প্রায় এক হাজার ৮০ কোটি টাকায় রাজধানীতে দেশের প্রথম ‘পরিবেশবান্ধব’ আবাসিক প্রকল্প তৈরি করতে যাচ্ছে অন্যতম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অনন্ত গ্রুপ।
‘অনন্ত টেরেসেস’ প্রকল্পটি হবে দেশের আবাসিক খাতে প্রথম এলইইডি (লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন) প্লাটিনাম-সনদপ্রাপ্ত গেটেড কমিউনিটি। এই স্বীকৃতি আসে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল থেকে।
অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় নয়টি ২১তলা টাওয়ার তৈরি করা হবে।’
এলইইডি-প্রত্যয়িত বাড়িগুলোর নকশা এমনভাবে করা হয় যাতে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসে। স্বাচ্ছন্দ্য ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নিরাপদ নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়।
এসব আবাসিক ভবনে পানি-বিদ্যুতের ব্যবহার কম হওয়ায় ইউটিলিটি বিল কম আসে।
বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ভবন এলইইডি সনদ পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এমন ধারণা মাথায় আসে উল্লেখ করে শরীফ জহির বলেন, ‘আমি উন্নত দেশগুলোয় গেটেড কমিউনিটি দেখেছি। যেহেতু দেশে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে ও অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে, তাই এ ধরনের ফ্ল্যাটের চাহিদা আছে।’ আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্মাণ সামগ্রীর দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় প্রকল্পের খরচ এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।’
‘অনন্ত টেরেসেস’ বাস্তবায়নে অনন্ত রিয়েল এস্টেট লিমিটেডকে ৫০০ কোটি টাকার সিন্ডিকেটেড টার্ম সুবিধার ব্যবস্থা করেছে নয় দেশি ব্যাংক।
প্রকল্পের প্রধান অর্থ যোগানদাতা ও এজেন্ট ঢাকা ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা দেবে।
বাকি আট ব্যাংক থেকে ৪০০ কোটি টাকা নেওয়া হবে। ব্যাংকগুলো হলো—আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
ঢাকা ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব সিন্ডিকেশনস অ্যান্ড স্ট্রাকচার্ড ফাইন্যান্স মনিরুল আলম বলেন, ‘মূলত নির্মাতার অবস্থান ও খ্যাতি কারণে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছি।’
প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হবে বলে আশা করেন তিনি।
রাজধানীর মাদানী অ্যাভিনিউয়ে ৪৩ বিঘা জমির ওপর এই প্রকল্পে আন্তর্জাতিক পরামর্শকদের নিয়োগ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এটি হবে ঢাকার সবচেয়ে বড় কনডোমিনিয়াম প্রকল্প।’
গুলশান-২ এর দুই কিলোমিটারের মধ্যে ও বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার কাছাকাছি মাদানী অ্যাভিনিউয়ে দ্রুতগতিতে আবাসন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্যার জন উইলসন স্কুল, শেফস টেবিল কোর্টসাইড, ইউনাইটেড সিটি ও জলসিঁড়ি আবাসনসহ অনেক বড় প্রতিষ্ঠান আছে।
এখানে আরও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে ও পাইপলাইনে আছে।
‘এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকল্পটি গ্রাহকদের জন্য লাভজনক হবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বারিধারার কাছে হলেও অভিজাত এলাকাটির তুলনায় মাদানী অ্যাভিনিউয়ে ফ্ল্যাটের দাম অনেক কম হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের ৬৪ শতাংশ জায়গা সবুজ থাকবে।’
এখানে শপিং মল, রিটেইল স্টোর, অভিজাত খাবারের দোকান, সুপারমার্কেট ও মাল্টিপ্লেক্স মুভি থিয়েটার থাকবে।
একটি মূল্যায়নের কথা উল্লেখ করে মনিরুল আলম বলেন, ‘প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই ফ্ল্যাটগুলোর বুকিং নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ১৬টি অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হয়েছে। এখানে ঋণের টাকা বিনিয়োগ নিরাপদ ও লাভজনক হবে।’
ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ সাত বছর হবে বলে জানান তিনি।
‘বড় প্রকল্পের জন্য বিস্তৃত জমির প্রয়োজন। গুলশান ও বারিধারায় এত বড় জমি পাওয়া যায় না। তাই আমরা মাদানী এভিনিউ বেছে নিয়েছি। আমরা বাসিন্দাদের বিশ্বমানের আবাসিক সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রকল্পটি ডিজাইন করেছি,’ বলেন শরীফ জহির।
তার মতে, বারিধারা ও গুলশানের তুলনায় মাদানী অ্যাভিনিউয়ে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুটে অন্তত ১০ হাজার টাকা কম হবে।
বাংলাদেশে এলইইডি সনদ মূলত তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। দেশে এখন ২০৭টি পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা আছে।