আবাসন সংবাদ
রিহ্যাবের আবাসন মেলায় ফ্ল্যাটের ছড়াছড়ি, এক ছাদের নীচেই মিলছে ঋণও
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে (বিআইসিসি) শুরু হয়েছে আবাসন খাতের সবচেয়ে বড় মেলা ‘রিহ্যাব ফেয়ার-২০২৪’। গতকাল সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) জমকালো আয়োজনে এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে ২২০টি স্টল, যেখানে উপস্থিত রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় আবাসন কোম্পানি, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, নির্মাণসামগ্রী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
বিভিন্ন আবাসন কোম্পানিগুলো মেলা উপলক্ষে বিশেষ ছাড়ে ফ্ল্যাট বুকিং দিচ্ছে এবং একই সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে বিশেষ গৃহঋণের সুবিধা।
একাধিক স্টল এবং দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিরপুর, মোহাম্মদপুর এবং আফতাবনগর এলাকার ফ্ল্যাটের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। ছোট থেকে মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট, বিশেষত ১১০০ থেকে ১৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের চাহিদা তুলনামূলক বেশি।
রকিবুল নামে একজন ব্যবসায়ী এসেছিলেন উত্তরা থেকে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী। মিরপুর বা আশপাশের এলাকা তাঁর পছন্দের। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মেট্রোরেল চলাচলের কারণে এখান থেকে যাতায়াত তুলনামূলক সহজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এলিফ্যান্ট রোড এলাকা থেকে এসেছেন। পেশায় তিনি ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি জানান, মোহাম্মদপুর এলাকায় ছোট আকারের ফ্ল্যাট কিনতে চান তিনি। ব্যাংক থেকে বিশেষ ঋণ সুবিধায় তিনি এটি কিনবেন বলেও জানান।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়, ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিহ্যাবের এটি ২৬ তম আয়োজন। ক্রেতাদের সাড়া এখন পর্যন্ত তুলনামূলক খুব একটা বেশি নয়। তবে আগামীকাল, ২৫ ডিসেম্বর এবং ২৭ ডিসেম্বর ছুটির দিনগুলোতে ভিড় বাড়বে বলে আশা করেন তাঁরা।
রিহ্যাব ফেয়ার-২০২৪ চলবে আগামী ২৭ ডিসেম্বর,শুক্রবার পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা উন্মুক্ত থাকবে। দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ টিকিটের মূল্য রাখা হয়েছে ৫০ টাকা।
ফ্ল্যাটের খোঁজখবর
র্যাংগস প্রোপার্টিজ ১৫টি আবাসন ও ১০টি বাণিজ্যিক প্রকল্প নিয়ে এসেছে মেলায়। ধানমন্ডি, বসুন্ধরা, বনানী, মিরপুর, উত্তরা ও লালমাটিয়ায় তাদের ১ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ৭০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রতি বর্গফুটের দাম ১০ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা। অন্যদিকে মিরপুর, ধানমন্ডি, গুলশান ও উত্তরায় তাদের প্রতি বর্গফুট বাণিজ্যিক স্পেস বা জায়গার দাম ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
রিহ্যাবের পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলায় র্যাংগসের স্টল। আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে
রিহ্যাবের পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলায় র্যাংগসের স্টল। আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রেছবি: প্রথম আলো
র্যাংগস প্রোপার্টিজের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কে এম স্বপ্নিক মাহমুদ বলেন, মেলায় বুকিং দিলে ক্রেতারা মূল্যছাড় পাবেন। অধিকাংশ ক্রেতা পরিস্থিতি বুঝতে চাইছেন। বর্তমানে কেবল নিজেদের বসবাসের জন্য কমবেশি এক কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাটের চাহিদা আছে।
শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠান শেলটেক মেলায় ৫০টি আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রকল্প নিয়ে এসেছে। রাজধানীর জলসিঁড়ি আবাসন, উত্তরা, বনানী, বসুন্ধরা, আদাবর, মগবাজার, মালিবাগ, মধ্য বাড্ডা, কাঁঠালবাগান, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া ও ইস্কাটনে প্রকল্পগুলো গড়ে উঠছে। এসব প্রকল্পে ৯৭১ থেকে ২ হাজার ৮০১ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রতি বর্গফুটের দাম ৯ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২৮ হাজার ৯০০ টাকা।
