বাংলাদেশে এখন বানানো হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন মেশিন দিয়ে বিশ্বমানের ও নান্দনিক ফার্নিচার। টেকসই ও গুণগতমানসম্পন্ন। সারা দেশে এই শিল্পের কর্মসংস্থানের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ৪০% নারী কর্মী। এখানে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও বৈদাশিক মুদ্রা আয়ের রয়েছে অফুরান সম্ভাবনা। তাই, সরকার যদি এই শিল্পখাতে একটু সুনজর দেয়, তাহলে এই খাতে আরো অনেক মানুষ কাজ করার সুযোগ পাবে। বছরে গার্মেন্টস খাত থেকে যেমন একটা বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হচ্ছে, এই খাতে সরকার গুরুত্ব ও সুনজর দিলে, এখান থেকেও একই ভাবে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।
আবাসনের সঙ্গে একান্ত আলাপে কথাগুলো বলেছেন ওমেগা হোম সলিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির মিরপুর অঞ্চলের সভাপতি আলহাজ শেখ আব্দুল আউয়াল।
সম্প্রতি কাজীপাড়ায় ওমেগা হোম সলিউশনের অফিসে আবাসনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। আলোচনায় উঠে আসে আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত মাসব্যাপী রাস্তার দুই পাশে সব ফার্নিচারের দোকানে চলমান ‘মিরপুর ফার্নিচার উৎসব’-এর নানান বিষয়সহ ফার্নিচার শিল্পখাতের বর্তমান অবস্থা, সমস্যা ও সমাধান।
আবাসন: মিরপুর ফার্নিচার উৎসব কবে থেকে এবং কি উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল?
শেখ আব্দুল আউয়াল: রাজধানীর মিরপুরে যে এতো বড় একটা ফার্নিচার বা আসবাবপত্রের মার্কেট আছে, এটা সারা দেশের মানুষকে জানাতে ২০১৯ সাল থেকে আমরা বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির মিরপুর অঞ্চলের উদ্যোগে এই ফার্নিচার উৎসবের আয়োজন করে আসছি। মহামারি করোনার আগে দুইবার ও পরে একবার। এবার চতুর্থবারের মতো আয়োজন করেছি।
মিরপুরের আমাদের ফার্নিচার ব্যবসায়ীদের শোরুম ও দোকানগুলো আগারগাঁও থেকে শুরু করে মিরপুর-১০ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে রয়েছে। কিন্তু মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে গত দুই বছর ধরে আমাদের এখান দিয়ে গাড়ি-ঘোড়া প্রায় বন্ধ ছিল। এখান দিয়ে গাড়ি-ঘোড়া, যাওয়া-আসা করতে পারত না। ফলে আমাদের ফার্নিচার ব্যবসায়ীদের দুই বছর ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর সবাই এখান দিয়ে যাওয়া আসা করতে পারছেন। এই বিষয়টা সারা দেশের মানুষকে জানান দেওয়ার জন্যও আমরা গত বছসর ও এই বছসর ফার্নিচার উৎসবের আয়োজন করছি। আশা করছি এটা আগামীতেও চলমান থাকবে।
আবাসন: এই ফার্নিচার উৎসবে কি কি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে?
শেখ আব্দুল আউয়াল: দেখুন, সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের পছন্দ ও রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ এখন বাসা-বাড়ি, ফ্ল্যাট, শোবার ঘর, স্কুল-কলেজ, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, কোরপোরেট অফিস, আদালত, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, পার্ক, স্পা সেন্টার, বিউটি পার্লার, ক্যাম্পিং সাইট এবং দোকান সাজাচ্ছে অত্যাধুনিক ফার্নিচার দিয়ে। আমরা এসব ধরনের ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে তাদের প্রয়োজন মতো এ উৎসবে সব ধরনের ফার্নিচার প্রদর্শন করা হচ্ছে। একজন ক্রেতার যত ধরনের ফার্নিচার প্রয়োজন হয় সব ধরনের, সব কোয়ালিটির ফার্নিচারি এখানে পাওয়া যাচ্ছে। প্রত্যেকটা ফার্নিচারই টেকসই ও গুণগত মানসম্পন্ন।
>>আরও পড়ুন: ‘রিয়েল স্টার প্রোপার্টিজকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই’
