বিদেশ থেকে আসা বিনিয়োগের দিকে সম্প্রতি নজরদারি বাড়িয়েছে সিঙ্গাপুর। এ নজরদারি এড়াতে অনেক বিনিয়োগকারী এখন বিকল্প গন্তব্যের খোঁজে রয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ চীন থেকে আসা ধনকুবের, তাদের অনেকেই হংকংয়ে পা ফেলতে শুরু করেছেন। এখন হংকংও তাদের স্বাগত জানাচ্ছে।
গবেষণা সংস্থা নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ ও অভিবাসন বিষয়ে পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে প্রায় ২০০ ধনকুবের হংকংয়ে ফিরবেন। যদিও গত পাঁচ বছর এ ব্যক্তিদের চীনের এ বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল এড়িয়ে চলতে দেখা গেছে।
নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ ও হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স মনে করে, চীনের ধনীদের হংকংয়ে ফিরে আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে সিঙ্গাপুরের নতুন কিছু নীতিমালা, যেখানে বিদেশী বিনিয়োগের উৎসের বৈধতা নিয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কারণ ৩০০ কোটি ডলার পাচারের একটি অভিযোগ সিঙ্গাপুর সরকারকে চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে।
চীনের ধনকুবেররা সিঙ্গাপুরে ভিড়তে শুরু করেন মূলত কভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর থেকে, যখন হংকংয়ে কঠোর কোয়ারেন্টাইনের পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল। কিন্তু বর্তমানে অনেক বেসরকারি ব্যাংকার, সার্ভিস প্রোভাইডার ও বীমাকারী বলছেন, হংকংয়ের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে; যেখানে সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের আইনকানুন ধীরে ধীরে কঠোর হওয়ায় অনেকের বিনিয়োগ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি হংকংয়ের অর্থমন্ত্রী পল শান জানান, দেশটিতে ২০২৩ সালে অ্যাসেট আন্ডার ম্যানেজমেন্টের (এইউএম) পরিমাণ ২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে। এ পরিবর্তন এসেছে মূলত বেসরকারি ব্যাংক ও ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ আসার কারণে। ২০২৩ সালে দেশটিতে এ দুই খাতে বিনিয়োগ প্রায় তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলারে। যদিও আগের বছরের চিত্র ছিল বিপরীত। ২০২২ সালে বেসরকারি ব্যাংক ও ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট খাতের বিনিয়োগ ছিল আগের বছরের চেয়ে ৮০ শতাংশ কম।
অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের ব্যাংকাররা বলছেন, সেখানে অর্থ পাচার কেলেঙ্কারির প্রভাবে গ্রাহকদের তথ্য-উপাত্ত যাচাইয়ের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে। চীনের ধনকুবেররা নজরদারির মধ্যে পড়ে গেছেন। অনেক গ্রাহক নতুন পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সিঙ্গাপুরের মনিটারি অথরিটি গত এপ্রিলে একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম চালু করে, যেখানে গ্রাহকদের বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মূলত অর্থ পাচার ঠেকাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. চেন ঝিউ বলেছেন, ‘চীনের অনেক ধনকুবের চান না যে তাদের ব্যক্তিগত অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠুক কিংবা এতে কোনো সরকার হস্তক্ষেপ করুক। এ কারণে তারা তাদের অর্থ অন্য কোনো দেশে স্থানান্তর করতে চান। এখন সিঙ্গাপুর সরকারও যদি একই কাজ করে, তাহলে কেন চীনের ধনীরা সেখানে বিনিয়োগ করতে যাবে?’
বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় দুটি ব্যাংকের হিসাব বলছে, চীনের এমন অনেক গ্রুপ রয়েছে, যাদের হংকংয়ের বাজারে ব্যবসার পরিধি বাড়ছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরে একই গ্রুপের ব্যবসা সংকুচিত হয়ে আসছে। এর অর্থ হলো সিঙ্গাপুরে বিদেশী বিনিয়োগের প্রবাহ কমে যাচ্ছে।
চীনের সঙ্গে হংকংয়ের একটি সীমান্ত ২০২৩ সালে নতুন করে চালু হয়। এ ঘটনার ইতিবাচক প্রভাবও হংকংয়ের অর্থনীতিতে পড়েছে। কারণ শক্তিশালী রেল যোগাযোগ থাকায় ওই সীমান্ত দিয়ে সহজেই চীনের শেনঝেন শহরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। চীনের ধনীরা এখন অনায়াসেই তাদের হংকংয়ের ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করতে পারছেন। সূত্র: দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।