কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী সময়ে ক্রমাগত বেড়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর্যটন খাত। দর্শনার্থীদের জন্য বর্ধিত সুবিধা, টেকসই অবকাঠামো ও অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং বিনিয়োগের আকর্ষণে নানা পদক্ষেপ দেশটির পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করেছে, যা উপসাগরীয় অঞ্চলে জ্বালানি তেলনির্ভরতা কাটিয়ে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইউএইর মতো সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশও তাদের অর্থনীতিকে জ্বালানি তেলনির্ভরতা থেকে বের করে আনতে নানা খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এক্ষেত্রে শীর্ষ অগ্রাধিকার পাচ্ছে পর্যটন খাত।
সরকারি তথ্যমতে, ২০২৩ সালে সৌদি আরবের পর্যটন খাত ১০ কোটি ৬০ লাখের বেশি পর্যটককে আতিথেয়তা দিয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। আর ২০১৯ সালের তুলনায় ৫৬ শতাংশ বেশি। এ পর্যটকদের মধ্যে ২ কোটি ৭৪ লাখ ছিল বিদেশী নাগরিক।
এদিকে দুবাই গত বছর রেকর্ড ১ কোটি ৭২ লাখ বিদেশী পর্যটক আকর্ষণ করেছিল, যা প্রতি বছর প্রায় ২০ শতাংশ করে বেড়েছে। সেই সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্য দেশগুলোও ২০২৩ সালে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটক সংখ্যার শক্তিশালী বৃদ্ধির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
গত বছরের প্রথম নয় মাসে দুবাই ও কাতার উভয় ক্ষেত্রেই আতিথেয়তা সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল খাত ছিল। এ খাতে দ্বিগুণ অংকের বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। বাহরাইনে আতিথেয়তা ছিল পরিবহনের পরে দ্বিতীয় দ্রুতবর্ধনশীল খাত।
সেই সঙ্গে তুলনামূলকভাবে শ্রমনিবিড় খাত হিসেবে পর্যটন ও আতিথেয়তা এমন একটি অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মূল উৎসে পরিণত হচ্ছে দেশটিতে। সৌদি আরবের পর্যটনমন্ত্রী গত বছরের শেষে বলেছিলেন, সৌদি আরব ২০১৯-২৩ পর্যন্ত নতুন করে প্রায় আড়াই লাখ লোকের কর্মসংস্থান করেছে।
সৌদি আরব ২০৩০ সালের মধ্যে রাজ্যে আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের সংখ্যা দ্বিগুণ করে সাত কোটিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে। এছাড়া দেশটি দশকের শেষ নাগাদ সামগ্রিক পর্যটনকে ১৫ কোটিতে উন্নীত করার প্রয়াস করছে। এ প্রবৃদ্ধি পর্যটন খাতে আরো ১৩ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একইভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে পর্যটনের জন্য উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। গত সপ্তাহের অ্যারাবিয়ান ট্র্যাভেল মার্কেটে একটি নতুন শেনজেন স্টাইল ইউনিফাইড জিসিসি ভিসার বিবরণ ঘোষণা করা হয়। সেখানে ভ্রমণকারীদের একটি পারমিট নিয়ে ছয়টি জিসিসি দেশকে পরিদর্শনের অনুমতি দেয়া হবে। উদ্যোগটি ২০৩০ সালের মধ্যে আঞ্চলিক পর্যটনকে ১২ কোটি ৮৭ লাখে উন্নীত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সৌদি আরব পর্যটন অবকাঠামোয় আগামী ১০ বছরে ৮০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। দুবাই সম্প্রতি আল মাকতুম বিমানবন্দর সম্প্রসারণের ঘোষণা করেছে। যার খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর্যটন সমৃদ্ধ হচ্ছে, উভয় দেশই তাদের ভ্রমণ পরিষেবার ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত দেখছে। এ বৃদ্ধি উপসাগরীয় অঞ্চলে বৃহত্তর অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ প্রচেষ্টার অংশ, যার লক্ষ্য তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমানো। সূত্র: দ্য ন্যাশনাল নিউজ।