আবাসন সংবাদ
দেশের আবাসন খাত : স্থাপত্যশৈলী বদলাচ্ছে, দৃষ্টিনন্দন আবাসনের চাহিদা বাড়ছে
একজন সাংবাদিক বিখ্যাত ইতালীয় স্থপতি রেনজো পিয়ানোকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি অনেক বড় বড় স্থাপনার স্থপতি। আপনাকে যদি বলা হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের জন্য বাড়ি বানাতে, কীভাবে করবেন?’
উত্তরে রেনজো মাত্র তিনটি বিষয় বলেছিলেন—পেইন্ট ইট হোয়াইট, মেক ইয়োর উইন্ডোজ বিগার অ্যান্ড ইউজ লেস ফার্নিচার! এর অর্থ, দেয়ালের রং হতে হবে সাদা, জানালা হতে হবে বড় এবং যে আসবাবগুলো না হলেই না, শুধু সেগুলোই ঘরে রাখতে হবে। তাহলে একটা সাধারণ স্থাপনাও হয়ে উঠবে দর্শনীয়।
ইতালীয় এই স্থপতির কথা কেন প্রাসঙ্গিক, বর্তমান আবাসনশিল্পের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। ইট, কংক্রিট দিয়ে এখন শুধু আর ইমারত বানানো হয় না। লেখা হয় কবিতা! আঁকা হয় দৃষ্টিনন্দন শহরের ছবি। গ্রাহকেরা সুবিধা এবং অন্যান্য বিষয় ছাড়াও মনোযোগী হয়ে উঠছেন ঘরের সৌন্দর্যের দিকেও।
একটা সময় বাংলাদেশের সাধারণ আবাসনশিল্পে স্থপতিদের সম্পৃক্ততা তেমন ছিল না। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং রাজমিস্ত্রিদের পরিকল্পনাতেই একটি বাড়ি তৈরি হতো। তখন শুধু বাণিজ্যিক ভবন বা সরকারি স্থাপনার জন্য স্থপতিদের সাহায্য নেওয়া হতো। কিন্তু গত এক দশকে সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বড় বড় আবাসনপ্রতিষ্ঠানের প্রকল্পগুলো ডিজাইন করছেন স্বনামধন্য দেশি-বিদেশি স্থপতিরা।
দিন দিন কেন বাড়ছে স্থাপত্যশৈলীর চাহিদা, কারণটা কি শুধুই সৌন্দর্য?
না। একজন স্থপতি যখন কোনো একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করেন, তিনি প্রতিটি বিষয়ের দিকে সূক্ষ্মভাবে লক্ষ রাখেন। নির্মাণের উপাদান থেকে শুরু করে নির্মাণকৌশল, ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ সুবিধা কীভাবে নিশ্চিত হবে, ভাবনাগুলো সব সময়ই তাঁদের মাথায় থাকে। কাজেই তাদের প্রকল্প যখন বাস্তবায়িত হয়, সেই আবাসন সব দিক দিয়েই হয়ে ওঠে অনন্য।
এ বিষয়ে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘যেকোনো নির্মাণেই স্থপতিদের সংশ্লিষ্টতা অত্যন্ত জরুরি। স্থপতিরা শুধু ভবনের সৌন্দর্যের বিষয়টাই খেয়াল রাখেন না, নকশা ও তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে তাঁরা বসবাসকারীর সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করেন। ভবনের ভেতরে আলো-বাতাসের বাধাহীন প্রবাহ, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা—সবকিছুই স্থপতিদের কাজের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি ভবনে বসবাসকারী মানুষের সব ইন্দ্রিয়ের কথা চিন্তা করেই স্থপতিরা নকশা করেন। সেই ভবনে সাংস্কৃতিক ছোঁয়া থাকবে কি না, সেটা পরিবেশবান্ধব হবে কি না এবং কোনো শিশুর সেই ভবনে বেড়ে ওঠার অনুভব কেমন হবে, সেটা নিশ্চিত করাটাও একজন স্থপতির দায়িত্ব।’
স্থাপনাকে পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই করে তুলতে স্থপতিদের গুরুত্ব অপরিসীম। যেভাবে পৃথিবীতে স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে, সেভাবে চলতে থাকলে পৃথিবী থেকে ক্রমশ অরণ্য এবং গাছপালা কমে যেতে শুরু করবে। এ কারণে প্রকৃতিকে অক্ষত রেখেই স্থপতিরা বিভিন্ন স্থাপনার ডিজাইন করছেন। এর মধ্যে আছে বিভিন্ন আবাসিক ভবনও। প্রকৃতির সঙ্গে অপূর্ব মেলবন্ধনের কারণে এই স্থাপনাগুলো যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমন পরিবেশবান্ধবও।
ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম মেগাসিটিগুলোর একটি। ক্রমান্বয়ে এখানে জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরেই নগর–পরিকল্পনাবিদেরা চাইছেন ঢাকাকে একটি পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে। ফলে আবাসনশিল্পেও সুষ্ঠু পরিকল্পনা আনা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি) এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের মতো বিভিন্ন সংস্থা।
সংশ্লিষ্টরা আশা করেন, দেশে আবাসিক, বাণিজ্যিক ভবনসহ বিভিন্ন নির্মাণে স্থপতিদের সংশ্লিষ্টতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তাতে গড়ে উঠবে টেকসই ও দৃষ্টিনন্দন শহর।
আবাসন সংবাদ
৪ দিনব্যাপী আবাসন মেলা শুরু
