প্রকৃতিতে জোরেশোরে শীত আসতে শুরু করেছে। শীতকালে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে গরম কাপড়, সোয়েটার, লেপ কম্বলের ব্যবহার তো আছেই। সেই সঙ্গে ঘরকে কীভাবে উষ্ণ রাখা যায় সেদিকেও লক্ষ রাখা জরুরি।
শীতকালে ঘর উষ্ণ রাখার অন্যতম উপায়গুলোর একটি হচ্ছে হিটিং সিস্টেম ব্যবহার করা বা রুম হিটার ব্যবহার করা। কিন্তু হিটিং সিস্টেম প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ বিল বাড়িয়ে দিতে পারে। শীতে ঘর উষ্ণ রাখার পাশাপাশি পরিষেবা বিলও হাতের নাগালের মধ্যে রাখতে ব্যবহার করতে পারেন কিছু ঘরোয়া উপায়। যেখানে ব্যয় হবে অল্প, কিন্তু শীত ঠেকাতেও যথেষ্ট কার্যকর।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘর গরম রাখার চমৎকার ১০ পদ্ধতি—
১. ঘরের সমস্ত জানালা সঠিকভাবে বন্ধ করতে হবে। শীতের রাতে জানালার কাচ যেন ভাল করে বন্ধ করা হয়। বাইরের তাপমাত্রা বাড়ির ভেতরের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হলে দিনের বেলা এগুলো খোলা যেতে পারে। জানালা যতটা সম্ভব এয়ার টাইট রাখতে হবে। তবে জানালা এয়ার টাইট না হলে, খোলা যায় এমন প্লাস্টিক দিয়ে ভালভাবে আটকে দেওয়া যায়। আর চোখে পরার মতো কোনো ফুটো থাকলে, তার সামনে একটি তোয়ালে দেওয়া যেতে পারে।
২. সূর্যালোক আসছে এমন জানালার উপরে স্বচ্ছ শাওয়ার কার্টেন ব্যবহার করতে হবে। এটি ঠান্ডা বাতাসকে বাইরে রাখবে, কিন্তু সূর্যের উষ্ণতা অবিরাম আসবে ঘরে। ফলে ঘরকে ঠান্ডা বাতাস না দিয়ে গরম করবে। এছাড়া পরিষ্কার প্লাস্টিকের চাদর দিয়েও জানালা ঢেকে রাখা যেতে পারে।
৩. ভারী পর্দা লাগাতে হবে। ভারী পর্দার সেট আসলে বাতাসকে আটকে দিতে পারে। কিন্তু সূর্য আকাশে থাকার সময় এদের খুলে রাখতে হবে এবং সূর্য অস্ত গেলে বন্ধ করে দিতে হবে।
৪. দরজা ভাল করে আটকে দিতে হবে। দরজার ফ্রেমের চারপাশে এবং দরজার নিচে পরীক্ষা করা জরুরি। ওয়েদার স্ট্রিপ বা দরজার নিচে লাগানোর ঝাড়ু বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলো ভাল কাজ দেবে। আর কিছুই পাওয়া না গেলে দরজার নিচে একটি তোয়ালে ভরে দিলেও কাজ চলে যাবে।
৫. দেখতে হবে, সূর্যের আলো যেন যতটা সম্ভব বাড়িতে এসে পড়ে। বাড়িতে সূর্যের রশ্মি পৌঁছাতে পারে এমন বাধাগুলো (যেমন গাছপালা বা কোনো শেড) ভাল করে পরীক্ষা করতে হবে। বাড়ির রৌদ্রোজ্জ্বল দিকে দেয়ালের সঙ্গে ঝুঁকে থাকা এমন সব জিনিস সরিয়ে ফেলা ভালো।
৬. ঘর গরম রাখার জন্য মেঝেতে একটি কার্পেট রেখে দিলে কাজে দিতে পারে। কার্পেট মেঝে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া তাপ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এগুলো সাধারণত কাঠ বা পাথরের মেঝের তুলনায় স্পর্শে বেশি উষ্ণ বোধ হয়। তাই হাঁটতেও অসুবিধা হয় না।
৭. ফায়ারপ্লেস থাকলে তো কোনো কথায় নেই, কিন্তু না থাকলেও ঘর উষ্ণ রাখতে আগুন ব্যবহার করা যেতে পারে। আগুন জ্বালিয়ে ঘর গরম করা বেশ স্বাভাবিক হলেও, মনে রাখা দরকার হালকা বাতাস প্রবেশ করার জায়গা যেন খোলা থাকে।
৮. রান্না করলেও ঘরকেও উষ্ণ রাখতে সাহায্য করতে পারে। গ্যাস ওভেনের উষ্ণতা প্রথমে ঘরকে গরম রাখবে এবং পরে খাবারের মাধ্যমে শরীরকে। আসলে ওভেনের তাপ ঘরের বাতাস শুকাতে এবং রান্নাঘর গরম করতে সাহায্য করবে। রান্না করার সময় রান্নাঘরটি যেমন উষ্ণ হবে, তেমনই একটি দুর্দান্ত বাড়িতে রান্না করা খাবারও পাওয়া যাবে!
৯. মোমবাতি জ্বালালেও ভাল কাজ দেবে। আসলে একটি মোমবাতি প্রচুর তাপ উৎপন্ন করতে পারে। কিন্তু সেগুলো কোথায় রাখা হয়েছে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। চাইলে একটি মোমবাতি হিটার ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি আসল হিটারের মতো বেশি তাপ তৈরি না করলেও খুব সস্তায় উষ্ণতা তৈরি করবে।
১০. সব সময় কিছু লাইট জ্বালিয়ে রেখে দেওয়া যেতে পারে। বাল্ব তার শক্তির ৯৫% পর্যন্ত আলোর পরিবর্তে তাপ হিসাবে প্রকাশ পায়। ফলে একটা বাল্বও একটি অত্যন্ত দক্ষ তাপের উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে।