আকিজ সিমেন্ট ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠার যাত্রাটি ছিল দীর্ঘ ও কঠিন। এ যাত্রায় বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ১৩২ কেভি সংযোগের অভাবে ফ্যাক্টরিকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছিল না। শুরুতে দক্ষ শ্রমিক খুঁজে পাওয়া ও তাদের ব্যবস্থাপনা নিয়েও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভারী যন্ত্রপাতি ফ্যাক্টরিতে পরিবহন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এছাড়া ফ্যাক্টরি স্থাপনের জন্য নদী শাসন, বিআইডব্লিউটিএ থেকে অনুমতি নেয়া এবং গ্যাস পাইপলাইন সংযোগ করা অনেক সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ কাজ ছিল। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আকিজ গ্রুপের অদম্য ইচ্ছাশক্তির ফলে এ ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে।
কারখানার আকার ও শ্রমিকের সংখ্যা: ২৪ একর জমির ওপর নির্মিত আকিজ সিমেন্ট ফ্যাক্টরির যাত্রা শুরু হয়েছিল আনুমানিক ২০০ জন শ্রমিক নিয়ে।
বর্তমান শ্রমিক সংখ্যা ও তাদের প্রাপ্ত সুবিধা
আকিজ সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে বর্তমানে ৮৫০ জন শ্রমিক নিয়মিত ভিত্তিতে কর্মরত আছেন। আমরা শ্রম আইন ও প্রবিধানের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কারখানার বিভিন্ন ইউনিট ও যন্ত্রপাতি
আকিজ সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে বর্তমানে দুটি প্রডাকশন লাইন রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি জার্মান প্রযুক্তিনির্ভর এবং দ্বিতীয়টি ডেনমার্ক প্রযুক্তিনির্ভর। কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ক্রেন, মোটর, ফ্যানসহ নানা ধরনের যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়, যার অধিকাংশই বেলজিয়াম, ইতালি, জার্মানি ও চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে।
আকিজ সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়, যা পরিবেশগত মান বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরকার অনুমোদিত বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার পরিমাণ ৪০০ পিপিএম পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলেও আকিজ সিমেন্টের প্রথম প্রডাকশন লাইন ২৫ পিপিএম এবং দ্বিতীয় প্রডাকশন লাইন মাত্র ১৫ পিপিএম ধরে রাখার নিশ্চয়তা দিচ্ছে, যা কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
বিদেশী কর্মী: কারখানায় স্থায়ীভাবে কোনো বিদেশী কর্মী বা প্রকৌশলী কর্মরত নেই। তবে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রয়োজনে কনসালট্যান্টদের নিয়োগ দেয়া হয়, যাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে।
ভবিষ্যতে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা
বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্পে আকিজ গ্রুপের অবদান অপরিসীম। প্রায় ২৪ একর জমির ওপর দুটি চায়নিজ বল মিল স্থাপনের মধ্য দিয়ে আকিজ সিমেন্টের যাত্রা শুরু হয়। এ মিলগুলো প্রতি ঘণ্টায় ৬০০ টন করে পিসি (PC) সিমেন্ট উৎপাদন করত।
২০০৭ সালে আকিজ সিমেন্ট বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জার্মানির LOESCHE কোম্পানির অত্যাধুনিক ভিআরএম (VRM) টেকনোলজি স্থাপন করে। এ নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ১৪০ টন সিমেন্ট উৎপাদিত হয়ে আসছে।
২০১৮ সালে আকিজ সিমেন্ট আরো এক ধাপ এগিয়ে যায়। FLSmidth কোম্পানির আরো উন্নত ভিআরএম টেকনোলজি স্থাপন করে, যা প্রতি ঘণ্টায় ২২০ টন সিমেন্ট উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে।
রফতানি: আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড সর্বদা গুণগত মানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। উন্নত কাঁচামাল ও কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উৎপাদিত আকিজ সিমেন্ট দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পূরণে সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই বর্তমানে আকিজ ব্র্যান্ডের সিমেন্ট বিদেশে রফতানি করা হয় না, বরং দেশের ভেতরেই সেরা মানের সিমেন্ট সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়।
ব্যবসার বর্তমান আকার ও বাজার অংশীদারত্ব
বাংলাদেশের বর্তমান সিমেন্ট বাজারের মূল্য প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ বিশাল বাজারে আকিজ সিমেন্টের অংশীদারত্ব ৬-৭ শতাংশ। আকিজ সিমেন্ট সর্বদা গুণমানকে প্রাধান্য দেয়। ফ্লাই অ্যাশের পরিবর্তে স্ল্যাগ ব্যবহারের কারণে প্রতিষ্ঠানটির সিমেন্টের গুণগত মান উন্নত, যার কারণে দাম কিছুটা বেশি। তাই আকিজ সিমেন্টকে প্রিমিয়াম সেগমেন্টের একটি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ প্রিমিয়াম সেগমেন্টে আকিজ সিমেন্টের বাজার শেয়ার প্রায় ৩০ শতাংশ।