ফিচার
লিফট ব্যবহারে সতর্কতা

ইট, কাঠ, পাথরের শহুরে জীবনে উঁচু ভবন এখন মাথা উঁচু করেই ঠাঁই করে নিয়েছে প্রায় সবখানেই। অফিস, বাসাবাড়ি, হাসপাতাল-সবকিছুই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উঁচু হওয়ায় ওঠানামার সুবিধার্থে লিফট ব্যবহার করা হয়। লিফট ব্যবহারের সুবিধা যেমন রয়েছে তেমনি ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে বা লিফটে থাকাকালীন কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে আচমকাই বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। তাই লিফট ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি বিষয় জানা থাকলে আপনি সাবধানতা অবলম্বন করতে পারবেন এবং সতর্ক থাকতে পারবেন।
- লিফটের সেন্সর কাজ করছে কি না, দেখে নিন। আজকাল সব লিফটেই সেন্সর থাকে। অর্থাৎ, লিফটের দরজার লাইনের ওপর ব্যক্তির উপস্থিতি যাচাই করে লিফট খোলে বা বন্ধ হয়। তবে অনেক সময় এই সেন্সর কাজ না-ও করতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে লিফটে ওঠার আগে দরজার মাঝবরাবর বা পাশে হাত রাখবেন। এতে আগে থেকেই বুঝতে পারবেন সেন্সর কাজ করছে কি না এবং সে অনুযায়ী পরিস্থিতি বুঝে লিফট ব্যবহার করবেন।
- লিফটে উঠেই যে ফ্লোরে যাবেন, সেই বাটন প্রেস করার পর লিফটের প্রয়োজনীয় কিছু বাটন, যেমন ইমার্জেন্সি অ্যালার্ম, ইমার্জেন্সি স্টপ এগুলো আছে কি না, দেখে নিন। হঠাৎ ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে অথবা লিফটে যান্ত্রিক গোলযোগ হলে এই বাটনগুলো ব্যবহার করতে হতে পারে।
- ধারণক্ষমতা অতিক্রম করছে কি না, দেখুন। সব লিফটেরই একটি নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা থাকে, সেই ধারণক্ষমতার বাইরে লোকসংখ্যা লিফটে উঠলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। লিফটে যে কয়জন লোকের ধারণক্ষমতা থাকে, তার অতিরিক্ত লোক উঠলে লিফটের অ্যালার্ম বেজে ওঠে। সে সময় একজন একজন করে লিফট থেকে বের হয়ে ধারণক্ষমতার মধ্যে এসে এরপর ওঠানামা করা উচিত।
- ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠলে লিফট ব্যবহার করবেন না। ভবনে আগুন লেগে ফায়ার অ্যালার্ম বাজলে হন্তদন্ত হয়ে লিফটে না উঠে ইমার্জেন্সি এক্সিটের জন্য যে সিঁড়ি আছে, সেখান দিয়ে নামুন। কারণ, ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়লে যান্ত্রিক ত্রুটি হয়ে লিফট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- স্টপ বাটনে যেন চাপ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। বিশেষ করে শিশুরা লিফটে উঠলে এই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত। খেলাচ্ছলে শিশুরা অনেক সময় লিফটের বাটন চেপে দেয়। তাই শিশুদের নিয়ে লিফটে উঠলে অবশ্যই এই বিষয়টি লক্ষ রেখে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। এ ছাড়া শিশুরা যেন লিফটের দুই দরজার মাঝে হাত না রাখে বা দরজা থেকে সব সময় একটু দূরে দাঁড়ায় সেই বিষয়টিও লক্ষ রাখবেন।
- হঠাৎ লিফট বন্ধ হয়ে গেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন না। ইমার্জেন্সি কল বাটন বা ইমার্জেন্সি ফোনকল করে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করুন।
- যে লিফটে আপনি নিয়মিত ওঠানামা করেন, সেটিতে কোনো রকম সমস্যা দেখলে অবশ্যই বিল্ডিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজনকে জানিয়ে দিন। আগে থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে পরবর্তী সময়ে হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে।
ফিচার
প্রথম ফ্ল্যাট কিনে ঠকতে না চাইলে মেনে চলুন এই ১০ কৌশল

ছয় বছর আগে রাজধানীর শাহীনবাগে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কিনতে স্বল্প পরিচিত এক আবাসন প্রতিষ্ঠানে বুকিং দেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী মাজহার হোসেন। তারপর প্রতি মাসে কিস্তিও পরিশোধ করতে থাকেন। তবে কয়েক মাস যেতেই তিনি লক্ষ করলেন, প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী।
