আবাসন সংবাদ
রাজউকের নির্দেশে নর্থ সাউথ গ্রীন সিটি বন্ধ

রাজধানীসংলগ্ন রূপগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও গাজীপুর—যেখানেই হাত দিয়েছে ‘নর্থ সাউথ গ্রুপ’, সেখানেই জমি দখল, ভয়ভীতি আর প্রতারণার বিস্তৃত অভিযোগ। এবার সেই বহুল আলোচিত ‘নর্থ সাউথ গ্রীন সিটি’ প্রকল্প রাজউকের চিঠিতে বন্ধ ঘোষণা হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন। লাখ লাখ টাকা জমা রেখে কিংবা মাসের পর মাস কিস্তি শোধ করার পর শত শত পরিবার এখন বুঝতে পারছে—সবই ছিল ভুয়া অনুমোদনের গল্প এবং কোটি কোটি টাকার ভাগাভাগির খেলা।
রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত স্মারক নং: ২৫.৩৬.০০০০.০৩৮.০৪.০০৩.২৪-৬৪৩, তারিখ ১৭ জুন ২০২৫—এর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পূর্বাচল নর্থ সাউথ গ্রীন সিটি’ প্রকল্প কোনো বৈধ অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি জলাধার ও কৃষিজমি অবৈধভাবে বালু ভরাট করে প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে, যা প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০, রিয়েল এস্টেট আইনের একাধিক ধারা এবং সংশোধিত ভূমি উন্নয়ন বিধিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, অফিস পরিচালনার লাইসেন্স আর প্রকল্প অনুমোদন এক নয়। এটি কোনোদিনই অনুমোদন পাবে না। আমরা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি, কেউ যেন প্রতারিত না হয়।
ভুয়া অনুমোদনের ফাঁদ
ভুক্তভোগী এক ক্রেতা বলেন, রাজউকের অনুমোদন আছে বলে আমাদের কাছে একটি অফিস অনুমোদনের কাগজ দেখিয়ে প্লট বিক্রি করেছে। প্রকল্পের কোনো অনুমোদন নেই—এখন বুঝতে পারছি।
নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম সলিমুল্লাহ জানান, অফিস পরিচালনার অনুমোদন কখনো প্রকল্প অনুমোদন নয়। রাজউকের বন্ধ ঘোষণার পর এখন কেউ বিনিয়োগ করলে ক্ষতির দায় পুরোপুরি তারই।
জমি দখল ও ভয়ভীতির অভিযোগ
রূপগঞ্জের ভুলতা, শান্তিনগর, কইরাবো, শোনাবো, মিরকিচা, মাছিপুর—প্রতিটি এলাকায় জমির মালিকদের অভিযোগ একই রকম। তাদের ভাষায়, বায়না করে বছরের পর বছর জমি দখল করে রাখে, রেজিস্ট্রেশন দেয় না, টাকা চাইলে মামলা-হুমকি দেয়।
এছাড়া গাজীপুরে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি’ প্রকল্প হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জলাশয় ভরাট করে চলছে। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বারবার বন্ধ করলেও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রকল্পটি আবার শুরু হয়েছে।
সামরিক পরিচয় ও চাকচিক্য
সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানটি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহফুজুর রহমানকে সিইও করা হয়। তবে প্রকল্প বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, আমি কোম্পানির মালিক নই, শুধু চাকরি করি। কিছু বলার নেই।
কোটি টাকার ভাগাভাগি ও নতুন কোম্পানি
প্রতিষ্ঠানের সাবেক সিআর প্রধান ফাহমিদা জানান, এরা কোটি কোটি টাকা ক্রেতাদের কাছ থেকে তোলে, মালিকরা নিজেরা ভাগাভাগি করে। টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ঝামেলার কারণে মাত্র তিন বছরেই পরিচালক ওমর ফারুক প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়ে কোম্পানি ছেড়ে ‘জেনারেল গ্রুপ’ নামে নতুন কোম্পানি খুলেছে।
ব্লক এ’র শত শত গ্রাহকের সর্বনাশ
রূপগঞ্জের গ্রীন সিটির এ ব্লক-এ প্লট কিনেছেন হাজারো পরিবার। প্রতি কাটা জমির দাম ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কেউ কেউ ৫-৮ লাখ টাকা দিয়ে এককালীন পরিশোধ করেছেন। নিয়মিত কিস্তি দেওয়ার পরও এক-দুই কিস্তি বাদ পড়লে প্লট বাতিল দেখানো হচ্ছে।
