কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক হোটেল পরিষেবা খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অর্থায়ন সংকটে নতুন হোটেল বা রিসোর্ট নির্মাণের পরিমাণও কমেছে। ফলে স্বতন্ত্র হোটেল ও বৃহৎ চেইনগুলোর মধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তির পরিমাণ বেড়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক হোটেল চেইনগুলোর ইউরোপীয় ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে স্বতন্ত্র হোটেল ও ছোট ব্র্যান্ডগুলো যুক্ত করে নিজেদের উপস্থিতি বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
মহামারীর পর ইউরোপে পর্যটন খাতে বৃদ্ধির ফলে ছুটি কাটাতে আসা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। পর্যটকদের আবাসন চাহিদা মেটাতেই আন্তর্জাতিক হোটেল চেইনগুলো এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান বিশ্লেষকরা।
হোটেল হলিডে ইন ও ম্যারিয়টের মালিকানাধীন ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপ (আইএইচজি) সম্প্রতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ইউরোপীয় হোটেলগুলোকে তাদের ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে চায় গ্রুপটি।
আইএইচজি ২০২৮ সালের মধ্যে জার্মানিতে হোটেল সংখ্যা দ্বিগুণ করে দুই শতাধিকে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে। জার্মানির বৃহত্তম হোটেল অপারেটর নোভাম হসপিটালিটির সঙ্গে ৩০ বছরের ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তি করেছে আইএইচজি।
গ্রুপটির নতুন মিড রেঞ্জের ব্র্যান্ড গার্নার হিসেবে পুনরায় রি-ব্র্যান্ড হবে নোভামের অধীনে থাকা ইগগোটেল, সিলেক্ট ও নোভাম হোটেল। নোভামের নতুন ব্র্যান্ড নাম হবে হলিডে ইন-নিউ।
এদিকে মার্কিন হোটেল-রিসোর্ট পরিচালনাকারী ম্যারিয়ট জানিয়েছে, থার্ড পার্টির হোটেলগুলোকে নতুন করে ব্র্যান্ডিং ও বিদ্যমান হোটেল ভবনকে রূপান্তর করা হচ্ছে। এর আওতায় ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন ও তুরস্কের মতো দেশে আরো ১০০টি হোটেল যোগ হবে।
আন্তর্জাতিক হোটেল কোম্পানিগুলো চায়, তাদের মালিকানায় ইউরোপে আরো হোটেল বাড়ুক। এদিকে ইউরোপে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ঋণ ব্যয় এ মুহূর্তে অনেক বেড়েছে। ফলে নতুন হোটেল নির্মাণ বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই নতুন অবকাঠামো নির্মাণের পরিবর্তে হোটেলগুলোর বিদ্যমান ভবনকে সংস্কার করে আউটলেটে রূপান্তর করা হচ্ছে।
খাতসংশ্লিষ্ট পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জোন্স ল্যাং লাসালের (জেএলএল) তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে অফিস ভবন ও রিসোর্টকে হোটেলে পরিণত করার সংখ্যা এ-যাবৎকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এলি মালুফ আইএইচজি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘ইউরোপে হোটেল ব্যবসা দ্রুত হারে বাড়ছে। উচ্চ নির্মাণ ব্যয়ের কারণে ইউরোপে নতুন হোটেল তৈরি না করেও স্বতন্ত্র হোটেলগুলোকে সুপরিচিত ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করার ভালো সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
এদিকে চলতি বছরে ইউরোপের পর্যটন কার্যক্রম শক্তিশালী থাকবে বলে প্রত্যাশা করছে খাতসংশ্লিষ্টরা। মহামারী-পরবর্তী এশিয়া থেকে যাওয়া পর্যটক ও ব্যবসায়িক সফর বাড়ার একটি প্রভাব রয়েছে। পাশাপাশি প্যারিস অলিম্পিক ও জনপ্রিয় গায়িকা টেইলর সুইফটের ইউরোপ সফরের মতো ইভেন্টগুলো পর্যটক বাড়াতে বড় অবদান রাখবে।
হোটেল গ্রুপগুলো এমন সময়ে এ অঞ্চলে বাজারের হিস্যা বাড়ানোর উপায় খুঁজছে যখন নতুন হোটেল নির্মাণ ধীর হয়েছে। গ্লোবাল কমার্শিয়াল রিয়েল এস্টেট সার্ভিসেস (সিবিআরই) তথ্যানুসারে, ২০০৯-২৩ সাল পর্যন্ত সামগ্রিক ইউরোপীয় হোটেল বার্ষিক ১ দশমিক ৩ শতাংশ চক্রাকার বৃদ্ধির হারে বেড়েছে। তবে চলতি বছর তা মাত্র দশমিক ৯ শতাংশে বাড়বে বলে পূর্বাভাস করা হয়েছে।
এদিকে স্বতন্ত্র হোটেলকে ফ্র্যাঞ্চাইজিতে অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে হিলটন গ্রুপ বলছে, ছোট হোটেল মালিকরা ফ্র্যাঞ্চাইজি ডিল থেকে উপকৃত হচ্ছে, যা তাদের একটি বড় ব্র্যান্ডের নামে পরিচিত হওয়ার শক্তি দিচ্ছে। তবে এ ধরনের চুক্তিগুলো একটি আলাদা ব্যয় ভারও সঙ্গে নিয়ে আসে। কারণ হোটেলগুলোকে অবশ্যই ফ্র্যাঞ্চাইজারকে ফি দিতে হয়।
তবে খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তির কারণে দুই পক্ষই উপকৃত হচ্ছে। এর মাধ্যমে হোটেল চেইনগুলো দ্রুত নতুন আউটলেট খোলার সুযোগ পাচ্ছে। ব্র্যান্ড ভ্যালুর কারণে বিনিয়োগের পথ সহজ হচ্ছে ও বুকিং বাড়ছে। এ কারণেই নন-ব্র্যান্ডের স্বতন্ত্র হোটেলগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তিতে আগ্রহী হচ্ছে। সূত্র: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।