প্রধান প্রতিবেদন
আমরা কি জেনেবুঝে বিপর্যয় ডেকে আনছি
ঢাকার মাটির নিচে যে ভূতাত্ত্বিক শক্তি সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে, তার সামান্যতম বিচ্যুতিতেও এই মহানগরী এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে। এই কঠিন বাস্তবতায় শহরটিকে নতুন করে গড়ে তোলার সুযোগ না থাকলেও, এর ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। বিদ্যমান অবকাঠামোকে কেন্দ্র করেই আমাদের এমন উপায় বের করতে হবে, যা এই শহরকে নিরাপদ করতে পারে।
গত ৩০-৩৫ বছরে ঢাকা শহরের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে, যার একটি বড় অংশই হয়েছে নরম মাটির ওপর। বিশেষ করে, শহরের পূর্বাংশে প্রগতি সরণি থেকে বালু নদ পর্যন্ত এবং শহরের পশ্চিম অংশে শ্যামলী, বছিলার মতো এলাকাগুলো নরম মাটির স্তরের ওপর গড়ে উঠেছে। নরম মাটিতে নির্মিত অবকাঠামো ভূমিকম্পের সময় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। কারণ, এ ধরনের মাটি ভূকম্পন তরঙ্গকে বিবর্ধিত করে এবং তীব্র ঝাঁকুনিতে এর ভারবহন ক্ষমতা হারাতে পারে। এই অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ শহরকে একটি গুরুতর বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
অবকাঠামোগত বিশৃঙ্খলা ঢাকার ঝুঁকিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে, যার মূলে রয়েছে বিল্ডিং কোডের (ইমারত বিধিমালা) নির্দেশনাকে প্রয়োগ না করতে পারার ব্যর্থতা। শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ ভবনই কোনো না কোনোভাবে ইমারত নির্মাণ আইন ও বিল্ডিং কোড অমান্য করে তৈরি হয়েছে, যা সেগুলোকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। খুব অল্পসংখ্যক ভবন তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হলেও, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যাই বেশি। বিল্ডিং কোডের এই পদ্ধতিগত লঙ্ঘন মূলত এর প্রয়োগ ও তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার অভাবকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, যা একটি কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রয়োজনীয়তাকে অপরিহার্য করে তুলেছে।
ঢাকাকে ভূমিকম্পের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত করতে একটি দ্বিমুখী কৌশল গ্রহণ করা অপরিহার্য। একদিকে যেমন বিদ্যমান ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তেমনই ভবিষ্যৎ নির্মাণকাজ যেন সম্পূর্ণ নিরাপদ ও টেকসই হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে। এই দুটি লক্ষ্য সামনে রেখেই আমাদের কর্মপরিকল্পনা সাজাতে হবে।
এর জন্য প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো শহরের প্রতিটি ভবনের ভূমিকম্প ঝুঁকি মূল্যায়ন করা। মূল্যায়নের পর যেসব ভবনকে শক্তিশালী করা সম্ভব, সেগুলোকে রেট্রোফিটিং বা মজবুতকরণ করতে হবে। জাপানের মতো ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলো এই পদ্ধতির সফল প্রয়োগ করে তাদের পুরোনো ভবনগুলোকে সুরক্ষিত করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ভবনগুলোর ক্ষেত্রে এই মজবুতকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই; এটিই বিদ্যমান অবকাঠামোকে সম্ভাব্য ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর একমাত্র বাস্তবসম্মত পথ।
ভবিষ্যতে ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে নতুন নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে কোনো আপস করা চলবে না। নতুন সব নির্মাণকাজে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) কঠোরভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে চলবে না। এই কাজ কার্যকরভাবে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি দ্রুত গঠন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি রাজউক, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রতিটি সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, যেন তারা নিজ নিজ এখতিয়ারে বিল্ডিং কোডের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারে।
সরকারি তদারকি–ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে এবং নির্মাণকাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ‘থার্ড-পার্টি মনিটরিং’ একটি কার্যকর কৌশল হতে পারে।