সাবেক কর্মকর্তা ফাহমিদা জানান, প্লট তো দেবেই না, টাকা ফেরত চাইলে বলবে বন্ধ হয়ে গেছে। অফিস আর গাড়ির চাকচিক্য আর টিভি বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষের জীবন শেষ করছে।
এমডির বিতর্কিত মন্তব্য
নর্থ সাউথ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম ইউসুফ বলেন, রাজউক টাকা খাওয়ার ধান্দায় চিঠি দিয়েছে। আমরা টাকা দেইনি তাই বন্ধের নির্দেশ। রাজউকের কথায় কি প্রজেক্ট বন্ধ হয়! বলে ফোন কেটে দেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
পরিবেশবিদ ড. শামসুল আলম খন্দকার বলেন, এভাবে অন্যের জমি ভরাট করে প্রকল্প বানানো অবৈধ। রাজউক বন্ধ করেছে—যারা টাকা বিনিয়োগ করেছেন তাদের টাকা ফেরত নেওয়ার এখনই সময়।
ব্যারিস্টার এস টি এম হুমায়ুন আহমেদ বলেন, নর্থ সাউথ গ্রুপের সব প্রকল্পই একে একে বন্ধ হচ্ছে। এরা নতুন ফাঁদ পাতছে, তাই কেউ আর বিনিয়োগ করবেন না।
সাবেক বিচারপতি জাফর ইকবাল হোসেন জানান, রাজউক মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র দিলে শিগগিরই রাষ্ট্রীয়ভাবে তদন্ত করে নর্থ সাউথ গ্রুপের সব অবৈধ প্রকল্প রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার দাবি
আইন-শৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত কোম্পানির চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সব পরিচালক যেন দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে না পারে, সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। তাদের বিদেশ যাত্রা নিষিদ্ধ করা না হলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে স্থায়ী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ক্রেতাদের কান্না
প্রবাসীদের কষ্টের টাকা থেকে শুরু করে কৃষিজমি বিক্রি করে অনেকেই কোটি কোটি টাকা ঢেলেছেন। এখন সেই পরিবারগুলো পথে বসার উপক্রম। ভুক্তভোগীরা বলেন, রাজউক অনুমোদন আছে বলে প্লট কিনেছি। এখন বুঝি সবই নাটক! মুখে বললে হবে না, রাষ্ট্রকে আমাদের টাকা ফেরত দিতে হবে।
সতর্কবার্তা
বন্ধ ঘোষিত প্রকল্পে নতুন করে বিনিয়োগ না করার জন্য সবাইকে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অফিস লাইসেন্স কোনো প্রকল্প অনুমোদন নয়। প্রতারণার শিকার হলে আইনজীবীর শরণাপন্ন হয়ে টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবাসন সংবাদ
রিহ্যাবের আধুনিক ভবন নির্মাণে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওনাল অফিসে রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান হাজী দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সিডিএ কর্তৃক প্রস্তাবিত মাস্টারপ্ল্যান সম্পর্কে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা প্রদান বিষয়ে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা সম্বলিত সুপরিকল্পিত বিশ্বমানের আধুনিক ভবন নির্মাণে রিহ্যাব সদস্যবৃন্দ বদ্ধপরিকর। এ জন্য সিডিএসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সহযোগীতা কামনা করা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের পরিচালক ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির কো-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোরশেদুল হাসান, রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির সদস্য সৈয়দ ইরফানুল আলম, নূর উদ্দীন আহাম্মদ, শারিস্থ বিনতে নূর, মোঃ মাঈনুল হাসান, রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিয়নের সিডিএ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটির উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার এস. এম আবু সুফিয়ান, উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন, রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওনাল সদস্যবৃন্দ এবং রিহ্যাব সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রকৌশলী ও স্থপতিবৃন্দ।