মেলায় ওমেগা, হাতিল, আক্তার, নাভানা, অটবি, পারটেক্স, রিগাল, নাদিয়া এবং ব্রাদার্স প্রভৃতি দেশীয় ব্র্যান্ডের রয়েছে স্পেস সেভিং বেড, সোফা কাম বেড, স্পেস সেভিং ডাইনিং সেট, ওয়াল ক্যাবিনেট, চেয়ার অ্যান্ড ল্যাডার, রিডিং ইউনিট, ডাইনিং রুম সেট, লিভিং রুম সেট, ডিভান সেট, বেড রুম সেট, হসপিটাল বেড, ইমার্জেন্সী কার্ট, হুইল চেয়ার, ক্যাবিনেট, কাপবোর্ড, ট্রলি, আইসোলেশন স্ক্রীন, কিক বাকেট, ওভার বেড টেবিল ফার্নিচার, বিভিন্ন ধরনের ম্যাট্রেস, পিলো ও কমফোর্টার, রকিং চেয়ার, বিভিন্ন ধরনের শেলফ ও শো-পিস রাখার জন্য বিভিন্ন সাইড টেবিল।
অফিসে ব্যবহারের জন্য কনফারেন্স টেবিল, স্যুইভেল চেয়াল, ড্রয়ার ইউনিট, ভিজিটর সোফাসহ আকর্ষণীয় ডিজাইনের ফার্নিচারের খাট, আলমিরা, ড্রেসিং টেবিল, খাবার টেবিল ইত্যাদি। আমাদের সবার প্রাণান্তর চেষ্টা থাকে ক্রেতা যেনো এই মেলায় এসে তার পছন্দ মতো সাধ্যের মধ্যে সুলভ ও সাশ্রয়ী মূল্যে সেরা ও গুণগত মানসম্পন্ন সুন্দর ফার্নিচারটা কিনতে পারে।
আবাসন: বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির আয়োজনে ঢাকায় জাতীয় পরিসরে কোন আয়োজন করেন কি না?
শেখ আব্দুল আউয়াল: আমরা গত ১৭ বছর ধরে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরাতে (আইসিসিবি) পাঁচ দিনব্যাপী জাতীয়ভাবে ফার্নিচার মেলার আয়োজন করে আসছি। এবারও ১৮তম মেলার আয়োজন করা হরে আগামী অক্টোবরে। করোনার কারণে দুই বছর পর গত বছরে মেলার আয়োজন করা হয়। ওই মেলার উদ্দেশ্য হলো দেশীয় ফার্নিচার শিল্পের বিকাশ ঘটানোর পাশাপাশি দেশের বাইরেও রপ্তানি বাড়ানো।
আবাসন: এই মেলার বিশেষত্ব কী?
শেখ আব্দুল আউয়াল: এটা জাতীয় পরিসরে আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ মেলায় সবাই অংশগ্রহণ করতে পারেন না। মেলায় ওমেগা, হাতিল, আক্তার, নাভানা, অটবি, পারটেক্স, রিগাল, নাদিয়া এবং ব্রাদার্স-এর মতো দেশীয় বড় ব্র্যান্ডগুলো এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়। কারণ এখানে অংশগ্রহণ করতে যে যোগ্যতা লাগে সেটা সবার থাকে না। যেমন, এখানে আমরা সারা বছর পরিকল্পনা করি নতুন কিছু তৈরি করার। আর সেই নতুন তৈরি করা ফার্নিচারটি আমরা মেলায় প্রদর্শন করি।
>>আরও পড়ুন:মধ্যবিত্তদের আবাসন চাহিদা মেটাতে কাজ করছে প্রিমিয়ার হোল্ডিংস : রওশন আল মাহমুদ
প্রত্যেকটি কোম্পানির এই প্রতিযোগিতা থাকে কে কত অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন গুণগত মানসম্পন্ন সেরা মানের নান্দনিক ডিজাইনের ফার্নিচার তৈরি করে এখানে প্রদর্শন করতে পারে। যেন ক্রেতারা তাদের পছন্দের ডিজাইনের অত্যাধুনিক গুণগত মানসম্পন্ন সেরা মানের ফার্নিচারটা কিনতে পারে। যাদের কারখানা নেই, তারা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। আবার খরচেরও বিষয় থাকে। অনেক খরচ হয়। এর জন্য সারাদেশ থেকে নির্বাচিত ও স্বনামধন্য নামিদামি ব্র্যান্ডগুলো এখানে তাদের সেরা ফার্নিচার নিয়ে এখানে অংশগ্রহণ সুযোগ পায়।
আবাসন: রাজধানীর অন্য মার্কেটগুলোর তুলনায় মেলার ফার্নিচারের দাম ও মানে কোনো পার্থক্য রয়েছে কি না?
শেখ আব্দুল আউয়াল: রাজধানীর অন্যান্য মার্কেটে যে ফার্নিচারগুলো রয়েছে সেগুলোর দাম এবং এখানকার ফার্নিচারগুলোর দামের মধ্যে খুব একটা বেশি পার্থক্য নেই। কারণ আমরা যে ফার্নিচারগুলো তৈরি করি আর সারা ঢাকা সিটির অন্যান্য মার্কেটে যেসব ফার্নিচারগুলো রয়েছে, আমরা সবাই একই কাঁচামাল ব্যবহার করে একই প্রযুক্তিতে তৈরি করি। তৈরি খরচ তো একই। তাই বিক্রিও করতে হয় সে অনুসারে। মেলা উপলক্ষে আমরা ক্রেতাদের জন্য কিছু ছাড় ও উপহারের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু ফার্নিচারের গুণগত মানে কোন পার্থক্য নেই।
আবাসন: মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ কি চমক রয়েছে?