মাজহার হোসেন জানালেন, এখন ফ্ল্যাট বুঝে পাইনি। কবে পাব সেটি নিশ্চিত না। ভবনের কাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হলেও অন্যান্য কাজ বাকি। আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিক কেবল আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছেন।
অধিকাংশ মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার নিজেদের স্থায়ী ঠিকানার জন্য একটা বাড়ি বা ফ্ল্যাটের স্বপ্ন দেখে। সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ফ্ল্যাট কিনতে অনেকেই সারা জীবনের সঞ্চয় বিনিয়োগ করেন। তাঁদের কেউ কেউ মাজহার হোসেনর মতো প্রথম অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে গিয়ে হয়রানির মুখে পড়েন। এখান থেকে বেরিয়ে আসাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
রাজধানীতে জমির দাম অত্যধিক। নির্মাণসামগ্রীর দামও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সে জন্য ফ্ল্যাটের দাম অনেক বছর ধরেই আকাশচুম্বী। তবে চাহিদা বেশি থাকায় এই খাতে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও অনেক। তাদের অধিকাংশই নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা করলেও কিছু প্রতিষ্ঠান সেসবের তোয়াক্কা করছে না। চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। অনেকে বুঝে, না বুঝে সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন। পরে দেখেন, প্রতিষ্ঠানের কথা আর কাজে মিল নেই। তখন বছরের পর বছর ঘুরেও কাঙ্ক্ষিত ফ্ল্যাট বুঝে পান না। নিজের একটি বাড়ির স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।
নিজের ফ্ল্যাটের স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন না হয়ে ওঠে, সে জন্য নানা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আপনি যদি জীবনের প্রথম ফ্ল্যাট কেনার চিন্তাভাবনা করেন, তাহলে চুক্তি করার আগে ১০টি কৌশল জেনে নেওয়া উচিত। এগুলো বিবেচনা করে ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নিলে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ঝামেলার মুখে পড়া থেকে আপনি রক্ষা পেতে পারেন—
১. সাধ আর সাধ্য
ফ্ল্যাট কেনার আগে আপনার সাধ আর সাধ্যের মধ্যকার বোঝাপড়া সম্পন্ন করতে হবে। ধরা যাক, আপনার ৮০ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট কেনার আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে। তবে আপনি সাতপাঁচ না ভেবে গৃহঋণ নিয়ে দুই কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনে ফেললেন। কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে দেখলেন, দৈনন্দিন সংসার চালানো কঠিন। একপর্যায়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ। তখন ফ্ল্যাট বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। সে জন্য বাজেট অনুযায়ী ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।
রাজধানী ঢাকায় কমবেশি ৬০-৭০ লাখ থেকে শুরু করে ১৫-২০ কোটি টাকার ফ্ল্যাটও আছে। গুলশান-বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারার মতো এলাকায় অভিজাত ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ৩৬ হাজার টাকা। আবার বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও, মিরপুরসহ কিছুটা পিছিয়ে থাকা এলাকায় প্রতি বর্গফুট ১০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আবাসন খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাট কিনতে গেলে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা করে।
অভিজাত এলাকার বাইরে অন্য সব এলাকায় স্থানীয় ছোট কোম্পানির আবাসন প্রকল্প রয়েছে। তাদের ফ্ল্যাটের দাম তুলনামূলক কম। আবার কয়েকজন মিলে জমি কিনে বাড়ি বানাতে পারলে ফ্ল্যাটের দাম কম পড়ে। পুরোনো ফ্ল্যাটের দামও কম। আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে সেটিও বিবেচনা করতে পারেন।
২. প্রয়োজন মিটবে যেখানে
অনেকেই কোথায় ফ্ল্যাট কিনবেন সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। তবে সন্তানের লেখাপড়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই ফ্ল্যাট কেনার এলাকা বাছাই করা দরকার। আপনি যেখানে ফ্ল্যাট কিনতে চান, তার আশপাশে ভালো স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় আছে কি না, দেখে নিন। আবার ফ্ল্যাটটি যেখানে, সেখান থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার যোগাযোগব্যবস্থা কেমন, তা-ও বিবেচনা করতে হবে। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হলে অফিস কিছুটা দূরে হলেও সমস্যা হয় না। তা ছাড়া ফ্ল্যাটের আশপাশের রাস্তাঘাট, বাজারসুবিধা কেমন, সেসবও বিবেচনায় রাখা দরকার।
৩. ভবনের সুযোগ-সুবিধা
আবাসন প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ এখন আর বিলাসিতা নয়, নিত্যদিনের প্রয়োজন। তাই ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল, কমিউনিটি স্পেস, বাচ্চাদের খেলার জায়গা, গাড়ি পার্কিং, নিরাপত্তাব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সরবরাহের বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর নিতে হবে। তবে সবগুলো সুবিধা নিতে গেলে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে, সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
৪. সঠিক প্রতিষ্ঠান বাছাই
কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কিনছেন, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার কারণ সেই প্রতিষ্ঠান যদি নিয়মকানুন না মেনে ব্যবসা করে, তাহলে আপনি বিপদে পড়বেন। সে জন্য খোঁজ নিন, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাপার্টমেন্ট হস্তান্তরের অতীত ইতিহাস কেমন। প্রতিষ্ঠানটি আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সদস্যপদ আছে কি না, সেটিও যাচাই করুন। কারণ পরবর্তী ফ্ল্যাটসংক্রান্ত কোনো ঝামেলা হলে আপনি সংগঠনটির দ্বারস্থ হতে পারবেন। এ ধরনের জটিলতা নিরসনের রিহ্যাবের পৃথক কমিটিও রয়েছে। তারা নিয়মিতই এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি করে। তবে কেবল নিজেদের সদস্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগই আমলে নেয় রিহ্যাব। ফলে আবাসন প্রতিষ্ঠানের রিহ্যাব সদস্যপদ থাকাটাও জরুরি।
৫. অনুমোদনহীন প্রকল্পে সতর্ক
রাজধানীতে আবাসিক, বাণিজ্যিক যেকোনো ভবনের অনুমোদন দিয়ে থাকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। অনুমোদন না নিয়ে ভবন করলে সেটি ভেঙে দিতে পারে রাজউক। সে জন্য আপনি যে আবাসন প্রকল্পের ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা করছেন, সেটি রাজউক অনুমোদিত কি না, তা যাচাই করে দেখতে হবে।
৬. জমির খোঁজও লাগবে
আপনি যে আবাসন প্রকল্পের ফ্ল্যাট কিনতে চান, সেটি যে জমিতে নির্মাণ হবে বা হচ্ছে, সেটি নিষ্কণ্টক কি না, যাচাই করতে হবে। ভূমি কার্যালয়ে গিয়ে তল্লাশি দিয়ে জমির মালিকানা ও দখলদার সম্পর্কে সব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ যে জমির ওপর আবাসিক প্রকল্প হবে, সেটির দলিলপত্র যাচাই করে নেওয়া ভালো। জমি নিয়ে কোনো মামলা আছে কি না, সেটি দেখতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কা থাকবে।
৭. শর্তের খুঁটিনাটি জানুন
ফ্ল্যাট কেনার আগে আবাসন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির সব শর্ত ভালো করে পড়ে দেখতে হবে। চুক্তিতে সুস্পষ্টভাবে ফ্ল্যাট কেনার শর্ত, ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত উপকরণ, ফ্ল্যাটের অনুমোদিত নকশা, ভবনের কোন ফ্ল্যাটটি কিনছেন এবং ক্রেতা যদি উন্নত মানসম্পন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করতে চান, তাহলে দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মতি—এ বিষয়গুলো উল্লেখ থাকতে হবে। এ ছাড়া একেক আবাসন প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাটের আয়তন একেকভাবে পরিমাপ করে। ফলে ফ্ল্যাটের মোট আয়তন ও ব্যবহারযোগ্য আয়তনের বিষয়ে পরিষ্কারভাবে আগেই বুঝে নিতে হবে। সেটি চুক্তিতে রয়েছে কি না, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গেও পরামর্শ করে নেওয়া যেতে পারে।
৮. কিস্তি নিয়ে পরিষ্কার ধারণা
ফ্ল্যাট যদি কিস্তিতে কেনা হয়, তাহলে কত কিস্তি ও কবে হস্তান্তর হবে, সেটি চুক্তিতে উল্লেখ থাকতে হবে। কোনো কারণে ফ্ল্যাট কেনা না হলে সেটি কীভাবে নিষ্পত্তি হবে, তা–ও স্পষ্টভাবে থাকতে হবে।
৯. কোনটি কেনা লাভজনক
রেডি বা প্রস্তুত, নির্মাণাধীন নাকি শিগগিরই নির্মাণ শুরু হবে, এমন প্রকল্পের ফ্ল্যাট কিনবেন, সেটিও চূড়ান্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রস্তুত ফ্ল্যাটের দাম বেশি। নির্মাণ শুরু হবে এমন ফ্ল্যাট বুঝে পেতে সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনাটা আপনার জন্য বেশি সুবিধাজনক। কারণ, যত দ্রুত আপনি নিজের বাসা বা ফ্ল্যাটে উঠতে পারবেন, তাতে বাসাভাড়া বাবদ খরচ কমবে। সেই টাকা দিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধে সুবিধা হবে আপনার।
১০. ঋণ নিন বুঝেশুনে
বর্তমানে ব্যাংকগুলো একজন গ্রাহককে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ দিতে পারে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (লিজিং কোম্পানি) আগে থেকেই গ্রাহকের চাহিদামতো ঋণ দিয়ে দেয়। আবার সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি) অন্যদের চেয়ে কম সুদহারে ঋণ দেয়। ফলে ঋণ নেওয়ার আগে সুদহারের পাশাপাশি শর্তগুলো ভালো করে দেখে নিন।
ফিচার
যে জিনিসটি ছাড়া আধুনিক আবাসন অপরিপূর্ণ

র৵াংগ্স প্রপার্টিজের ডিজাইন ও পরিকল্পনার কাজে অনেক বছর যুক্ত থাকার পর ২০১৫ সালে একদল স্থপতি মিলে গড়ে তোলেন ইনস্পেস আর্কিটেক্টস লিমিটেড। আবাসন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদুর রহমান। তিন প্রিন্সিপাল আর্কিটেক্ট হিমেল কুমার সাহা, ওয়াহিদ আহমেদ ও আয়েশা শফিকের সঙ্গে আছে ৬৫ জনের অভিজ্ঞ একটি দল। বুদ্ধিবৃত্তি ও সৃজনশীলতার সমন্বয়ে আট বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়মিতই তাঁরা তৈরি করছে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনা। সবুজ পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিজেদের স্থাপনায় ভার্টিক্যাল গার্ডেন, ল্যান্ডস্কেপিং, সবুজ ফেকাড ও রুফটপ গার্ডেনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে ইনস্পেস আর্কিটেক্ট। সবুজ এই অংশগুলো ছাড়া আধুনিক বাসস্থান অপরিপূর্ণ, মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা।
পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবন যখন ভরসার নাম
আধুনিক স্থাপত্যে পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনকে কেন্দ্রে রেখে কাজ করার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো শহরে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সেই ধারায় কাজ করছে ইনস্পেস আর্কিটেক্টস। তাদের বিভিন্ন ভবন বা স্থাপনার নকশায় পরিবেশের পাশাপাশি অগ্রাধিকার পায় সবুজ। শুধু ফুলের টব বা ছাদবাগান নয়; ভবনের প্রতিটি স্তরে মেলে সবুজের দেখা। ইনস্পেসের ডিজাইন টেবিল থেকে আসা ডায়োরামা, মিরান্ডা, মেরিসা, রিফ্লেকশন, পার্ক টেরেস, মেমোরি ৭১, হোয়াইট ওকসহ বিভিন্ন ভবনের দিকে তাকালেই প্রশান্তি অনুভব করবেন যে কেউ। প্রাকৃতিক উপাদান ও উদ্ভিদের ব্যবহার ভবনের অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে রাখে স্বাস্থ্যকর, বায়ুপ্রবাহকে করে অবাধ, সেই সঙ্গে কমায় শক্তির খরচ। তাই ইনস্পেস আর্কিটেক্টসের ভবন নির্মাণের একটি কেন্দ্রীয় ভাবনা হয়ে উঠেছে এখন সবুজ নকশা।
নকশায় ভবিষ্যৎ অন্দরে মিনিমালিজম
ইনস্পেস আর্কিটেক্টসের নকশা করা ডায়োরামা ভবনটি ঘুরে দেখছিলাম। গুলশানে নির্মাণ করা হয়েছে এই আবাসিক ভবন। বারান্দায় সবুজের উপস্থিতি। গুলশানের মতো ব্যস্ত এলাকায়ও বাসিন্দারা পাচ্ছেন প্রকৃতির স্পর্শ। ইনস্পেসের স্থপতি ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘সবুজ স্থাপনায় মিনিমালিস্ট ডিজাইন, স্থাপত্যশিল্পে নতুন এক বিপ্লব আনতে কাজ করছি আমরা। সারা বিশ্বেই এখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভবনের ডিজাইন করা হচ্ছে। একই ভাবনা নিয়ে আমরাও বাংলাদেশে কাজ করছি।’
