দীর্ঘমেয়াদে সেখানে বসবাস করতে ধনীদের উৎসাহিত করছে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বৈশ্বিক নানামুখী সংযোগ শহরটির আবাসিক রিয়েল এস্টেটে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের চাহিদায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
ফোরমেন ফিফডমের বিজনেস হেড ও ম্যানেজিং পার্টনার শচীন কুমার সিং বলেন, ‘মাল্টি-মিলিয়ন বা কোটি ডলারে আবাসনের জন্য দুবাইয়ের আবেদন বাড়ছে। তবে এটি শুধু বিলাসবহুল জীবনধারা এবং উচ্চ মানের সম্পত্তির জন্য নয়। বরং অনুকূল করের পরিবেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যবসা করার সহজ নীতির জন্য শহরটির আবেদন রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দুবাই শহরটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। এটি পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে একটি সেতু হিসেবে কাজ করে।’
শচীন সিং বলেন, ‘দুবাইয়ের অবকাঠামো খাতে দ্রুতগতির উন্নয়নগুলোকে বিশেষ করে ২০২৪ সালে শহরের রিয়েল এস্টেট বাজারে বিনিয়োগের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।’
নির্মাণাধীন নতুন আল মাকতুম বিমানবন্দরের উদ্বোধন হলে দুবাইয়ের আকাশপথের সক্ষমতা বেড়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে বিশ্বব্যাপী উড়োজাহাজ চলাচলের কেন্দ্র হিসেবে শহরটির অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করবে।
দুবাইয়ের রোডস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (আরটিএ) বর্তমানে আমিরাতের পরিবহন নেটওয়ার্ককে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে দুবাইজুড়ে ৭৬২টি নতুন পাবলিক বাস স্টপ নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত করেছে।
দুবাইভিত্তিক প্রপটেকের একজন শীর্ষ নির্বাহী বলেছেন, ‘এসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন আবাসিক সম্পত্তির চাহিদাকে আরো বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, সম্পত্তির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং বিনিয়োগে রিটার্ন বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।’
এদিকে বছরের প্রথম প্রান্তিকে দুবাইয়ের সামগ্রিক আবাসন খাত লেনদেনের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড গড়েছে। এ সময় ৩৪ হাজারের বেশি লেনদেন নথিভুক্ত হয়েছে। মার্চে শেষ হওয়া প্রান্তিকে লেনদেন ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। সূত্র: অ্যারাবিয়ান বিজনেস ও রয়টার্স।