শেখ আব্দুল আউয়াল: মেলায় ক্রেতাদের ফার্নিচার কেনায় থাকছে আকর্ষণীয় মূল্য ছাড় ও অফার। সেসাথে থাকছে অসংখ্য পুরস্কার জেতার সুযোগ। ফার্নিচার কেনায় থাকছে ২০ হাজার টাকার ক্র্যাচ কার্ড। ক্র্যাচ কার্ড ঘষলেই মিলছে ৩০টির মতো আকর্ষণীয় পুরস্কার। প্রথম পুরস্কার মোটরসেইকেল, দ্বিতীয় পুরস্কার এয়ার কুলার, তৃতীয় পুরস্কার ডিনারসেট, চতুর্থ পুরস্কার ল্যাপটপ, পঞ্চম পুরস্কার ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, এলইডি স্মার্ট টিভি, মাইক্রোভেন, ফ্যান, ওয়াটার ফিল্টারসহ আর রকমারি উপহার। ক্র্যাচ কার্ডে কেউ শূন্য হাতে ফেরেনি। সবাই কিছু না কিছু উপহার পেয়েছেন।
আবাসন: গত ১৫ দিনে মেলার বিক্রি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কেমন? ক্রেতাদের কেমন সাড়া পেলেন?
শেখ আব্দুল আউয়াল: মানুষ যখন মার্কেটে বা শপিংমলে কাপড় কিনতে যান, তখন মনস্থির করে যান যে আমি এই শাড়িটা বা এই জামাটা বা এই থ্রি পিসটা কিনব। দোকান গিয়ে দেখেন, পছন্দ করেন সাথে সাথে টাকা দিয়ে নিয়ে চলে আসেন। কিন্তু মজার বিষয় হল ফার্নিচার উৎসবের মধ্যে ক্রেতারা আসেন একটু ভিন্ন রূপে। ক্রেতারা শোরুমে আসেন, ঘুরেন, তাদের পছন্দ মত ফার্নিচার দেখেন, ছবি তোলেন, ভিডিও করেন, দাম শুনেন। বাসায় চলে যান। বাসায় গিয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে এগুলো দেখান, আলোচনা করেন, পরামর্শ করেন।পরিবারের সবার পছন্দ অনুযায়ী দ্বিতীয় দিন আসেন। এসে দেখে সিদ্ধান্ত নেন। অনেকে তৃতীয় দিনে এসে সিদ্ধান্ত নিয়ে তারপর ফার্নিচারটা কিনে নিয়ে যান।
>>আরও পড়ুন: আবাসন খাতে বিনিয়োগ কী লাভজনক?
এই যে একটা প্রক্রিয়া, এটা অন্য জিনিস কেনার থেকে একটু সময়ের বিষয়। খুব কম ক্রেতারাই আসেন যারা ফার্নিচার সঙ্গে সঙ্গে কেনেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা প্রথমে দেখে যান, পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে এসে তাদের পছন্দের ফার্নিচারটা কিনে নিয়ে যান। কখনো কখনো এমন হয় যে, জাতীয় মেলাতে আমার কোম্পানির ফার্নিচার দেখে পছন্দ করে গেলেন, তখন তার কেনার সামর্থ্য ছিল না। ছয় মাস পরে এসে এই উৎসব থেকে সেই পছন্দের ফার্নিচারটা কিনে নিয়ে গেছে। আর মেলা শুরুতে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকলেও দ্বিতীয় সপ্তাহে উপস্থিতি বেড়েছে। সেসঙ্গে বেচার পরিমাণও বেড়েছে। আমরা আশা করছি, মেলার শেষের দিকে বিক্রি আরো বাড়বে। মেলা শুরু হয়েছে গত ২০ মে। মেলা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।
আবাসন: ফার্নিচার ব্যবসার প্রতিবন্ধকতাগুলো কি কি?