শেলটেকের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফ হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই বেচাবিক্রিতে স্থবিরতা চলছে। আশা করছি, রিহ্যাব মেলার মাধ্যমে ফ্ল্যাটের বেচাবিক্রি বাড়বে।’ তিনি জানান, মেলায় ফ্ল্যাটের বুকিং দিলে শেলটেক সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যছাড় দেবে১১০ উদীয়মান প্রতিষ্ঠান ক্রিডেন্স হাউজিং ৫৪টি আবাসন প্রকল্পের ফ্ল্যাট নিয়ে এসেছে। ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, কলাবাগান, সিদ্ধেশ্বরী, উত্তরা, হুমায়ুন রোড, বেইলি রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা এসব প্রকল্পে ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট আছে।
ক্রিডেন্সের চিফ ডিজাইন কো-অর্ডিনেটর মেহেদি হাসান বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা ও ঠিকাদাররা ফ্ল্যাট কিনছে না। তাঁরাই নতুন প্রকল্পে বেশি বিনিয়োগ করতেন। বর্তমানে চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের মতো পেশাজীবীরা ফ্ল্যাট কিনছেন।
শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ট্রপিক্যাল হোমস ২৫টি আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রকল্প নিয়ে এসেছে। তাদের আবাসিক প্রকল্পগুলোয় অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা ৫৪০। এর মধ্যে ২০০টি বিক্রয়যোগ্য। তবে প্রতিষ্ঠানটির স্টলে থাকা ৪৫ তলা বাণিজ্যিক ভবনের নকশা সবার নজর কাড়ছে। মালিবাগে ৪৬ কাঠা জমির ওপর ভবনটি গড়ে তুলছে প্রতিষ্ঠানটি।
রিহ্যাবের পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলায় ট্রপিক্যাল হোমসের স্টল। আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে
রিহ্যাবের পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলায় ট্রপিক্যাল হোমসের স্টল। আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রেছবি: প্রথম আলো
ট্রপিক্যাল হোমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ রবিউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪৫ তলা ভবনটি দেশের সবচেয়ে উঁচু ভবন হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে এটির নির্মাণকাজ শেষ হবে। এটি আমাদের স্বপ্নের প্রকল্প।’ ট্রপিক্যাল হোমস ভবিষ্যতে ১০০ তলা ভবন করতে চায় বলেও জানান তিনি।
আবাসন সংবাদ
ভূমিকম্পে ঢাকার বড় বিপদ স্পষ্ট হচ্ছে
ভূমিকম্পে রাজধানী শহর ঢাকার বড় বিপদের ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের নৈকট্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রাণহানির ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে এমন মত দিয়েছেন ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা।
গত শুক্র ও গতকাল শনিবার প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশে চারটি ভূমিকম্পের ঘটনা এমন ঝুঁকির বিষয়টি সামনে এনেছে। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎস ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে।
ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎপত্তিস্থলের গভীরতা যত কম হবে, তত বেশি ঝাঁকুনি হবে। শুক্রবারের ভূকম্পনের তীব্রতা ছিল স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তীব্র ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। এ ভূমিকম্পের ঘটনায় শিশুসহ ১০ জন নিহত হন। আহত হন ৬ শতাধিক মানুষ।
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে গতকাল সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার এবং সাড়ে সাত ঘণ্টার পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আরও একটি ভূমিকম্প হয়, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। এ ভূমিকম্প দুটোরই উৎপত্তি ছিল নরসিংদী। সন্ধ্যায় কাছাকাছি সময়ে আরও একটি ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডা; যার মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭।
এসব মৃদু ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পকে বড় ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন ভূমিকম্প ঢাকার ঝুঁকি কতটা স্পষ্ট করছে, তা বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিগত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের নথিভুক্ত ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়ে ৩৯টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভেতরে। এর মধ্যে ১১টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৮৬ কিলোমিটার এলাকার ভেতরে। অর্থাৎ ২৮ শতাংশের বেশি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে। এসব ভূমিকম্পের মাত্রা ৩ দশমিক ৩ থেকে ৫ দশমিক ৭। এর মধ্যে শুক্রবার নরসিংদীতে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রার (৫ দশমিক ৬) ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ঢাকার ১০০ থেকে ২৬৭ কিলোমিটারের মধ্যে বাকি ২৮টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল।
