অর্থ ও বাণিজ্য
কাচের ভবনের কারণেই কী বাড়ছে দাবদাহ?

বাংলাদেশের গত এপ্রিলে টানা তাপদাহের পর এ মাসের শুরুতে হওয়া বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসে। তবে আবারও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় আলোচনায় ‘গরম বাড়ার কারণগুলো’। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় গরম বাড়ার কারণ হিসেবে জলাভূমি ও গাছপালা কমে যাওয়া ছাড়াও উঠে আসছে ‘কাঁচের ভবনের’ আধিক্যের বিষয়টি।
অনেকেই বলছেন, নগরীতে পরিকল্পনাহীনভাবে কাচ দিয়ে নির্মিত ভবনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে গরম।
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, আধুনিক ভবনগুলোর ক্রমবর্ধমান শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। একইসঙ্গে কাচ দিয়ে নির্মিত ভবনে ‘শেডিং’ ব্যবস্থা না থাকাকেও তাপমাত্রা বাড়ার জন্য দায়ী করছেন তারা।
ঢাকায় ভবন নির্মাণে কাচের ব্যবহারের শুরু যেভাবে
আশির দশক পর্যন্ত ঢাকার উঁচু ভবনগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল ‘শেডিং ব্যবস্থা’। এই ব্যবস্থায় ভবনগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন সূর্যের আলো সরাসরি ভবনের ভেতরে প্রবেশ না করে।
আলো ও বাতাসের জন্য আগের ভবনগুলো ছিল জানালা নির্ভর।সেজন্য বর্ষায় বৃষ্টির ঝাপটা কিংবা গ্রীষ্মের রোদে ঘরকে গরম থেকে রক্ষা করতে জানালায় ওপরটা এমনভাবে তৈরি করা হতো যাতে সরাসরি সূর্যের আলো কিংবা বৃষ্টির ঝাপটা না ঢোকে।
প্রাকৃতিক আলো বাতাসের এই পরিকল্পিত ব্যবহারকে স্থাপত্যের ভাষায় ‘প্যাসিভ ডিজাইন স্ট্রাটেজি’ বলা হয়ে থাকে।নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে ভবনে কাচের ব্যবহারের প্রবণতা শুরু হয়। চাহিদা থাকায় সেসময় বেড়ে যায় কাচ আমদনি।
“কোনো একটা ভবন বাক্সের মতো বানিয়ে কাচ দিয়ে মুড়ে দিলে খুব সহজেই একটা লুক আর উন্নত দেশের ছাপ চলে আসায় এর চাহিদা বেড়ে যায়,” বলেন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের (বাস্থই) সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার সাব্বির আহমেদ।
বলেন, আগে ভবন নির্মাণের সময় যেমন ১৮-২০ ইঞ্চির শেডিং দেয়া হতো, নতুন ভবনগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হয়নি। এর ফলে কাচের ব্যবহারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভবনের ভেতরে বাড়তে থাকে তাপ। আবার, সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে আশপাশের তাপমাত্রাও বাড়িয়ে তুলছে।
‘ভবনের কাঠামোর কারণে বাড়ছে তাপমাত্রা’
ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকায় নতুন যে ভবনগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে তার বেশিরভাগই পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এসব ভবনের বড় একটি অংশেই এমন কাচ ব্যবহার করা হয় যাতে বাইরের বাতাস-শব্দ ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। ফলে ভবন শীতল রাখতে বেড়ে যায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার। আর এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকেই তাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন নগরবিদরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, “উন্মুক্ত এবং উপযুক্ত নয় এমন কাচ দিয়ে ভবন নির্মাণের ফলে বাড়ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার।”
“স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ প্রযুক্তির কাচ না লাগালে ভবন অতিরিক্ত তাপ ক্ষরণ করে কিংবা শোষণ করে। ফলে ভবনের ভেতরের তাপমাত্রা অযাচিত পরিমাণে বেড়ে যায়,” যোগ করেন মি. হাবিব।
ভবনে জ্বালানি ও বিদ্যুতের ব্যবহার ও এর কার্যকারিতা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘এনার্জি এন্ড বিল্ডিংসে’ ২০২২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভবন শীতলীকরণের নেতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে প্রাকৃতিক বায়ুচলাচলের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এতে জাপানের টোকিও শহরের বাণিজ্যিক ভবনের ওপর পরিচালিত অপর একটি গবেষণার ফলাফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই গবেষণায় দেখা গেছে কর্মব্যস্ত দিনগুলোতে আধুনিক বাণিজ্যিক ভবনগুলোয় ব্যবহৃত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র থেকে নির্গত বাতাস সংলগ্ন এলাকার তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়িয়ে তুলেছে।
