যুক্তরাজ্যে বন্ধকী ঋণের সুদহার দীর্ঘ সময় ধরে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও স্থানীয় আবাসন খাতে সম্পদের গড় মূল্য রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বৃহত্তম প্রপ্রার্টি ওয়েবসাইট রাইটমুভ।
প্রতিবেদনটিকে উদ্ধৃত করে দ্য গার্ডিয়ান বলছে, চলতি মে মাসে যুক্তরাজ্যে বাড়ির গড় মূল্য ৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৩১ পাউন্ডে পৌঁছেছে। নতুন প্রপ্রার্টির মূল্য এপ্রিলের তুলনায় দশমিক ৮ শতাংশ বা ২ হাজার ৮০৭ পাউন্ড বেড়েছে।
রাইটমুভের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের প্রথম চার মাসে বিক্রির হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি ছিল। গত বছর যারা বাড়ি কেনার পরিকল্পনা থেকে বিরত ছিলেন, তাদের অনেকেই আবাসন বাজারে চাহিদা বাড়াতে অবদান রেখেছেন। পাশাপাশি বাজারে নতুন ক্রেতা বেড়েছে।
সাধারণত যুক্তরাজ্যে আবাসন বাজারে মূল্যবৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী মাস মে। আর গত ২২ বছরের মধ্যে এবার বাড়ির মূল্যবৃদ্ধির নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। রাইটমুভ প্রত্যাশা করছে চলতি বছর যুক্তরাজ্যে প্রায় ১১ লাখ বাড়ি বিক্রি হতে পারে। তবে বাড়ি বিক্রির পর থেকে আইনি কার্যক্রম শেষ হতে দীর্ঘ সময় এখনো একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। যেখানে গড়ে প্রায় সাত মাসেরও বেশি সময় লেগে থাকে।
যুক্তরাজ্যের আবাসন বাজারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে বিদেশী বিনিয়োগ। বিশেষ করে লন্ডনের অভিজাত এলাকার দিকে ধনী বিদেশী ক্রেতাদের নজর থাকে বরাবরই। তবে এসব বাড়ি কিনতে বিদেশীদের একটি অংশ অবৈধ অর্থ ব্যবহার করেন বলে যুক্তরাজ্যের একাধিক সংবাদমাধ্যম ও সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
দেশটির রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলো স্থানীয়দের কাছে ‘প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডন’ হিসেবে পরিচিত। এসব প্রপার্টির মালিকানাকে আভিজাত্যের নমুনা হিসেবে দেখা হয়। এ কারণে ব্রিটিশদের পাশাপাশি বিদেশীদের পদচারণা এসব অঞ্চলে বাড়বাড়ন্ত। এ অঞ্চলের প্রপার্টি বাজারে বিদেশীদের অবদান ৪০ শতাংশেরও বেশি।
ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান দ্য সেন্টার ফর পাবলিক ডাটার পর্যবেক্ষণ হলো প্রপার্টি বাজারে সম্পত্তির মূল্যবৃদ্ধির বড় একটি কারণ বিদেশী ক্রেতার বৃদ্ধি। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০১০ সালের পর দেশটিতে বিদেশের ঠিকানায় নিবন্ধিত প্রপার্টির সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম একাডেমি (এফসিএ) সম্প্রতি ‘মানি লন্ডারিং থ্রো রিয়েল এস্টেট ইন ইউকে’ নামের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, রিয়েল এস্টেটের মাধ্যমে অর্থপাচারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা থেকে ধারণা করা যায়, অর্থপাচার বিরোধী আইন উপেক্ষিত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৪-১৫ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের আবাসন খাতে অর্থপাচারের মাধ্যমে সম্ভাব্য নগদ লেনদেন ১৮ কোটি পাউন্ডে পৌঁছে। কিন্তু এ পরিসংখ্যানকে এখন জালিয়াতির তুলনায় নগণ্য বলে মনে করা হচ্ছে। অনেকে ধারণা করেন, প্রতি বছর যুক্তরাজ্যে সম্পত্তির জন্য বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় হয়।
লন্ডনের অভিজাত এলাকার বাড়িগুলো ক্রেতাদের পরিচয় ও সম্পদের উৎস গোপন রাখতে সাহায্য করে। এসব এলাকায় বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতা, সরকারি আমলা ও ব্যবসায়ী অবৈধ পথে বিনিয়োগ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি লন্ডনের কোটি কোটি পাউন্ড মূল্যের কিছু বাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে। ২০২০ সালে পাকিস্তানি এক ধনকুবেরের হাইড পার্কের বাড়ি বাজেয়াপ্ত করে, যার দাম ছিল ৫ কোটি পাউন্ড। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।