পাঁচ বছরে ১৮ জেলায় ভূমিকম্প হয়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট, নেত্রকোনা, দিনাজপুর, হবিগঞ্জ, রংপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, পাবনা, হবিগঞ্জ, রাঙামাটি, চুয়াডাঙ্গা, শরীয়তপুর, যশোর ও কুড়িগ্রাম।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রে একসময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন মো. মমিনুল ইসলাম। এখন তিনি আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নরসিংদীতে এর আগেও ভূমিকম্প হয়েছে। তবে মাত্রা ছিল কম। বাংলাদেশের সীমান্তে তিনটি টেকটনিক প্লেট আছে। এই তিনটি প্লেটই সক্রিয়। প্রতিনিয়ত এখানে ছোট ছোট ভূমিকম্প হচ্ছে। প্লেট বাউন্ডারির পাশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকে।
মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, নরসিংদীতে একটি সাব-ফল্ট রয়েছে। নরসিংদীতে আগে ছোট ভূমিকম্প হলেও গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এখন বোঝা যাচ্ছে, এই সাব-ফল্ট অনেক বড়। এটা ঢাকার কাছ পর্যন্ত চলে এসেছে। এই ভূমিকম্প প্রমাণ করল ঢাকা বড় ঝুঁকির মধ্যে।
বেশি ভূমিকম্প রাতে
গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে হওয়া ৩৯টি ভূমিকম্প কোন সময় হয়েছে, সেটিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশ্লেষণে এসেছে। এতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ভূমিকম্প হয়েছে রাতে। যেমন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সময়ে ভূমিকম্প হয়েছে ২৩টি। বাকি ১৬টি ভূমিকম্প হয়েছে দিনের বেলায় (ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা)।
রাতে বেশির ভাগ মানুষ ঘুমিয়ে অথবা বাসায় থাকে। এমন সময়ে ভূমিকম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা বেশি থাকে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, যে পরিমাণ ভূমিকম্পের শক্তি সাবডাকশন জোনে (দুটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থল) পুঞ্জীভূত হয়ে আছে, তার ১ শতাংশের কম নির্গত হয়েছে। ফলে বারবার হওয়া এই ভূকম্পগুলো বড় একটি ভূমিকম্পের পথ খুলে দিয়েছে।
অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর ‘আফটার শক’ হবে, এমনটা আগেই ধারণা করা হয়েছিল। তবে আফটার শকগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ভূ-অভ্যন্তরের যে ফাটল বা ফল্ট লাইনটি এত দিন ধরে প্রচণ্ড চাপে একে অপরের সঙ্গে আটকে ছিল, তা নড়তে শুরু করেছে এবং শক্তি নির্গমনের একটি প্রক্রিয়া চালু করেছে। এমন আফটার শক হতে হতে বড় ভূমিকম্প হবে। সেটা খুবই নিকটে হতে পারে।
ঝুঁকির চার কারণ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব হাসান চারটি কারণে ঢাকার বিপদটা স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উৎপত্তিস্থল থেকে ঢাকার নৈকট্য একটা কারণ। ঢাকার কাছে এ ফল্টটা সম্পর্কে এত স্পষ্ট ধারণা ছিল না। সেটা এখন খুলতে শুরু করেছে। যার প্রভাবে সামনে আরও ভূমিকম্প হতে পারে।
মাটির গঠনকে দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উল্লেখ করে রাকিব হাসান বলেন, ঢাকার নতুন অংশগুলো খুব নিচু জায়গায় মাটি ভরাট করে গড়ে উঠেছে। এমন অঞ্চলে ভূমিকম্পের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। তৃতীয়ত, ঢাকার ভবনগুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ডিজাইন কোড মেনে হচ্ছে না। চার নম্বর হলো ঢাকা শহরের জনঘনত্ব। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে।
প্রস্তুতি কেমন
২০১৬ সালে ভূমিকম্পের প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলার অংশ হিসেবে ন্যাশনাল অপারেশন সেন্টার নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি হলেও গত এক দশকে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ সেন্টার নির্মাণে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় জায়গাও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব আবু দাউদ মো. গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, তেজগাঁওয়ে এক একর জায়গা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভবন নির্মাণ করতে গেলে নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য কমপক্ষে আরও ২৫ বর্গমিটার জায়গা থাকা দরকার। সেটা পাওয়া যায়নি।