তাইপের আবাসিক এলাকায় করা অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভবনগুলোর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আশেপাশে এসি থেকে নির্গত উষ্ণ বাতাসের কারণে তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এর ফলে ভবনগুলো শীতল করতে এসি’র জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে, প্রয়োজন হচ্ছে বাড়তি এসিরও। এটিকে একটি দুষ্টচক্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে উক্ত গবেষণায়।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, আধুনিক কাচের ভবনগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শেডিং ব্যবস্থা না থাকায় সরসরি সূর্যের আলো পড়ে ভবনের ভেতরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। পাশাপাশি, কাঁচের দেয়ালে আলো প্রতিফলিত হয়ে আশপাশের তাপমাত্রাও বাড়িয়ে তোলে।
শুধু তাই নয়, তাপমাত্রা কমাতে ভবনের ভেতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের বাড়তি ব্যবহার ও বাড়তি বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। এসব যন্ত্র থেকে নির্গত উষ্ণ বাতাসও পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এতে ‘হিট আইল্যান্ড’ তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে একে ‘বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা’ বলছেন নগরবিদরা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “একটা এসি যে এনার্জি খরচ করে, তাতে ২৫ থেকে ৩০টা ফ্যান চলতে পারে। আবার নিজের আরামের জন্য বাড়তি তাপ বাইরে দেয়া হচ্ছে। এতে এনার্জির বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।”
সব কাচের ভবনই কি তাপমাত্রা বাড়ায়?
যে কয়টি কারণে ঢাকায় তাপমাত্রা বাড়ছে তারমধ্যে ‘কাঁচের ভবন একটি’ বলে উল্লেখ করেন মি. খান।
তবে ‘কাচের ভবন মানেই খারাপ কিছু নয়’ বরং নির্মাণের সময় ‘কোন ধরনের কাচ, কীভাবে ব্যবহার হছে সেটার ওপর (তাপ) নির্ভর করে’ বলে জানান স্থপতি ইকবাল হাবিব।
তার মতে “উন্মুক্ত এবং উপযুক্ত নয় এমন কাঁচ” দিয়ে ভবন নির্মাণের কারণে বাড়ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার। ফলে বাড়ছে তাপমাত্রা।
অর্থাৎ কাচ দিয়ে ভবন নির্মাণ করা হলেও বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নেয়া হলে এটি বাড়তি তাপ উৎপাদন থেকে বিরত থাকে। যেমন ‘শেডিং’ ব্যবস্থা।
“কাচ দিয়ে কোনো ভবন নির্মাণের সময় যদি এটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয় যাতে করে বাইরের কাচের ওপর সূর্যের আলো সরাসরি না পড়ে তবে এটি বাড়তি তাপ উৎপাদন করবে না। ফলে ভবনের ভেতর গরমও বাড়বে না,” জানাচ্ছেন ভবন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু খুব কম সময়ই ভবন নির্মাণের সময় এই বিষয়টি খেয়াল রাখা হয়। বরং শেডিং ব্যবস্থা না থাকায় সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে নগরীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলছে বলে জানান ভবন বিশেষজ্ঞরা।
আবার অনেক জায়গায় কাচগুলো খোলা রাখার ব্যবস্থাও থাকে না। ফলে বাধ্যতামূলকভাবেই ঝুঁকতে হয় ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের’ দিকে।
ভবনের এই নকশা বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত না বলে মনে করেন পরিকল্পনাবিদ মি. খান।
তিনি বলেন, “শীতপ্রধান দেশে এ ধরনের নকশার কারণে তাপমাত্রা বাড়ে। আর শীত কমলে তাদের লাভ হয়। কিন্তু এখানে তাদের অনুসরণ করা পশ্চাৎপদতা।”
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবন নির্মাণকে অনেকে ‘প্রেস্টিজ কনসার্ন’ হিসেবে দেখেন বলে মনে করেন মি. হাবিব। বলেন, “শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ওপর ভরসা করে ভবন নির্মাণের প্রবণতাকে অনেকে সামর্থ্য হিসেবে দেখেন। এমনকি সরকারি ভবনগুলোতেও ইদানিং হরহামেশাই দেখা যায় কাচের ব্যবহার।”
তার মতে, যখন এটা ‘জাতীয় দর্শন বা নগর-দর্শনে’ পরিণত হয়, তখন তা নগরীকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়।
কী ধরনের ভবন বাংলাদেশের জন্য উপযোগী?
