আমরা অনেকেই ঢাকা বা ঢাকার বাইরে নিজের জন্য নিরাপদ ও আবাসযোগ্য একটি সুন্দর ফ্ল্যাট কিনতে চাই। কিন্তু কিছু বিষয় খেয়াল না করে ফ্ল্যাট বুকিং দিয়ে বা ফ্ল্যাট কিনে বিপদে পড়ি। তাই ফ্ল্যাট কেনার আগে যে বিষয়গুলো একজন ফ্ল্যাট ক্রেতাকে ভালোভাবে বুঝতে হবে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।
>> যদি আপনি নিদ্ধান্ত নেন যে, ফ্ল্যাট ক্রয় করবেন, তাহলে যে ডেভেলপারের কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি কিনবেন, আগে যাচাই করুন, সেই ডেভেলপারের এপার্টেমেন্ট বিল্ডিংটি নির্মাণ কাজ শেষ করার মতো সামর্থ্য আছে কি না। সেটি বুঝতে হলে, একটু বুদ্ধি খাটিয়ে ফ্ল্যাট বুকিং দেওয়ার আগেই ডেভেলপারের অফিসে যান। টেকনিক করে ঐ ডেভেলপারের কোন ব্যাংকে একাউন্ট আছে, সেটি জেনে খোঁজ নিন, পর্যাপ্ত টাকা আছে কি না।
>>অথবা সেই ডেভেলপারের রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ছাড়াও আরো অন্য কোন ব্যবসা আছে কি না। সেই সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও প্রয়োজনে যান। কারণ, অধিকাংশ ডেভেলপার বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কাছে ফ্ল্যাট বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ করতে চায়। আর, এক্ষেত্রে কোন কারণে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে না পারলে, নির্মাণ কাজ মাঝপথে এসে থেমে যায়। এতে বিপদে পরতে হয় ফ্ল্যাট ক্রেতাসহ জমির মালিককে।
>>ফ্ল্যাট বুকিং দেওয়ার আগে, একজন উকিল নিয়ে ডেভেলপারের অফিসে গিয়ে যে জায়গার ফ্ল্যাটটি কিনতে চান, সেই জায়গার জমির সকল কাগজপত্র চেক করান। ডেভেলপারকে বুঝতে দিবেন না যে, আপনার সাথে আসা লোকটি একজন উকিল। কারণ, ঢাকা শহরের বেশির ভাগ জমির কাগজপত্রে ভেজাল থাকে আর এইসব ভেজালের কারণে পরবর্তীতে ডেভেলপারের পাশাপাশি ফ্ল্যাটক্রেতাকেও বিপদে পড়তে হয়। নিজের সারা জীবনের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনে আপনি বিপদে কেন পড়বেন।
>> যে প্রজেক্টটি থেকে ফ্ল্যাট ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই প্রজেক্টটি রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) কর্তৃক প্ল্যান পাস হয়েছে কি না, তা যাচাই করবেন। বর্তমানে রাজউক নিয়ম করেছে, প্রজেক্ট স্থলের সাইনবোর্ডে অবশ্যই রাজউকের স্মারক নাম্বার থাকতে হবে। ব্রশিয়্যারেও রাজউকের স্মারক নাম্বার থাকতে হবে। এছাড়াও নির্মাণ কাজ শুরুর আগে প্রজেক্ট স্থলে একটি সাইনবোর্ড থাকতে হবে ৫ফিট বাই ৩ফিট। সেখানে “ভবন নির্মাণ সম্পর্কিত তথ্যাদি” লেখা থাকবে।
>>যেমন, কাজ আরম্ভের তারিখ, শেষ করার তারিখ ইত্যাদি। সেই সাইনবোর্ডটিও সাইটে টানানো আছে কি না দেখুন। যদি না থাকে, তাহলে আপনার ঐ প্রজেক্ট থেকে ফ্ল্যাট না কেনাই ভাল। অথবা যদি কিনতেই চান, তাহলে ডেভেলপারকে জিজ্ঞেস করুন, তা নেই কেন? আর যদি রাজউক থেকে প্ল্যান পাসের স্মারক নাম্বারটি সাইনবোর্ডে পান, তাহলে অনলাইনেও যাচাই করতে পারেন, সেটি সঠিক কি না বা কত তলার প্ল্যান রাজউক থেকে দিয়েছে।