দুর্যোগের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগের জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। বড় দুর্যোগের ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসকে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন সংস্থার জন্য আরও সরঞ্জাম সংগ্রহের কাজ চলমান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে আমরা সে সংগ্রহ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা উপকূলে আমাদের ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক আছেন। নগরে আছে ৪৮ হাজার। তাঁদের যুক্ত করে মানুষকে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতন করার কাজ শুরু করব।’
তবে প্রস্তুতি ও করণীয় দিকগুলো যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন দুর্যোগ ফোরামের সদস্যসচিব গওহর নঈম ওয়ারা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জেলা পর্যায়ে চিঠি দিয়েছে দুর্যোগের তথ্য দেওয়ার জন্য। এ ধরনের দুর্যোগে এমনিতে তথ্য আসার কথা। সেটার জন্য চিঠি দিতে হবে কেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নরসিংদীর দুর্যোগের তথ্য আসতে লেগেছে এক দিনের বেশি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারের জায়গা নেই জানিয়ে গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, যে দেশগুলো স্থানীয় সরকারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, তারা দুর্যোগ মোকাবিলায় এগিয়ে আছে। দুর্যোগ নিয়ে সচেতনতার বিষয়টি পাঠ্যসূচিতে থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে ছাত্ররা লাফিয়ে পড়েছে। এ রকম কেন হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব চর্চা করায় না। এটা স্কুল থেকে শেখাতে হবে।
আবাসন সংবাদ
ভূমিকম্প-পরবর্তী জরুরি পরিস্থিতি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ দিন বন্ধ ঘোষণা
ভূমিকম্প–পরবর্তী উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতিতে আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়ালি এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্প ও পরাঘাতের কারণে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক আঘাতের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি তাঁদের সার্বিক নিরাপত্তার দিক সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সভায় বুয়েটের বিশেষজ্ঞ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের পরিচালক এবং প্রধান প্রকৌশলীর মতামত বিশ্লেষণ করা হয়। তাঁরা ভূমিকম্প–পরবর্তী আবাসিক হলগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সামগ্রিক ঝুঁকি মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার বলে মতামত দেন। ঝুঁকি নিরূপণ ও সম্ভাব্য সংস্কারের স্বার্থে আবাসিক হলগুলো খালি করার কথাও বলেন তাঁরা।
এ পটভূমিতে সভায় আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা এবং আবাসিক হলগুলো খালি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই আগামীকাল বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছেড়ে যেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রাধ্যক্ষদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
তবে বন্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসগুলো যথারীতি খোলা থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এর আগে আজ রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছিল।
-
বিবিধ2 years agoবাংলাদেশে প্রচলিত বাড়ি ভাড়ার চুক্তি, নিয়ম ও নীতিমালা
-
নির্বাচিত প্রতিবেদন2 years agoরিয়েল এস্টেট ব্যবসা করবেন যেভাবে
-
আবাসন সংবাদ2 months agoরাজউকের নির্দেশে নর্থ সাউথ গ্রীন সিটি বন্ধ
-
আইন-কানুন2 months agoদলিলে লেখা এসব শব্দের অর্থ জেনে রাখুন, নাহলে পড়তে পারেন আইনি জটিলতায়
-
আবাসন সংবাদ2 months agoসীমান্ত রিয়েল এস্টেট এর অনুমোদনহীন সীমান্ত সিটি ও সীমান্ত কান্ট্রি প্রকল্প
-
আইন-কানুন2 years agoরিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের সাথে জমি বা ফ্ল্যাট নিয়ে সমস্যা ও তার প্রতিকার (১ম পর্ব)
-
আবাসন সংবাদ2 months agoপ্রিমিয়াম হোল্ডিংয়ের বর্ষপূর্তিতে ৩ দিনব্যাপী একক আবাসন মেলা অনুষ্ঠিত
-
আবাসন সংবাদ11 months agoবন্ধ হচ্ছে অবৈধ আবাসন প্রকল্প