বাংলাদেশের ভৌগৈলিক অবস্থানের কারণে এখানে সূর্যের আলোর প্রখরতা অনেক বেশি। ফলে পশ্চিমা দেশগুলোর আদলে বা তাদের অনুসরণে ভবন নির্মাণ অনেকক্ষেত্রেই উপযুক্ত না।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ার একটি দেশে গরম সহনীয় ভবন নির্মাণের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। এক্ষেত্রে আদর্শ হিসেবে ঢাকার ফার্মগেট মোড়ের বাংলাদেশ এগ্রিকালাচারাল রিসার্চ কাউন্সিল ও রংপুরের একটি কারুপণ্যের কারখানার উদাহরণ টানেন মি. হাবিব।
এই ভবনগুলোর মধ্যে চারটি সাধারণ বিষয় আছে। প্রথমত, এতে সূর্যের আলো সরাসরি ভেতরে প্রবেশে বাধা দেয়ার ব্যবস্থা আছে। এবং উন্মুক্ততা নিশ্চিত করেই এই বাধা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ক্রস ভেন্টিলেশন। এতে করে বছরের যে আট মাস প্রবল উত্তাপ থাকে না, তখন সহজেই ভবনের মধ্যে আলো-বাতাস যাতায়াত করতে পারে। তৃতীয়ত, গাছ ব্যবহার করে বারান্দায় বা ভবনের বাইরের অংশে সবুজ অন্তর্ভুক্ত করে একে আরও পরিশীলিত করা, যাতে ভবন ঠান্ডা থাকে।
সবশেষ, দিক বিবেচনা করে ভবন নির্মাণ। যেমন, পশ্চিম দিকের উন্মুক্ততা কমিয়ে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্বদিকে উন্মুক্ততা বাড়িয়ে কাঠামো নির্মাণ। কারণ উত্তর দিকে কখনো সূর্যের আলো যায় না, আবার পূর্ব দিকের সকালের আলো আর দক্ষিণ দিকের বাতাস আরামদায়ক।
সেক্ষেত্রে কেউ উঠানের মতো অংশ রেখে তা গাছ দিয়ে পরিশীলিত করে বাতাস শোষণের ব্যবস্থা করেন, আবার কেউ কার্নিশ বা ব্লকার দিয়ে সূর্যের আলো আটকে বাইরে বিশাল কোনো সারফেস বা পৃষ্ঠ তৈরি করেন। আবার কেউ এমন ব্যবস্থা করেন যাতে সূর্যের আলো সরাসরি না ঢুকে, ছায়াসম্বলিত হয়ে ঢোকে।
নিজের ‘উদ্ভাবন আর সৃজনশীলতা’ দিয়ে একেক স্থপতি এই বিষয়গুলোকে একেকভাবে ব্যবহার করেন বলে মন্তব্য করেন মি. হাবিব।
‘বায়ু আর শব্দ দূষণের কারণে তীব্র তাপদাহে মানুষ’
বর্তমানে ঢাকায় যে পরিমাণে শব্দ ও বায়ু দূষণ আছে তাতে করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের বিপরীতে গিয়ে খোলামেলা ভবনের উপযোগিতা নিয়েও প্রশ্ন আছে অনেকের।
স্থপতি ইকবাল হাবিব একে একটি ‘চেইন এফেক্ট’ বলছেন। তার মতে, শব্দ দূষণের বড় একটি কারণ যানবাহনের হর্ন। কেবল হর্ন দেয়া বন্ধ করতে না পারার ফলে হাজার কোটি টাকা খরচ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে।
এতে করে একদিকে বিদ্যুতের অতিরিক্ত ব্যবহার যেমন হচ্ছে, তেমনি আশেপাশের সামর্থ্যহীনদের জন্যে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠছে। এছাড়াও ভবনের উন্মুক্ততা বন্ধ করে দেয়ায় শিশুদের জীবনাচরণ বদলে যাচ্ছে।
মি. হাবিব বলেন, “সব মেনে নেবো কেবল হর্ন দিতে স্বাচ্ছ্যন্দ্য বোধ করি বলে? এটা কি হতে পারে? দার্শনিকভাবে দেখলে, সমস্যা সমাধানের কোনো তৎপরতা নেই। তার কারণে শীতাতপ যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে আর তৈরি হচ্ছে এই উত্তপ্ততা।”
ফলে পরোক্ষভাবে বায়ু আর শব্দ দূষণের কারণেও মানুষ তীব্র তাপদাহ অনুভব করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই চেইন এফেক্টের ব্যাপারে মনোযোগী হলে অনেক কিছু উত্তরণ করা সম্ভব।”
আরও কিছু বাস্তবতা
পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি ভবনে প্রচুর পরিমাণে পানি প্রয়োজন হয়। আর বেশিরভাগ সময়ই ভবন মালিকরা এই পানি ওয়াসা থেকে না কিনে ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের গভীর থেকে তোলেন বলে জানান ড. আহমেদ।
এছাড়াও এ ধরনের কাঁচ দিয়ে নির্মিত ভবনগুলোতে শেডিং ব্যবস্থা না থাকলে সূর্যের আলো কাঁচে প্রতিফলিত হয়ে গাড়ির চালকের চোখে পড়লে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।
