প্রায় সবারই স্বপ্ন থাকে সুন্দর পরিবেশে নিজের একটি স্থায়ী আবাসের। কিন্তু সাধ আর সাধ্যের মেলবন্ধন ঘটে না অনেকের ক্ষেত্রেই। কারণ মূলত একটাই—পর্যাপ্ত অর্থের অভাব। মধ্যবিত্তরাই এই সংকটে থাকেন বেশি। তাঁদের স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়াতেই কাজ করছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক আইএফআইসি পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শাহ এ সারওয়ার বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আছে। শর্তগুলো মানলে সহজেই পেয়ে যাবেন প্রয়োজনীয় ঋণ। কিছু নিয়মনীতি মেনে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় আবেদন করতে হবে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আপনাকে যোগ্য মনে করে, তাহলেই ঋণ পাবেন।’
শাহ এ সারওয়ার বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকেই চাকরি থেকে অবসর নিয়ে, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কিন্তু প্রায়ই শোনা যায়, স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ মাঝপথে থাকতে থাকতেই তিনি মারা যান। ফলে সারা জীবনের কষ্টার্জিত অর্থে নির্মিত বাড়িতে বসবাসের সৌভাগ্য তাঁর হয় না। তাই ‘‘আমার বাড়ি’’ স্কিমের আওতায় আমরা খুব সহজেই হোম লোনের মাধ্যমে গ্রাহকদের বাড়ি নির্মাণে সহায়তা করছি। যা আপনাকে স্বপ্নের বাড়িতে বসবাসের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ করে দিবে।’
ঋণ প্রাপ্তির নিয়ম
বর্তমানে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। তবে ব্যাংকভেদে কিছুটা ভিন্নতা আছে। আবার কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এই সুদের হার বেশি, যা সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ, যা কিস্তির মেয়াদেভেদে কমবেশি হয়ে থাকে। ব্যাংক থেকে ফ্ল্যাট বা জমি কেনার জন্য ঋণ গ্রহণের শর্ত ৭০ বনাম ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ ১ কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট কিনলে ব্যাংক ঋণ দেবে ৭০ লাখ, বাকি ৩০ লাখ টাকা দিতে হবে আপনাকে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাবেন ৮০ শতাংশ। তবে ব্যাংক থেকে আপনি কত টাকা ঋণ পাবেন, সেটি নির্ভর করে আপনার মাসিক বেতন ও আয়ের ওপর। সমীক্ষায় দেখা গেছে, গ্রাহকেরা সবচেয়ে বেশি আবাসন ঋণ নেন ব্যাংক থেকে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঋণ সুবিধা
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অল্প সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ পাওয়ার সুযোগ আছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি কিছু ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ ঋণ দিচ্ছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে তাঁরা ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন। এতে সর্বোচ্চ ঋণসীমা ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা, সর্বোচ্চ ২০ বছর মেয়াদে। রয়েছে আরও সুযোগ-সুবিধা। তবে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কেউ এ ঋণ পাবেন না।
ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শর্ত
• ঋণগ্রহীতার বয়স হতে হবে ২৫ থেকে ৬৫ বছর।
• চাকরিজীবীদের মাসিক আয় হতে হবে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা।
যেসব কাগজপত্র লাগবে
• ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে সম্পাদিত ক্রয়ের রেজিস্ট্রি করা চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
• জমির মালিক ও ডেভেলপারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
• অনুমোদিত নকশা ও অনুমোদনপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
• ফ্ল্যাট কেনার রেজিস্ট্রি করা বায়না চুক্তিপত্রের মূলকপি ও বরাদ্দপত্র।
• বাড়ি নির্মাণ ঋণের জন্য অনুমোদিত নকশার সত্যায়িত ফটোকপি, মূল দলিল, নামজারি খতিয়ান, খাজনা রসিদের সত্যায়িত ফটোকপি।
• সিএস, এসএ, আরএস, বিএস খতিয়ানের সত্যায়িত কপি।
• জেলা বা সাব–রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে ১২ বছরের তল্লাশিসহ নির্দায় সনদ (এনইসি) এবং সরকার থেকে বরাদ্দ পাওয়া জমির ক্ষেত্রে লাগবে মূল বরাদ্দপত্র ও দখল হস্তান্তরপত্র।
বন্ধকি ঋণ
ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে স্থায়ী সম্পদ জামানত রেখে তার বিপরীতে ঋণ নেওয়াকে বলা হয় ‘বন্ধকি ঋণ’ বা মর্টগেজ লোন। সবচেয়ে ব্যবহৃত জামানত মাধ্যম জমির দলিল। সম্পত্তি মর্টগেজ রাখলে সুদ কম ও সহজে পর্যাপ্ত অর্থের জোগান পাওয়া যায়। তাই সম্পত্তি বিক্রির প্রয়োজন পড়ে না। মর্টগেজ লোন নিতে প্রাথমিক পর্যায়ে আবেদনের সময় এবং ঋণ পাওয়ার আগে চূড়ান্ত পর্যায়ে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এগুলোর মধ্যে আছে, এক বছরের ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, ইউটিলিটি বিলের কপি, সবশেষ বছরের ব্যাংক বিবরণী, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, জামিনদারের কাগজপত্র, বন্ধকযোগ্য সম্পদের দলিলপত্র, যন্ত্রপাতি হলে মালিকানা সাপেক্ষে প্রমাণপত্র, স্যালারি সার্টিফিকেট ইত্যাদি।