রাজধানীতে চার দিনব্যাপী আবাসন মেলার আয়োজন করেছে রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। গতকাল শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবারের রিহ্যাব মেলায় ২২০টি স্টল থাকছে। প্রতিদিন সকাল ১০ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে চার দিনব্যাপী আবাসন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, এ খাতে বর্তমানে কিছুটা মন্দা থাকলেও এটি স্থায়ী নয়, সুদিন অবশ্যই ফিরে আসবে।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, আজ যদি কোনো প্লট মালিককে নিজের টাকায় বাড়ি নির্মাণ করতে বলা হয়, তা হলে ঢাকা শহরে কয়টি ভবন আদৌ তৈরি হতোÑ তা ভাবনার বিষয়। ডেভেলপারদের বিষয়ে প্রচলিত ভুল ধারণার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন ডেভেলপাররা শুধু নিজেদের ব্যবসার কথা ভাবেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই ধারণা সঠিক নয়। হয়তো হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতিক্রম থাকতে পারেন, তবে সবাই একটি সুন্দর, পরিকল্পিত ও নিয়মের মধ্যে গড়ে ওঠা শহরই চান।
রিয়াজুল ইসলাম আরও বলেন, লক্ষ্য শুধু ভবন নির্মাণ নয়, বরং পরিবেশবান্ধব ও বাসযোগ্য শহর গড়ে তোলা। গ্রিন বিল্ডিংয়ের ধারণা একদিনে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, তবে ধাপে ধাপে এ জায়গায় যেতে হবে। তিনি বলেন, যে শহর বা ভবনে ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না, সেই উন্নয়ন কোনো কাজে আসে না। এতে কিছু ব্যক্তি লাভবান হয়, কিন্তু দেশ বা সমাজের উপকার হয় না।
রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদুজ্জামান সদস্য এবং ক্রেতাদের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরিতে মেলার গুরুত্ব তুলে ধরেন। রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকৎ আলী ভুইয়া আবাসন খাতের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ (এনএইচএ)-এর চেয়ারম্যান মোছা. ফেরদৌসী বেগম নিয়ম অনুযায়ী ভবন তৈরির কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রিহ্যাবের পরিচালক ও মেলা কমিটির কো-চেয়ারম্যান মিরাজ মোক্তাদির। অনুষ্ঠানে রিহ্যাবের ভাইস প্রসেডিন্টে-১ লায়ন এমএ আউয়াল (সাবেক এমপি), রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট-২ এবং রিহ্যাব ফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আক্তার বিশ্বাস, ভাইস প্রেসিডেন্ট-৩ ইঞ্জি. আব্দুল লতিফ, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) আব্দুর রাজ্জাক, ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজি দেলোয়ার হোসেন, রিহ্যাব পরিচালক ও ফেয়ার স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরুজ সরদার, রিহ্যাব পরিচালক ও প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ লাবিব বিল্লাহ্সহ রিহ্যাব পরিচালকবৃন্দ এবং অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। মেলায় দুই ধরনের টিকিট থাকছে। একটি সিঙ্গেল এন্ট্রি অপরটি মাল্টিপল এন্ট্রি। সিঙ্গেল টিকিটের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী মেলার সময় পাঁচবার প্রবেশ করতে পারবেন। এন্ট্রি টিকিটের প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থ দুস্থদের সাহায্যার্থে ব্যয় করা হবে। এ বছর প্রতিদিন র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে।
আবাসন সংবাদ
ভূমিকম্পে ঢাকার বড় বিপদ স্পষ্ট হচ্ছে
ভূমিকম্পে রাজধানী শহর ঢাকার বড় বিপদের ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের নৈকট্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রাণহানির ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে এমন মত দিয়েছেন ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা।
গত শুক্র ও গতকাল শনিবার প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশে চারটি ভূমিকম্পের ঘটনা এমন ঝুঁকির বিষয়টি সামনে এনেছে। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎস ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে।
ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎপত্তিস্থলের গভীরতা যত কম হবে, তত বেশি ঝাঁকুনি হবে। শুক্রবারের ভূকম্পনের তীব্রতা ছিল স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তীব্র ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। এ ভূমিকম্পের ঘটনায় শিশুসহ ১০ জন নিহত হন। আহত হন ৬ শতাধিক মানুষ।
