বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী বসবাস করছেন। বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তারা। এসব প্রবাসী বাংলাদেশীদের অনেকেই আগ্রহী নিজ দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগে। বিভিন্ন সময় সঠিক প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ না করে প্রতারিত হয়েছেন অনেকেই। সুনির্দিষ্ট তথ্য এবং বিনিয়োগ ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য কোন মাধ্যম বা প্রতিষ্ঠান না থাকায় আগ্রহ থাকা সত্বেও দেশে বিনিয়োগ করতে সাহসী হয়ে উঠতে পারছেন না এসব প্রবাসীরা।
এ ধরণের আগ্রহী অনাবাসী বাংলাদেশীদের জন্য স্বদেশে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রেমওয়ার্ক ফাইন্যান্স এলএলসি। টেক্সাসের হিউস্টন ভিত্তিক বাংলাদেশী মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে গত ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির সাগর চাইনিজ রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে নিশ্চিন্তে বিনিয়োগের আহ্বান জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদ্বয়। সাংবাদিকদের ফ্রেমওয়ার্ক ফাইন্যান্সের কার্যক্রম সম্পর্কে বর্ণনা ও প্রশ্নোত্তর প্রদান করেন ফ্রেমওয়ার্ক ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান নিউইয়র্কের সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব রায়হান জামান এবং হিউস্টন থেকে আগত ফ্রেমওয়ার্ক ফাইন্যান্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও ইঞ্জিনিয়ার আজাদুল হক।
রায়হান জামান বলেন, এখন থেকে আমেরিকার গ্রহণযোগ্য ক্রেডিট দিয়েই বাংলাদেশে ফ্ল্যাট বা জমি কেনা যাবে ফ্রেমওয়ার্ক ফাইন্যান্সের মাধ্যমে। কোন কোন কাগজ লাগবে তা তিনি বর্ণনা করেন। এ পদ্ধতিতে গ্রাহকের রেডিমেইড ফ্ল্যাটের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থাও ফ্রেমওয়ার্ক ফাইন্যান্স করবে। তারা বাংলাদেশের স্বনামধন্য কয়েকটি ব্যাংকের সাথে এ নিয়ে কাজ করছে এবং চুক্তি সম্পাদিত করেছে। রায়হান জামান বলেন, বাড়ি, গাড়ি বা অন্য কোন কিছু ক্রয়ের ক্ষেত্রে যে ধরণের ক্রেডিট কোয়ালিফিকেশন যাচাই করা হয় বাংলাদেশে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রেও একই ধরণের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়ে থাকে। তিনি ক্রেডিট স্কোরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট ব্যুরো বিশেষ করে এক্সপোরিয়ান, ট্রান্স ইউনিয়ন এবং ইক্যু ফ্যাক্স রিপোর্ট অনুযায়ী আগ্রহী গ্রাহকদের ক্রেডিট বিষয়ক তথ্য প্রদান করা হবে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বেতন ও ট্যাক্সের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রদান করতে হবে বলে জানান রায়হান জামান। এক প্রশ্নের উত্তরে রায়হান জামান বলেন, ম্যানেজিওলজি বর্তমানে বাংলাদেশে শতাধিক ভবনের তত্ত্ববধান করছে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে।
দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইঞ্জিনিয়ার আজাদুল হক বলেন, ফ্রেমওয়ার্ক ফাইন্যান্স বাংলাদেশে আর্থিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বিশ্বস্থ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো যুক্তরাষ্ট্রের অনাবাসী বাংলাদেশীদের ক্রেডিট প্রোফাইল ব্যবহার করে বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রে বাড়ি বা ফø্যাট ক্রয়ে শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করছে। বাংলাদেশের অন্যতম রিয়েল এস্টেট কোম্পানী রূপায়ন সহ আরো কয়েকটি কোম্পানীর সাথে তাদের এ সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। আজাদুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এধরণের উদ্যোগ এটাই প্রথম। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট কোয়ালিফিকেশন দিয়ে অনাবাসী বাংলাদেশীরা সহজে এবং নির্বিঘ্নে স্বপ্নের ফ্ল্যাট বা জমিতে বিনিয়োগ করতে পারেন।
আজাদুল হক জানান যে প্রবাসীরা কিভাবে আইনসম্মতভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। এ জন্য তিনি পাঁচটি বৈধ উপায় ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান কি উপায়ে বিনিয়োগ করলে সেই বিনিয়োগের মূনাফাসহ মূল অর্থ বৈধভাবে ফিরিয়ে আনা যায়। তিনি বলেন, রেমিট্যান্স মানে বিনিয়োগ নয়। অনেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে ফ্ল্যাট কিনে বা তৈরি করে পরে তা বিক্রি করে অর্থ ফেরত আনতে চান। কিন্তু তা আইনসিদ্ধ নয়। যদি কারো লক্ষ্য হয় যে সে তার বিনিয়োগকৃত মূলধন মুনাফাসহ ফিরিয়ে আনবেন, তাহলে তা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে করা যাবে না।
কিভাবে করা যাবে তা ফ্রেমওয়ার্ক ফাইন্যান্স গ্রাহকদের বুঝিয়ে বলবে। ফ্রেমওয়ার্ক ফাইন্যান্সের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিপুলভাবে বিনিয়োগ করতে উদ্বুুদ্ধ করা, তাদের জন্য সহজভাবে বেশ কয়েকটি পদ্ধতির প্রচলন করা। গ্রাহক সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি কি করতে চান। ফ্রেমওয়ার্ক ফাইন্যান্স রুপায়ন গ্রুপ, ফোট্রেস ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড (এফ ডি এল) এবং বায়োবিল্ডের সাথে চুক্তি করেছে। এদের একেক জনের একেক রকমের ফ্লাট আছে যা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পছন্দ করতে পারবেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রুপায়ন সিটি উত্তরার মনোরম স্কাই ভিলাসমুহ।
এ ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্টের পর বাংলাদেশের নির্দিষ্ট ব্যাংক থেকে মর্টগেজ সহ অন্যান্য সকল ব্যবস্থা করছে ফ্রেমওয়ার্ক ফাইন্যান্স। বিশেষ করে ডলার বন্ড, ডলারে নিটা একাউন্টে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ, এফডিআই বা ইন্ডাস্ট্রি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এবং অফশো’র ব্যাংকিং।এসব বিনিয়োগ ক্ষেত্রে অনাবাসী বাংলাদেশীদের এনআইডি কার্ড, দ্বৈত ন্যাশনালিটি সার্টিফিকেট বা বাংলাদেশী পাসপোর্ট থাকা বাঞ্ছনীয়। কর্মকর্তাদ্বয় তাদের এই উদ্যোগকে নিরাপদ এবং বিশ্বস্ত অভিহিত করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে আহ্বান জানান অনাবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি।