উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো জ্বালানি তেলনির্ভরতা কাটাতে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে আসছে। তবে এখনো জ্বালানি তেল খাতই অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতির বড় নির্ধারক।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বছরের শেষ দিকে জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়লে বর্তমান মন্থরতা কিছুটা কাটতে পারে। এর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে সুদহার হ্রাস।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকোনমিকস সর্বশেষ জিডিপি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সেপ্টেম্বর নাগাদ সুদহার কমে এলে এ অঞ্চলের সামগ্রিক বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ সময় জ্বালানি তেলে উত্তোলন বৃদ্ধি বাড়তি অর্থ নিয়ে আসবে।
প্রতিবেদনে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক দেশগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, জ্বালানি তেল কম উত্তোলনের অর্থ হলো প্রত্যাশিত জিডিপি বাস্তবায়ন হতে আরো বেশি সময় লাগবে। এ অবস্থায় অর্থনীতিকে ভালোভাবে সচল রাখতে জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতগুলো শক্তিশালী করা উচিত।
ওপেক প্লাস হিসেবে পরিচিত ওপেক ও মিত্র দেশগুলো ২০২২ সালের শেষ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জ্বালানি তেল উত্তোলন কমিয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন কাটছাঁটের এ পরিমাণ ৫৮ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল, যা বিশ্বব্যাপী চাহিদার প্রায় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
চলতি মাসের শুরুতে ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত দৈনিক ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২ লাখ ব্যারেল ঐচ্ছিক কাটছাঁটের আওতায় থাকবে, যা আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে থাকতে পারে।
স্বেচ্ছায় জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর দেশের মধ্যে রয়েছে কুয়েত, ওমান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপসাগরীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভকে অনুসরণ করছে। এ হিসেবে আগামী সেপ্টেম্বরে এ অঞ্চলে সুদহার কমে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এছাড়া উপসাগরীয় অঞ্চলে মূল্যস্ফীতি বছরের দ্বিতীয়ার্থে মন্থর হয়ে আসতে পারে। এতে প্রকৃত আয়ের ওপর চাপ কমবে, ঋণ চাহিদা ও ভোক্তা ব্যয় বাড়বে।
অঞ্চলটির বেশির ভাগ অংশে জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতে প্রবৃদ্ধি আগামী কয়েক বছরে আরো গতি পাবে। তবে আগামী বছর জ্বালানি তেলের দামের পতন এ খাতগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জের পূর্বাভাস দেয়।
এ সময় ইউএই ও কাতার তাদের অর্থনীতিকে শিথিল করতে আর্থিক নীতি বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ সময় শক্তিশালী ব্যালান্স শিট ব্যবহার করতে পারে দেশগুলো। এ পরিস্থিতি থাকতে পারে কুয়েতে। বিপরীতে ওমান ও বাহরাইন কঠোর আর্থিক নীতি অবলম্বন করতে পারে।
ওপেক প্লাস চুক্তির অংশ হিসেবে জ্বালানি তেল উৎপাদন কমানোর নীতি বজায় রাখার প্রভাব পড়বে সৌদি আরবের অর্থনীতিতে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা সত্ত্বেও দেশটির আয় আগামী বছর কমে যেতে পারে। এ কারণে কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পিত ব্যয় কমাতে হবে।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) সৌদি অর্থনীতি আগের প্রন্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাধ্যমে মন্দা এড়িয়েছে দেশটি। এ প্রবৃদ্ধিতে জ্বালানি তেল ও জ্বালানি তেলবহির্ভূত বেসরকারি কার্যক্রম উভয়ই ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত কার্যকর রাখা হলে স্বল্পমেয়াদে প্রবৃদ্ধি বাধা পাবে বলে প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে।
সৌদি অর্থনীতি চলতি বছর ১ দশমিক ৩ শতাংশ সম্প্রসারণ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে চতুর্থ প্রান্তিক এবং ২০২৫-২৬ সাল পর্যন্ত জ্বালানি তেল উৎপাদন বাড়লে সম্প্রসারণ যথাক্রম ৪ দশমিক ৫ ও ৪ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত পারে।
অন্যান্য ওপেক প্লাস সদস্যদের তুলনায় ইউএই শিগগিরই জ্বালানি তেল উৎপাদন বাড়াবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি চলতি বছর ৩ দশমিক শতাংশে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৫ সালে এ হার হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
কাতারের অর্থনীতি চলতি বছর ও ২০২৫ সালের বেশির ভাগ সময় মধ্যম মানের প্রবৃদ্ধি দেখবে। কাতারের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৪ ও ২৫ সালে যথাক্রমে ২ শতাংশ ও ২ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। তবে ২০২৬ সালের জন্য প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তের কারণে কুয়েত, ওমেন ও বাহরাইনের অর্থনীতি আগের পূর্বাভাসের চেয়েও দুর্বল হতে পারে। এ কারণে ওমান ও বাহরাইন সরকারের কড়া আর্থিক নীতি বজায় রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতের ওপর গুরুত্ব বাড়াতে পারে।
উপসাগরীয় অঞ্চলের বাইরে মিসরে কঠোর আর্থিক ও রাজস্ব নীতির প্রয়োগ হতে পারে। কম মূল্যস্ফীতির কারণে মরোক্কো শিগগিরই শিথিল আর্থিক নীতি গ্রহণ করতে পারে। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভ ক্ষয় তিউনিসিয়াকে ভোগাতে পারে। দেশটির সম্ভাব্য সার্বভৌম খেলাপি ঋণের হুমকিতে রয়েছে।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকস চলতি বছরের জন্য মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে ১ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। ২০২৫ সালে তা ৩ দশমিক ৯ ও ২০২৬ সালে ৪ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। সূত্র: আরব নিউজ।