দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো নির্মাণে কনকর্ড অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে। পোড়ামাটির ইটের ব্যবহার বন্ধে ১৯৯৮ সালে কনকর্ডই বাংলাদেশে প্রথম গড়ে তোলে পরিবেশবান্ধব ইট, ব্লক, টাইলস নির্মাণের কারখানা। বর্তমানে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে প্রভাবিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে পৃথিবীর অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ আমাদের এ দেশ। পরিবেশ ও বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ পোড়ামাটির ইট। পোড়ামাটির ইট ব্যবহারের ফলে বায়ু দূষণ হয় সর্বোচ্চ মাত্রায়, যার ফলে বায়ু দূষণে ঢাকা বর্তমানে বিশ্বের প্রথম।
কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি দিয়ে বানানো ইট পোড়াতে কয়লা ও গাছ ব্যবহার করায় পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। দেশে কৃষিজমির মাটির ব্যবহার ও বায়ুদূষণ কমাতে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি নির্মাণ কাঠামোতে শতভাগ গ্রিন ব্রিক ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা পরিবেশ দূষণ রোধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। ২০২৫ সালের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ২০% হারে পরিবেশবান্ধব ব্লক/ ইট সরকারি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পোড়া ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার বাড়ায় পরিবেশের ক্ষতি বন্ধে নতুন আশা সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের এ দূষণ রোধে, বাংলাদেশে কনকর্ডই ২৫ বছর আগে প্রথম গ্রিন ব্রিক উৎপাদন ও ব্যবহার শুরু করে। দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনা ও পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কনকর্ড স্থাপন করেছে তাদের নতুন ৬ষ্ঠ গ্রিন ব্লক/ ব্রিক প্লান্ট।
কনকর্ডের চেয়ারম্যান এস এম কামাল উদ্দীনের দূরদর্শী সিদ্ধান্তে বারিধারা থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বে গড়ে ওঠে পরিবেশ বান্ধব নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি বাংলাদেশের প্রথম দূষণমুক্ত স্যাটেলাইট নগরী ‘লেকসিটি কনকর্ড’। এখানে উল্লেখ্য যে, বিগত ২৫ বছরে কনকর্ডের কোনো প্রকল্পে পোড়ামাটির ইট ব্যবহৃত হয় নি।
কনকর্ড-এর প্রথম ও দ্বিতীয় প্ল্যান্টে, স্পেনের তৈরি পোয়েটোস পি সেভেন্টি/নাইনটি নামক দুটি মেশিন বসানো হয় যার মাধ্যমে প্রতিটি প্ল্যান্টে প্রতি ৮ ঘণ্টায় ৫৯ হাজার ৫২০ করে মোট ১ লাখ ১৯ হাজার ৪০ টি নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদন করে সম্ভব। তৃতীয় প্ল্যান্টে জার্মানি থেকে ডিজাইনকৃত টি-টেন নামক একটি মেশিন যোগ করা হয় যা প্রতি ৮ ঘণ্টায় ২৬ হাজার ৮০টি নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদন করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেসার নামক মেশিনটি কনকর্ড-এর চতুর্থ প্ল্যান্টে বসানো হয় যা প্রতি ৮ ঘণ্টায় ১২,০০০ নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদন করতে পারে।
জার্মানিতে প্রস্তুতকৃত ৫ম প্ল্যান্ট জেনিথ জেড এন-নাইন হান্ড্রেড সি ও এ বছরের আরো একটি নতুন সংযোজন ৬ষ্ঠ প্ল্যান্ট জেনিথ জেড এন- নাইন হান্ড্রেড সিজি প্রতি প্ল্যান্ট একক ভাবে ৮ ঘণ্টায় গড়ে ৭৪ হাজার পিস নির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুত করতে সক্ষম। ৬ষ্ঠ এই জার্মান নির্মিত প্ল্যান্টটি স্থাপনের ফলে কনকর্ডের উৎপাদন সক্ষমতা আরো ৩০-৪০শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নতমানের এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এ প্ল্যান্টটি নির্মাণ শিল্পে এক অনন্যমাত্রা যোগ করবে এবং সেই সঙ্গে পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
পরিবেশ সংরক্ষণে কনকর্ডের মতো উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এ খাতে ট্যাক্স আর আমদানি শুল্ক মওকুফ করলে পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরো গতিশীল করা সম্ভব। সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করলে আরো উদ্যোক্তারা এ কাজে এগিয়ে আসবে।