২০০৮ সাল থেকে সম্পদ বৃদ্ধিতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো। এ ১৫ বছরে অঞ্চলটিতে সম্পদ বাড়ার হার ১৭৭ শতাংশের কাছাকাছি। আগামী পাঁচ বছরে বৈশ্বিক মিলিয়নেয়ার বৃদ্ধির হারে এ অঞ্চলে এগিয়ে থাকবে তাইওয়ান ও জাপান। এর মধ্যে স্বশাসিত দ্বীপটির অবস্থান বৈশ্বিকভাবেও শীর্ষে। এসব তথ্য উঠে এসেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ব্যাংক ইউবিএসের সম্প্রতি প্রকাশিত গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্টে।
গত ১৫ বছরে সম্পদ বৃদ্ধির হারে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে আমেরিকা অঞ্চল, এখানে সম্পদ বাড়ার হার ১৪৬ শতাংশ। এছাড়া তুলনামূলক কম প্রবৃদ্ধি ৪৪ শতাংশ হয়েছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা বা ইএমইএ অঞ্চলে।
২০২২ সালে বৈশ্বিক সম্পদের পরিমাণ ৩ শতাংশ হ্রাসের বিপরীতে গত বছর বেড়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে ইএমইএ অঞ্চলে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এরপর এশিয়া-প্যাসিফিকে বেড়েছে ৪ দশমিক ৪ ও আমেরিকায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
অর্ধশতাধিক বাজার বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ইউবিএস। সেখানে দেখা যায় সামগ্রিকভাবেই সম্পদ অর্জন বেড়েছে। তবে ২০২২ সালের তুলনায় গত বছর মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা কমেছে, ওই বছর ১০ লাখ ডলার বা এর বেশি সম্পদের মালিক ছিল ৫ কোটি ৯৪ হাজার মানুষ। ২০২৩ সালে কমে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৮০ লাখে।
তবে স্থাবর ও অস্থাবর দুই ধরনের সম্পদ ব্যতিক্রমীভাবে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। ২০০৮ সালের পর থেকে ঋণ বাড়ার হার ১৯২ শতাংশ, যা ইএমইএ অঞ্চলের চেয়ে ২০ গুণ ও আমেরিকার চেয়ে চার গুণ বেশি। মূলত উদীয়মান বাজারগুলো আর্থিক খাতের বিকাশের ক্ষেত্রে ঋণের সহায়তা নিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ধনীর সংখ্যায় শীর্ষ অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে দেশটিতে মিলিয়নেয়ার অর্থাৎ ১০ লাখ ডলার বা এর বেশি সম্পদ ছিল- এমন ব্যক্তির সংখ্যা ২ কোটি ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৩১৯, যা বিশ্বের মোট মিলিয়নেয়ারের ৩৮ শতাংশ। এর মধ্যে ২ হাজার ৬০০ ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ ১০০ কোটি থেকে ৫ হাজার কোটি ডলারের মধ্যে। এছাড়া ১২ জনের সম্পদের পরিমাণ ৫ হাজার ১০০ কোটি থেকে ১০ হাজার কোটি ডলারের ঘরে।
এছাড়া ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি সম্পদ রয়েছে- এমন শীর্ষ ১৪ ধনীর দেশও যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩০ বছরে প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির কারণে দেশটি সম্পদ বৃদ্ধির শক্তিশালী হারের সাক্ষী হয়েছে। ইউবিএসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৮ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে মিলিয়নেয়ার বেড়ে দাঁড়াবে ২ কোটি ৫৪ লাখ ২৫ হাজার ৭৯২ জন। অর্থাৎ ২০২৩ সালের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার হবে ১৬ শতাংশ।
মিলিয়নেয়ার হারে এর পরই রয়েছে চীনের মূল ভূখণ্ড। ৬০ লাখ ১৩ হাজার ২৮২ মিলিয়নেয়ার নিয়ে সম্পদশালীর সংখ্যায় দেশটির হিস্যা ১০ শতাংশ, যা তৃতীয় স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যের প্রায় দ্বিগুণ। ২০২৮ সাল নাগাদ এশিয়ার এ শীর্ষ অর্থনীতিতে মিলিয়নেয়ার বেড়ে দাঁড়াবে ৬৫ লাখ ৫ হাজার ৬৬৯ জন, যা ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করে।
যুক্তরাজ্য শীর্ষ পাঁচের মধ্যে একমাত্র দেশ, যেখানে ২০২৮ সাল নাগাদ মিলিয়নেয়ারের সংখ্যায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে। ২০২৩ সালে দেশটিতে ১০ লাখ ডলার বা এর বেশি সম্পদ ছিল- এমন ধনীর সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৬১ হাজার ৫৫৩। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তা ১৭ শতাংশ কমে দাঁড়াবে ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৪৬৪ জনে। তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্স। যেখানে ২০২৩ সালে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৬৮ হাজার ৩১। ২০২৮ সাল নাগাদ ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াবে ৩৩ লাখ ২২ হাজার ৪৬০ জনে।
ইউবিএসের প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী পাঁচ বছরে মিলিয়নেয়ার বৃদ্ধির হারে এগিয়ে থাকবে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যতম অর্থনীতি জাপান। গত বছর জাপানে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ২৭ হাজার ৯৬৫। ২০২৮ নাগাদ মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ২৮ শতাংশ বেড়ে হতে পারে ৩৬ লাখ ২৫ হাজার ২০৮।
তবে আগামী পাঁচ বছরে সম্পদশালী বৃদ্ধির হারে এগিয়ে থাকবে তাইওয়ান। ২০২৩ সালে এখানে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৭৯৯। আগামী পাঁচ বছরে অঞ্চলটিতে সম্পদশালী বৃদ্ধির হার হবে ৪৭ শতাংশ। ২০২৮ সাল নাগাদ তাইওয়ানে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ২৩৯।
এছাড়া তালিকার ১৬তম স্থানে থাকা এশিয়ার অন্যতম বাণিজ্যিক হাব হংকংয়ে মিলিয়নেয়ার সংখ্যা ৬ লাখ ২৯ হাজার ১৫৫। ২০২৮ সালের মধ্যে ১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াবে ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৭১৬ জনে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ১০ লাখ ডলার বা এর বেশি সম্পদ রয়েছে- এমন ব্যক্তির সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৫ শতাংশ। শতাংশীয় হারে কম দেখালেও বিশ্বের মোট পারিবারিক সম্পদের প্রায় অর্ধেক এ মিলিয়নেয়ারদের দখলে। ইউবিএসের গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্টের ১৫তম সংস্করণ হিসেবে তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২১৪ ট্রিলিয়ন ডলার। সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ও দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।