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে গতকাল সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার এবং সাড়ে সাত ঘণ্টার পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আরও একটি ভূমিকম্প হয়, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। এ ভূমিকম্প দুটোরই উৎপত্তি ছিল নরসিংদী। সন্ধ্যায় কাছাকাছি সময়ে আরও একটি ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডা; যার মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭।
এসব মৃদু ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পকে বড় ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন ভূমিকম্প ঢাকার ঝুঁকি কতটা স্পষ্ট করছে, তা বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিগত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের নথিভুক্ত ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়ে ৩৯টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভেতরে। এর মধ্যে ১১টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৮৬ কিলোমিটার এলাকার ভেতরে। অর্থাৎ ২৮ শতাংশের বেশি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে। এসব ভূমিকম্পের মাত্রা ৩ দশমিক ৩ থেকে ৫ দশমিক ৭। এর মধ্যে শুক্রবার নরসিংদীতে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রার (৫ দশমিক ৬) ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ঢাকার ১০০ থেকে ২৬৭ কিলোমিটারের মধ্যে বাকি ২৮টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল।
পাঁচ বছরে ১৮ জেলায় ভূমিকম্প হয়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট, নেত্রকোনা, দিনাজপুর, হবিগঞ্জ, রংপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, পাবনা, হবিগঞ্জ, রাঙামাটি, চুয়াডাঙ্গা, শরীয়তপুর, যশোর ও কুড়িগ্রাম।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রে একসময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন মো. মমিনুল ইসলাম। এখন তিনি আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নরসিংদীতে এর আগেও ভূমিকম্প হয়েছে। তবে মাত্রা ছিল কম। বাংলাদেশের সীমান্তে তিনটি টেকটনিক প্লেট আছে। এই তিনটি প্লেটই সক্রিয়। প্রতিনিয়ত এখানে ছোট ছোট ভূমিকম্প হচ্ছে। প্লেট বাউন্ডারির পাশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকে।
মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, নরসিংদীতে একটি সাব-ফল্ট রয়েছে। নরসিংদীতে আগে ছোট ভূমিকম্প হলেও গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এখন বোঝা যাচ্ছে, এই সাব-ফল্ট অনেক বড়। এটা ঢাকার কাছ পর্যন্ত চলে এসেছে। এই ভূমিকম্প প্রমাণ করল ঢাকা বড় ঝুঁকির মধ্যে।
বেশি ভূমিকম্প রাতে
গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে হওয়া ৩৯টি ভূমিকম্প কোন সময় হয়েছে, সেটিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশ্লেষণে এসেছে। এতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ভূমিকম্প হয়েছে রাতে। যেমন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সময়ে ভূমিকম্প হয়েছে ২৩টি। বাকি ১৬টি ভূমিকম্প হয়েছে দিনের বেলায় (ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা)।
রাতে বেশির ভাগ মানুষ ঘুমিয়ে অথবা বাসায় থাকে। এমন সময়ে ভূমিকম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা বেশি থাকে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, যে পরিমাণ ভূমিকম্পের শক্তি সাবডাকশন জোনে (দুটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থল) পুঞ্জীভূত হয়ে আছে, তার ১ শতাংশের কম নির্গত হয়েছে। ফলে বারবার হওয়া এই ভূকম্পগুলো বড় একটি ভূমিকম্পের পথ খুলে দিয়েছে।
অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর ‘আফটার শক’ হবে, এমনটা আগেই ধারণা করা হয়েছিল। তবে আফটার শকগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ভূ-অভ্যন্তরের যে ফাটল বা ফল্ট লাইনটি এত দিন ধরে প্রচণ্ড চাপে একে অপরের সঙ্গে আটকে ছিল, তা নড়তে শুরু করেছে এবং শক্তি নির্গমনের একটি প্রক্রিয়া চালু করেছে। এমন আফটার শক হতে হতে বড় ভূমিকম্প হবে। সেটা খুবই নিকটে হতে পারে।
ঝুঁকির চার কারণ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব হাসান চারটি কারণে ঢাকার বিপদটা স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উৎপত্তিস্থল থেকে ঢাকার নৈকট্য একটা কারণ। ঢাকার কাছে এ ফল্টটা সম্পর্কে এত স্পষ্ট ধারণা ছিল না। সেটা এখন খুলতে শুরু করেছে। যার প্রভাবে সামনে আরও ভূমিকম্প হতে পারে।
মাটির গঠনকে দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উল্লেখ করে রাকিব হাসান বলেন, ঢাকার নতুন অংশগুলো খুব নিচু জায়গায় মাটি ভরাট করে গড়ে উঠেছে। এমন অঞ্চলে ভূমিকম্পের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। তৃতীয়ত, ঢাকার ভবনগুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ডিজাইন কোড মেনে হচ্ছে না। চার নম্বর হলো ঢাকা শহরের জনঘনত্ব। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে।
প্রস্তুতি কেমন
২০১৬ সালে ভূমিকম্পের প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলার অংশ হিসেবে ন্যাশনাল অপারেশন সেন্টার নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি হলেও গত এক দশকে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ সেন্টার নির্মাণে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় জায়গাও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব আবু দাউদ মো. গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, তেজগাঁওয়ে এক একর জায়গা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভবন নির্মাণ করতে গেলে নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য কমপক্ষে আরও ২৫ বর্গমিটার জায়গা থাকা দরকার। সেটা পাওয়া যায়নি।
দুর্যোগের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগের জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। বড় দুর্যোগের ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসকে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন সংস্থার জন্য আরও সরঞ্জাম সংগ্রহের কাজ চলমান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে আমরা সে সংগ্রহ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা উপকূলে আমাদের ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক আছেন। নগরে আছে ৪৮ হাজার। তাঁদের যুক্ত করে মানুষকে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতন করার কাজ শুরু করব।’
তবে প্রস্তুতি ও করণীয় দিকগুলো যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন দুর্যোগ ফোরামের সদস্যসচিব গওহর নঈম ওয়ারা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জেলা পর্যায়ে চিঠি দিয়েছে দুর্যোগের তথ্য দেওয়ার জন্য। এ ধরনের দুর্যোগে এমনিতে তথ্য আসার কথা। সেটার জন্য চিঠি দিতে হবে কেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নরসিংদীর দুর্যোগের তথ্য আসতে লেগেছে এক দিনের বেশি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারের জায়গা নেই জানিয়ে গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, যে দেশগুলো স্থানীয় সরকারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, তারা দুর্যোগ মোকাবিলায় এগিয়ে আছে। দুর্যোগ নিয়ে সচেতনতার বিষয়টি পাঠ্যসূচিতে থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে ছাত্ররা লাফিয়ে পড়েছে। এ রকম কেন হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব চর্চা করায় না। এটা স্কুল থেকে শেখাতে হবে।
-
বিবিধ2 years agoবাংলাদেশে প্রচলিত বাড়ি ভাড়ার চুক্তি, নিয়ম ও নীতিমালা
-
নির্বাচিত প্রতিবেদন2 years agoরিয়েল এস্টেট ব্যবসা করবেন যেভাবে
-
আবাসন সংবাদ3 months agoরাজউকের নির্দেশে নর্থ সাউথ গ্রীন সিটি বন্ধ
-
আইন-কানুন3 months agoদলিলে লেখা এসব শব্দের অর্থ জেনে রাখুন, নাহলে পড়তে পারেন আইনি জটিলতায়
-
আইন-কানুন2 years agoরিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের সাথে জমি বা ফ্ল্যাট নিয়ে সমস্যা ও তার প্রতিকার (১ম পর্ব)
-
আবাসন সংবাদ3 months agoসীমান্ত রিয়েল এস্টেট এর অনুমোদনহীন সীমান্ত সিটি ও সীমান্ত কান্ট্রি প্রকল্প
-
আবাসন সংবাদ12 months agoবন্ধ হচ্ছে অবৈধ আবাসন প্রকল্প
-
বিবিধ2 years agoফ্ল্যাট বা অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র নমুনা