দুর্যোগ–পূর্ববর্তী এই প্রস্তুতিগুলোর পাশাপাশি, দুর্যোগ–পরবর্তী উদ্ধারব্যবস্থার দিকে মনোযোগ দেওয়াও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখজনক হলেও সত্য, ঢাকায় দুর্যোগকালীন উদ্ধার সক্ষমতা এতটাই দুর্বল যে একটি ছোট আকারের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্যও তা যথেষ্ট নয়। ফায়ার সার্ভিস, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো এবং সিটি করপোরেশনের মতো সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। নিকট অতীতে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির মতো ঘটনা আমাদের এই দুর্বলতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অপ্রতুল, সেহেতু আমাদের সবচেয়ে বাস্তবসম্মত এবং জীবনরক্ষাকারী কৌশল হলো একটি সুপ্রশিক্ষিত ও বিশাল স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গড়ে তোলা। ভূমিকম্প–পরবর্তী উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য প্রচুর পরিমাণে প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করতে হবে। এই অনিশ্চিত কিন্তু সম্ভাব্য দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন ও তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানই হতে পারে দুর্যোগ মোকাবিলার অন্যতম কার্যকর একটি উপায়।
ঢাকার ভূমিকম্প ঝুঁকি অত্যন্ত গুরুতর এবং এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। তবে হতাশ না হয়ে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে এই ঝুঁকি মোকাবিলা করা সম্ভব। বিদ্যমান ভবনগুলোর রেট্রোফিটিং, নতুন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোডের কঠোর প্রয়োগ এবং দুর্যোগ–পরবর্তী সময়ের জন্য একটি শক্তিশালী স্বেচ্ছাসেবকভিত্তিক উদ্ধারব্যবস্থা গড়ে তোলাই হলো সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ। এই সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ কোনো বিকল্প নয়, বরং ঢাকার টিকে থাকার একমাত্র উপায়। এ বিষয়টি উপেক্ষা করে কি আমরা জেনেবুঝে বিপর্যয় ডেকে আনব?
● অধ্যাপক আকতার মাহমুদ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক
আবাসন সংবাদ
ভূমিকম্পে ঢাকার বড় বিপদ স্পষ্ট হচ্ছে
ভূমিকম্পে রাজধানী শহর ঢাকার বড় বিপদের ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের নৈকট্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রাণহানির ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে এমন মত দিয়েছেন ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা।
গত শুক্র ও গতকাল শনিবার প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশে চারটি ভূমিকম্পের ঘটনা এমন ঝুঁকির বিষয়টি সামনে এনেছে। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎস ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে।
ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎপত্তিস্থলের গভীরতা যত কম হবে, তত বেশি ঝাঁকুনি হবে। শুক্রবারের ভূকম্পনের তীব্রতা ছিল স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তীব্র ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। এ ভূমিকম্পের ঘটনায় শিশুসহ ১০ জন নিহত হন। আহত হন ৬ শতাধিক মানুষ।
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে গতকাল সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার এবং সাড়ে সাত ঘণ্টার পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আরও একটি ভূমিকম্প হয়, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। এ ভূমিকম্প দুটোরই উৎপত্তি ছিল নরসিংদী। সন্ধ্যায় কাছাকাছি সময়ে আরও একটি ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডা; যার মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭।
এসব মৃদু ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পকে বড় ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন ভূমিকম্প ঢাকার ঝুঁকি কতটা স্পষ্ট করছে, তা বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিগত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের নথিভুক্ত ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়ে ৩৯টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভেতরে। এর মধ্যে ১১টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৮৬ কিলোমিটার এলাকার ভেতরে। অর্থাৎ ২৮ শতাংশের বেশি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে। এসব ভূমিকম্পের মাত্রা ৩ দশমিক ৩ থেকে ৫ দশমিক ৭। এর মধ্যে শুক্রবার নরসিংদীতে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রার (৫ দশমিক ৬) ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ঢাকার ১০০ থেকে ২৬৭ কিলোমিটারের মধ্যে বাকি ২৮টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল।
পাঁচ বছরে ১৮ জেলায় ভূমিকম্প হয়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট, নেত্রকোনা, দিনাজপুর, হবিগঞ্জ, রংপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, পাবনা, হবিগঞ্জ, রাঙামাটি, চুয়াডাঙ্গা, শরীয়তপুর, যশোর ও কুড়িগ্রাম।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রে একসময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন মো. মমিনুল ইসলাম। এখন তিনি আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নরসিংদীতে এর আগেও ভূমিকম্প হয়েছে। তবে মাত্রা ছিল কম। বাংলাদেশের সীমান্তে তিনটি টেকটনিক প্লেট আছে। এই তিনটি প্লেটই সক্রিয়। প্রতিনিয়ত এখানে ছোট ছোট ভূমিকম্প হচ্ছে। প্লেট বাউন্ডারির পাশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকে।
মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, নরসিংদীতে একটি সাব-ফল্ট রয়েছে। নরসিংদীতে আগে ছোট ভূমিকম্প হলেও গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এখন বোঝা যাচ্ছে, এই সাব-ফল্ট অনেক বড়। এটা ঢাকার কাছ পর্যন্ত চলে এসেছে। এই ভূমিকম্প প্রমাণ করল ঢাকা বড় ঝুঁকির মধ্যে।
বেশি ভূমিকম্প রাতে
গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে হওয়া ৩৯টি ভূমিকম্প কোন সময় হয়েছে, সেটিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশ্লেষণে এসেছে। এতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ভূমিকম্প হয়েছে রাতে। যেমন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সময়ে ভূমিকম্প হয়েছে ২৩টি। বাকি ১৬টি ভূমিকম্প হয়েছে দিনের বেলায় (ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা)।
রাতে বেশির ভাগ মানুষ ঘুমিয়ে অথবা বাসায় থাকে। এমন সময়ে ভূমিকম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা বেশি থাকে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, যে পরিমাণ ভূমিকম্পের শক্তি সাবডাকশন জোনে (দুটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থল) পুঞ্জীভূত হয়ে আছে, তার ১ শতাংশের কম নির্গত হয়েছে। ফলে বারবার হওয়া এই ভূকম্পগুলো বড় একটি ভূমিকম্পের পথ খুলে দিয়েছে।
অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর ‘আফটার শক’ হবে, এমনটা আগেই ধারণা করা হয়েছিল। তবে আফটার শকগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ভূ-অভ্যন্তরের যে ফাটল বা ফল্ট লাইনটি এত দিন ধরে প্রচণ্ড চাপে একে অপরের সঙ্গে আটকে ছিল, তা নড়তে শুরু করেছে এবং শক্তি নির্গমনের একটি প্রক্রিয়া চালু করেছে। এমন আফটার শক হতে হতে বড় ভূমিকম্প হবে। সেটা খুবই নিকটে হতে পারে।
ঝুঁকির চার কারণ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব হাসান চারটি কারণে ঢাকার বিপদটা স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উৎপত্তিস্থল থেকে ঢাকার নৈকট্য একটা কারণ। ঢাকার কাছে এ ফল্টটা সম্পর্কে এত স্পষ্ট ধারণা ছিল না। সেটা এখন খুলতে শুরু করেছে। যার প্রভাবে সামনে আরও ভূমিকম্প হতে পারে।
মাটির গঠনকে দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উল্লেখ করে রাকিব হাসান বলেন, ঢাকার নতুন অংশগুলো খুব নিচু জায়গায় মাটি ভরাট করে গড়ে উঠেছে। এমন অঞ্চলে ভূমিকম্পের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। তৃতীয়ত, ঢাকার ভবনগুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ডিজাইন কোড মেনে হচ্ছে না। চার নম্বর হলো ঢাকা শহরের জনঘনত্ব। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে।
প্রস্তুতি কেমন
২০১৬ সালে ভূমিকম্পের প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলার অংশ হিসেবে ন্যাশনাল অপারেশন সেন্টার নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি হলেও গত এক দশকে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ সেন্টার নির্মাণে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় জায়গাও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব আবু দাউদ মো. গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, তেজগাঁওয়ে এক একর জায়গা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভবন নির্মাণ করতে গেলে নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য কমপক্ষে আরও ২৫ বর্গমিটার জায়গা থাকা দরকার। সেটা পাওয়া যায়নি।
দুর্যোগের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগের জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। বড় দুর্যোগের ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসকে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন সংস্থার জন্য আরও সরঞ্জাম সংগ্রহের কাজ চলমান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে আমরা সে সংগ্রহ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা উপকূলে আমাদের ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক আছেন। নগরে আছে ৪৮ হাজার। তাঁদের যুক্ত করে মানুষকে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতন করার কাজ শুরু করব।’
তবে প্রস্তুতি ও করণীয় দিকগুলো যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন দুর্যোগ ফোরামের সদস্যসচিব গওহর নঈম ওয়ারা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জেলা পর্যায়ে চিঠি দিয়েছে দুর্যোগের তথ্য দেওয়ার জন্য। এ ধরনের দুর্যোগে এমনিতে তথ্য আসার কথা। সেটার জন্য চিঠি দিতে হবে কেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নরসিংদীর দুর্যোগের তথ্য আসতে লেগেছে এক দিনের বেশি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারের জায়গা নেই জানিয়ে গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, যে দেশগুলো স্থানীয় সরকারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, তারা দুর্যোগ মোকাবিলায় এগিয়ে আছে। দুর্যোগ নিয়ে সচেতনতার বিষয়টি পাঠ্যসূচিতে থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে ছাত্ররা লাফিয়ে পড়েছে। এ রকম কেন হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব চর্চা করায় না। এটা স্কুল থেকে শেখাতে হবে।
আবাসন সংবাদ
ভূমিকম্প-পরবর্তী জরুরি পরিস্থিতি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ দিন বন্ধ ঘোষণা
ভূমিকম্প–পরবর্তী উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতিতে আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়ালি এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্প ও পরাঘাতের কারণে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক আঘাতের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি তাঁদের সার্বিক নিরাপত্তার দিক সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সভায় বুয়েটের বিশেষজ্ঞ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের পরিচালক এবং প্রধান প্রকৌশলীর মতামত বিশ্লেষণ করা হয়। তাঁরা ভূমিকম্প–পরবর্তী আবাসিক হলগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সামগ্রিক ঝুঁকি মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার বলে মতামত দেন। ঝুঁকি নিরূপণ ও সম্ভাব্য সংস্কারের স্বার্থে আবাসিক হলগুলো খালি করার কথাও বলেন তাঁরা।
এ পটভূমিতে সভায় আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা এবং আবাসিক হলগুলো খালি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই আগামীকাল বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছেড়ে যেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রাধ্যক্ষদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
তবে বন্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসগুলো যথারীতি খোলা থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এর আগে আজ রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছিল।
-
বিবিধ2 years agoবাংলাদেশে প্রচলিত বাড়ি ভাড়ার চুক্তি, নিয়ম ও নীতিমালা
-
নির্বাচিত প্রতিবেদন2 years agoরিয়েল এস্টেট ব্যবসা করবেন যেভাবে
-
আবাসন সংবাদ2 months agoরাজউকের নির্দেশে নর্থ সাউথ গ্রীন সিটি বন্ধ
-
আইন-কানুন2 months agoদলিলে লেখা এসব শব্দের অর্থ জেনে রাখুন, নাহলে পড়তে পারেন আইনি জটিলতায়
-
আবাসন সংবাদ2 months agoসীমান্ত রিয়েল এস্টেট এর অনুমোদনহীন সীমান্ত সিটি ও সীমান্ত কান্ট্রি প্রকল্প
-
আইন-কানুন2 years agoরিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের সাথে জমি বা ফ্ল্যাট নিয়ে সমস্যা ও তার প্রতিকার (১ম পর্ব)
-
আবাসন সংবাদ2 months agoপ্রিমিয়াম হোল্ডিংয়ের বর্ষপূর্তিতে ৩ দিনব্যাপী একক আবাসন মেলা অনুষ্ঠিত
-
আবাসন সংবাদ11 months agoবন্ধ হচ্ছে অবৈধ আবাসন প্রকল্প