অর্থ ও বাণিজ্য
ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মুনাফা বেড়েছে ২১ কোটি টাকা

দেশের আবাসন খাতের কোম্পানি ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মুনাফা সাড়ে ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি গত জুনে সমাপ্ত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ৭৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তার আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মুনাফা ২১ কোটি টাকা বা সাড়ে ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইস্টার্ন হাউজিং গতকাল মঙ্গলবার তাদের পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত অর্থবছরের আর্থিক বিবরণী চূড়ান্ত করার মাধ্যমে মুনাফার এই হিসাব দিয়েছে। একই সভা থেকে কোম্পানিটি গত অর্থবছরের জন্য শেয়ারধারীদের ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তার আগের অর্থবছরে কোম্পানিটি ১৯ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। সেই হিসাবে গত অর্থবছরে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মুনাফা ও লভ্যাংশ উভয়ই বেড়েছে।
কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে চূড়ান্ত করা মুনাফা ও লভ্যাংশের তথ্য আজ বুধবার স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোম্পানিটি জানিয়েছে, গত অর্থবছরের জন্য তারা শেয়ারধারীদের প্রতি শেয়ারের বিপরীতে আড়াই টাকা (২৫ শতাংশ) করে লভ্যাংশ দেবে। বর্তমানে শেয়ারধারীদের হাতে কোম্পানিটির যে শেয়ার রয়েছে তার বিপরীতে লভ্যাংশ বাবদ কোম্পানিটিকে ২৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বিতরণ করতে হবে। আগের অর্থবছরে (২০২৩–২৪) কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ১৯ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তাতে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে একেকজন শেয়ারধারী ১ টাকা ৯০ পয়সা করে পেয়েছিলেন। ওই বছর ঘোষিত লভ্যাংশ বাবদ কোম্পানিটিকে বিতরণ করেছিল প্রায় ১৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের জন্য লভ্যাংশ বাবদ ৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করবে কোম্পানিটি। লভ্যাংশ বাবদ বাড়তি এই ব্যয়ের জোগান আসছে বাড়তি মুনাফা থেকে। কারণ, এক বছরে কোম্পানিটির মুনাফা ২১ কোটি টাকা বেড়েছে।
এদিকে মুনাফা ও লভ্যাংশ বৃদ্ধির খবরে আজ শেয়ারবাজারে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ারের দামও ঊর্ধ্বমুখী ছিল লেনদেনের শুরু থেকে। প্রথম দেড় ঘণ্টার লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২ টাকা বা সোয়া ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ টাকায়। এ সময় কোম্পানিটির ৮ লাখের বেশি শেয়ারের হাতবদল হয়, যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা।
-
বিবিধ2 years ago
বাংলাদেশে প্রচলিত বাড়ি ভাড়ার চুক্তি, নিয়ম ও নীতিমালা
-
নির্বাচিত প্রতিবেদন1 year ago
রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করবেন যেভাবে
-
আবাসন সংবাদ4 weeks ago
সীমান্ত রিয়েল এস্টেট এর অনুমোদনহীন সীমান্ত সিটি ও সীমান্ত কান্ট্রি প্রকল্প
-
আবাসন সংবাদ1 month ago
মাত্র ২৪ ঘন্টায় খতিয়ানের ভূল সংশোধনের সরকারি নির্দেশনা
-
ফিচার4 weeks ago
প্রথম ফ্ল্যাট কিনে ঠকতে না চাইলে মেনে চলুন এই ১০ কৌশল
-
আইন-কানুন1 year ago
রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের সাথে জমি বা ফ্ল্যাট নিয়ে সমস্যা ও তার প্রতিকার (১ম পর্ব)
-
আবাসন সংবাদ1 month ago
প্রিমিয়াম হোল্ডিংয়ের বর্ষপূর্তিতে ৩ দিনব্যাপী একক আবাসন মেলা অনুষ্ঠিত
-
আবাসন সংবাদ4 weeks ago
ডম-ইনো এফেক্ট: ফ্ল্যাট ক্রেতারা প্রতারিত, প্রকল্পগুলো পরিত্যক্ত