শেখ আব্দুল আউয়াল: ফার্নিচার ব্যবসার বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো র-মেটেরিয়ালস বা কাঁচামালের অভাব। অমরা ফার্নিচার বানানোর জন্য কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকি। একটা সময় ছিল যখন আমাদের বাপ-দাদারা গাছের কাঠ কেটে ঘরের জন্য দরজা, জানালা, খাট, পালং, চেয়ার, টেবিল, ডায়নিং টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, সোফাসেট তৈরি করত।
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পছন্দ রুচি সব বদলেছে। এখনও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বানানো হয়, কিন্তু আগের মতো এতো বড় পরিসরে আর বানানো হয় না। এখন সবাই মেশিনের তৈরি আধুনিক ফার্নিচার কিনে ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। মানুষের এই পছন্দ ও রুচি পরিবর্তনের কারণে আমরা চায়না থেকে কাঁচামাল কিনে এনে এসব ফার্নিচার বানাচ্ছি। কিন্তু এই কাঁচামাল আনতে আমাদের যে ট্যাক্স, ভ্যাট দিতে হচ্ছে, যার জন্য প্রত্যেকটা ফার্নিচার বানাতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের ফার্নিচার ব্যবসার প্রধান সমস্যা।
আবাসন: এসব প্রতিবন্ধকতা উত্তরণে আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
শেখ আব্দুল আউয়াল: নানা কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরকে কাঁচামাল কিনতে বেশি টাকা ট্যাক্স ও ভ্যাট দিতে হয়। একটা ফার্নিচার তৈরি করতে যত ধরনের কাঁচামাল লাগে এর সবগুলোই আমাদের আমদানি করতে হয়। আমরা যেহেতু সবকিছুই আমদানিনির্ভর, তাই কাঁচামাল কিনে ফার্নিচার তৈরির খরচও বেড়ে যায়। সে কারণে বাজারে ফার্নিচারের দাম একটু বেশি। এখন সাধারণ মানুষকে সুলভ মূল্যে ফার্নিচার পৌঁছে দিতে হলে বিদেশ থেকে আমরা যেসব কাঁচামাল আমদানি করি, সরকারকে সেগুলোর ভ্যাট ও ট্যাক্সের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।
এটা হলে স্বাভাবিকভাবেই ফার্নিচারের দাম কমে যাবে। মানুষও কম দামে তাদের পছন্দ মতো স্মার্ট ও অত্যাধুনিক ফার্নিচার কিনতে পারবেন। তাই, বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির মিরপুর অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি অনুরোধ, সরকার যাতে বিষয়টা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে আমদানিকৃত কাঁচামালের উপর থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্সের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেন। সরকার কাঁচামালের উপর ভ্যাট ও ট্যাক্সের পরিমাণ কমিয়ে দিলে আমরা কম দামে সব কিছু কিনে, সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে কম দামে ফার্নিচার পৌঁছে দিতে পারব।
আবাসন: বর্তমানে ফার্নিচার শিল্পখাতের ব্যবসার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাই।
শেখ আব্দুল আউয়াল: বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির মিরপুর অঞ্চলে প্রায় ১২০ জন ফার্নিচার ব্যবসায়ী রয়েছেন। এখানে ৩০ হাজার কর্মী কাজ করছেন। এই মানুষগুলোর কর্মসংস্থান হচ্ছে এই শিল্পে কাজ করে। এর মধ্যে ৪০% আছে নারী কর্মী। আর সারা দেশে এই শিল্পের কর্মসংস্থানের জড়িত প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। বিশ্বব্যাপী এখন ফার্নিচারের বাজার এখন ৬৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগামী ৫ বছরে ৮৫০ বিলিয়নে দাঁড়াবে। ২০০৮ সাল থেকে আমরা দেশে বিশ্বমানের ফার্নিচার তৈরি করছি। বিশ্বমানের আসবাব বানাতে এ খাতে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। তৈরি হচ্ছে দক্ষ জনবল।
বিশ্ববাজারে বাড়ছে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং। বছরে একশো মিলিয়ন ডলার ফার্নিচার রপ্তানির রেকর্ড ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। এক দশকে ফার্নিচার রপ্তানিও বেড়েছে ৪শ’ শতাংশের বেশি। রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ৬১টি দেশে। এই খাতের রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩৬তম। এই সম্ভাবনাময় গল্পে দেশিয় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি অগ্রসর অবস্থানে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠানও। বিনিয়োগ ও রপ্তানি খাতে জাগাচ্ছে নতুন আশার আলো। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ০.০৩ শতাংশ হলেও নতুন পরিসংখ্যান আলোর পথ দেখাচ্ছে। কারণ ২০২১-২২ অর্থবছরে আসবাব রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। করেছে আগের বছরের চাইতে ৩৮.৮৭ শতাংশ বেশি আসবাব রপ্তানি।
তাই, সরকার যদি এই শিল্পখাতে একটু সুনজর দেয়, তাহলে এই খাতে আরো অনেক মানুষ কাজ করার সুযোগ পাবে। বছরে গার্মেন্টস খাত থেকে যেমন একটা বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হচ্ছে, এই খাতে সরকার গুরুত্ব দিলে, এখান থেকেও একই ভাবে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।