স্থাপত্যের এক নতুন ধারা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন মিনিমালিজম। ইনস্পেস আর্কিটেক্টসের কাজেও অতিরিক্ত জটিলতা আর অপ্রয়োজনীয় সাজসজ্জার বদলে সহজ ও ব্যবহারিক ভাবনাই দেখা যায় বেশি। ভবনের ইন্টেরিয়র ডিজাইনে প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের প্রবাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভেতরের আলোক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। প্রাকৃতিক উপাদানের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে করে ভবনের পরিবেশগত প্রভাব যেমন ঠিক থাকছে, তেমনি ব্যবহারকারীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ফেলছে ইতিবাচক প্রভাব।
‘পরিবেশের ভারসাম্যের বিষয়টি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ’
স্থপতি ওয়াহিদুর রহমান
শৈশব থেকেই নকশা ও স্থাপত্যের প্রতি আমার গভীর আকর্ষণ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় আরও গভীরতর হয়েছে সেই আগ্রহ। র৵াংগ্স প্রপার্টিজ লিমিটেডে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, স্থাপত্য কেবল ভবন নির্মাণেরই নয়, জীবনযাপনেরও অংশ। ইনস্পেস আর্কিটেক্টসে আমরা নান্দনিকতা, পরিবেশবান্ধব নকশা, ফাংশনাল ডিটেইল ডিজাইন ও স্থায়িত্বের ওপর গুরুত্ব দিই।
প্রতিটি প্রকল্পে শুধু বসবাসের চাহিদাই মেটাই না, পাশাপাশি ভবনের সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্যের দিকটাও আমাদের খেয়ালে থাকে। আমরা এমন ভবন নির্মাণে বিশ্বাসী, যা দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশ ও মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমাদের নকশায় প্রাকৃতিক আলো–বাতাসের প্রবাহ এবং আধুনিক উপকরণের ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এতে করে শক্তি খরচ হয় কম ও বাড়ে ভবনের স্থায়িত্ব। আমাদের লক্ষ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সবুজ, সুন্দর আর টেকসই একটি পরিবেশ তৈরি করা।
প্রতিটি স্থাপনার নকশায় আমরা ত্রিভুজ বা চতুর্ভুজের মতো সরল কিন্তু কার্যকর জ্যামিতিক বিন্যাস ব্যবহার করি, যা দৃষ্টিনন্দন ও ব্যবহারের উপযোগী। ভবনের ভেতরের স্থানগুলোকে আরও উন্মুক্ত, আরামদায়ক ও ব্যবহারবান্ধব করতে ফাংশনাল ডিজাইন করি।
সবুজ ফেকাড বা গাছপালায় আচ্ছাদিত ভবনের বাইরের অংশ পরিবেশবান্ধব নকশার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই পদ্ধতিতে শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, বাতাসের গুণগত মান ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখা যায়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে সবুজায়ন ও ফাংশনাল ডিজাইনের ভবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনসংখ্যা ও পরিবেশগত চাপের কথা মাথায় রেখে প্রতিটি নকশায় আমরা গ্রাহকের নিরাপত্তা ও পরিবেশের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
-
বিবিধ2 years ago
বাংলাদেশে প্রচলিত বাড়ি ভাড়ার চুক্তি, নিয়ম ও নীতিমালা
-
নির্বাচিত প্রতিবেদন1 year ago
রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করবেন যেভাবে
-
আবাসন সংবাদ4 weeks ago
সীমান্ত রিয়েল এস্টেট এর অনুমোদনহীন সীমান্ত সিটি ও সীমান্ত কান্ট্রি প্রকল্প
-
আবাসন সংবাদ4 weeks ago
রাজউকের নির্দেশে নর্থ সাউথ গ্রীন সিটি বন্ধ
-
আবাসন সংবাদ1 month ago
মাত্র ২৪ ঘন্টায় খতিয়ানের ভূল সংশোধনের সরকারি নির্দেশনা
-
ফিচার4 weeks ago
প্রথম ফ্ল্যাট কিনে ঠকতে না চাইলে মেনে চলুন এই ১০ কৌশল
-
আইন-কানুন1 year ago
রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের সাথে জমি বা ফ্ল্যাট নিয়ে সমস্যা ও তার প্রতিকার (১ম পর্ব)
-
আবাসন সংবাদ1 month ago
প্রিমিয়াম হোল্ডিংয়ের বর্ষপূর্তিতে ৩ দিনব্যাপী একক আবাসন মেলা অনুষ্ঠিত