সবমিলিয়ে ভবনে শেডিংবিহীন কাচের ব্যবহারে “বহুমাত্রিক পরিবেশগত প্রভাব পড়ছে” বলেই মত এই নগর বিশ্লেষকের।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে যে আবহাওয়া, আমাদের যে সংস্কৃতি, আমাদের দেশের এনার্জির পরিস্থিতি বা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলোকে মাথায় নিয়ে এসব কিছু হচ্ছে না।”
সমাধান কী?
বাংলাদেশে বর্তমানে ভবন নির্মাণ সম্পর্কিত যে আইন ও নীতিমালা আছে, তার কোনোটিতেই কাচের ভবনের শেডিং ব্যবস্থা কিংবা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহারের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ভবন নির্মাণ করেও অনেকেই পার পেয়ে যাচ্ছেন।
সেক্ষেত্রে ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা’ ও ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের’ মাধ্যমে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট একটি নগর দর্শন বা নির্মাণ দর্শনের তাগিদ দিচ্ছেন নগরবিদরা।
সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালায় একটি ভবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার কতটুকু হবে বা ভবনটি কী পরিমাণ ইলেকট্রিক লোড নিতে পারবে সেই বিধান রাখার পাশাপাশি ভবনগুলোর মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব ও সবুজায়নের নিয়ম রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
ড. আহমেদ যুক্ত করেন, “একইসঙ্গে আর্থিক প্রণোদনার বিষয়টিও রাখা যেতে পারে।”
তার মতে, ভবন বদ্ধ হলে মানুষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের দিকে ঝুঁকবেই।
“সেক্ষেত্রে ভবনে প্রাকৃতিকভাবে বায়ু চলাচলের ‘ভ্যান্টিলেশন ব্যবস্থা’ থাকলে সরকার বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্সে রিবেট কিংবা ইন্স্যুরেন্সে সুবিধার মতো প্রণোদনা দিলে অনেকেই এই বিষয়ে উৎসাহী হতে পারেন।”
এক্ষেত্রে জার্মানির উদাহরণ টানেন তিনি। বলেন, শীতপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে কাঁচ দিয়ে নির্মিত ভবনে শেডিং ব্যবহার করলে প্রণোদনার ব্যবস্থা রয়েছে।
“এর মাধ্যমে ভবন মালিক বা ব্যবহারকারীরা নিয়মের দিকে ঝুঁকবে বা মনোযোগী হবে। নয়তো যাই বলা হোক না কেন বাজার নিয়ন্ত্রণকারীরাই ফলাফল নির্ধারণ করবে,” বলেন মি. আহমেদ। সূত্র: বিবিসি।
অর্থ ও বাণিজ্য
ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মুনাফা বেড়েছে ২১ কোটি টাকা

দেশের আবাসন খাতের কোম্পানি ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মুনাফা সাড়ে ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি গত জুনে সমাপ্ত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ৭৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তার আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মুনাফা ২১ কোটি টাকা বা সাড়ে ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইস্টার্ন হাউজিং গতকাল মঙ্গলবার তাদের পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত অর্থবছরের আর্থিক বিবরণী চূড়ান্ত করার মাধ্যমে মুনাফার এই হিসাব দিয়েছে। একই সভা থেকে কোম্পানিটি গত অর্থবছরের জন্য শেয়ারধারীদের ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তার আগের অর্থবছরে কোম্পানিটি ১৯ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। সেই হিসাবে গত অর্থবছরে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মুনাফা ও লভ্যাংশ উভয়ই বেড়েছে।
কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে চূড়ান্ত করা মুনাফা ও লভ্যাংশের তথ্য আজ বুধবার স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোম্পানিটি জানিয়েছে, গত অর্থবছরের জন্য তারা শেয়ারধারীদের প্রতি শেয়ারের বিপরীতে আড়াই টাকা (২৫ শতাংশ) করে লভ্যাংশ দেবে। বর্তমানে শেয়ারধারীদের হাতে কোম্পানিটির যে শেয়ার রয়েছে তার বিপরীতে লভ্যাংশ বাবদ কোম্পানিটিকে ২৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বিতরণ করতে হবে। আগের অর্থবছরে (২০২৩–২৪) কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ১৯ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তাতে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে একেকজন শেয়ারধারী ১ টাকা ৯০ পয়সা করে পেয়েছিলেন। ওই বছর ঘোষিত লভ্যাংশ বাবদ কোম্পানিটিকে বিতরণ করেছিল প্রায় ১৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের জন্য লভ্যাংশ বাবদ ৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করবে কোম্পানিটি। লভ্যাংশ বাবদ বাড়তি এই ব্যয়ের জোগান আসছে বাড়তি মুনাফা থেকে। কারণ, এক বছরে কোম্পানিটির মুনাফা ২১ কোটি টাকা বেড়েছে।
এদিকে মুনাফা ও লভ্যাংশ বৃদ্ধির খবরে আজ শেয়ারবাজারে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ারের দামও ঊর্ধ্বমুখী ছিল লেনদেনের শুরু থেকে। প্রথম দেড় ঘণ্টার লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২ টাকা বা সোয়া ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ টাকায়। এ সময় কোম্পানিটির ৮ লাখের বেশি শেয়ারের হাতবদল হয়, যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা।
অর্থ ও বাণিজ্য
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক করল সরকার

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক আদেশে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। কেউ এ-সংক্রান্ত নির্দেশিকার ব্যত্যয় ঘটালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯’ অনুযায়ী পরিহারযোগ্য বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। তাঁরা বিভিন্ন তথ্যাদি শেয়ার করছেন এবং ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকারকে বিব্রত করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন; যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য চাকরিবিধির পরিপন্থী ও অগ্রহণযোগ্য আচরণ। প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাঁদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। অনেক ক্ষেত্রে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হানিকর এবং বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণের পর্যায়ের অপরাধ। এ ধরনের বিভিন্ন ব্যত্যয়গুলো নজরে আসায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আদেশে জ্যেষ্ঠ সচিব, সচিব এবং বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯’-এর সুষ্ঠু ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিটি ব্যত্যয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা’, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা’ এবং ‘সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা’ অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
-
বিবিধ2 years ago
বাংলাদেশে প্রচলিত বাড়ি ভাড়ার চুক্তি, নিয়ম ও নীতিমালা
-
নির্বাচিত প্রতিবেদন1 year ago
রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করবেন যেভাবে
-
আবাসন সংবাদ4 weeks ago
সীমান্ত রিয়েল এস্টেট এর অনুমোদনহীন সীমান্ত সিটি ও সীমান্ত কান্ট্রি প্রকল্প
-
আবাসন সংবাদ4 weeks ago
রাজউকের নির্দেশে নর্থ সাউথ গ্রীন সিটি বন্ধ
-
আবাসন সংবাদ1 month ago
মাত্র ২৪ ঘন্টায় খতিয়ানের ভূল সংশোধনের সরকারি নির্দেশনা
-
ফিচার4 weeks ago
প্রথম ফ্ল্যাট কিনে ঠকতে না চাইলে মেনে চলুন এই ১০ কৌশল
-
আইন-কানুন1 year ago
রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের সাথে জমি বা ফ্ল্যাট নিয়ে সমস্যা ও তার প্রতিকার (১ম পর্ব)
-
আবাসন সংবাদ1 month ago
প্রিমিয়াম হোল্ডিংয়ের বর্ষপূর্তিতে ৩ দিনব্যাপী একক আবাসন মেলা অনুষ্ঠিত