>> ফ্ল্যাট কেনার আগে জেনে নিন, প্রজেক্টটি “জমির মালিক ও ডেভেলপার” মিলে যৌথ মালিকানায় বা জয়েন্ট ভেঞ্চারে হচ্ছে কি না। যদি জয়েন্ট ভেঞ্চারে হয়, তাহলে ফ্ল্যাট ক্রেতাদের সুবিধাই বেশি। কারণ, একজন ফ্ল্যাট ক্রেতা একটি বা দুটি ফ্ল্যাট কিনে সাধারনত। কিন্তু জমির মালিক বর্তমানের প্রচলিত রেশিও তে প্রজেক্টের প্রায় অর্ধেক ফ্ল্যাটের মালিক হয়। সেক্ষেত্রে এপার্টমেন্টটি নির্মাণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জমির মালিকের পূর্ণ তদারকি থাকে। তাই যৌথ মালিকানায় নির্মিত এপার্টমেন্ট প্রজেক্ট থেকে ফ্ল্যাট ক্রয় করাই অধিকতর ভাল।
>> যৌথ মালিকানায় নির্মিত প্রজেক্ট থেকে ফ্ল্যাট কেনার আগে প্রজেক্ট স্থলে গিয়ে কিংবা টেকনিক খাটিয়ে ডেভেলপারের কাছ থেকে জমির মালিকের ঠিকানা নিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। উনার সাথে আলাপ করেও জমির ব্যাপারে কিংবা ডেভেলপারের ব্যপারে অনেক তথ্য জানতে পারবেন। সর্বোপরি, জমির মালিক বা মালিকগণ কেমন তাও বুঝতে পারবেন। সারা জীবন একসাথে থাকতে হবে- তাই জমির মালিক বা মালিকগণ কোন ক্যাটাগরির তা জানা ভাল।
>> যদি আপনি পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন যে, অমুক প্রজেক্ট থেকেই ফ্ল্যাট ক্রয় করবেন, তাহলে টোকেন মানি বা বুকিং মানি দেওয়ার আগে আপনি চেষ্টা করুন, ঐ জায়গাটির জমি সংক্রান্ত কাগজপত্রের একসেট ফটোকপি নিতে। সাধারনত, ফ্ল্যাট বুকিং দেওয়ার আগে কোন ডেভেলপারই কোন ক্লাইন্টকে তা দিতে রাজি হবে না, সেক্ষেত্রে ঐ কোম্পানির কোন সেলস্ এক্সিকিউটিভকে বা লিগ্যাল এক্সিকিউটিভকে ম্যানেজ করে, ফটোকপির টাকা দিয়ে হলেও তা ম্যানেজ করতে চেষ্টা করুন। তাও না পারলে, জমির মালিককে পটিয়ে একসেট ফটোকপি জোগাড় করুন।
>> উকিলকে দেখানো সত্ত্বেও আপনি নিজে ঐ কাগজ থেকে পর্চাগুলো ( সিএস, এসএ, আরএস, বিএস/সিটি জরীপ পর্চা) নিয়ে ঐ প্রজেক্টটি যে ভূমি অফিসের তত্ত্বাবধানে, সেই ভূমি অফিসে চলে যান। ভূমি অফিসের যে কোন কর্মচারীকে দুই চারশত টাকা দিলেই সে রেকর্ড পত্র দেখে আপনাকে জানিয়ে দিতে পারবে, জায়গায় কোন ঝামেলা আছে কি না। কাজগুলো একটু ঝামেলার মনে হলে, নিজেই ভাবুন, আপনার সারা জীবনের সঞ্চিত টাকা বা লোনের টাকায় ফ্ল্যাটটি কিনছেন। দেখবেন, তখন আর ঝামেলা মনে হবে না।
>>উকিলকে দেখানোর পরেও এ কাজটি নিজেকে করতে বললাম এ কারণে যে, উকিল সাহেবকে টাকার বিনিময়ে কাজ করাবেন। তিনি অধিক সময় দিয়ে আপনার কাগজগুলো যাচাই নাও করতে পারেন। আবার ডেভেলপার কাগজে কোন ঝামেলা থাকলে, ফটোকপিতে বা অফিসে রক্ষিত কাগজে তা ঠিকঠাক করে রাখতে পারেন যা একমাত্র ভূমি অফিসে এলেই আপনি জানতে পারবেন।
>> যদিও REHAB ( Real Estate & Housing Association of Bangladesh) বলে থাকে, রিহ্যাবের সদস্যভুক্ত কোম্পানী থেকে ফ্ল্যাট কিনতে এবং এতে অনেক সুবিধে হবে। একটি কথা ভেবে দেখুন, রিহ্যাব কাদের সংগঠন? রিয়েল এস্টেট কোম্পানীগুলোরই সংগঠন। একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানীকে রিহ্যাবের সদস্য হতে হলে এককালীন=৩,২৫,০০০/- টাকা দিতে হয় এবং বছরে সদস্য ফি হিসেবে=২৫,০০০/- টাকা করে সংগঠনকে দিতে হয়। এবার ভাবুন, রিহ্যাব আপনার কতটুকু স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজ করবে।